রাজভবনে বোমা-বন্দুক মন্তব্যের জেরে এবার তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে হেয়ারস্ট্রিট থানায় অভিযোগ দায়ের করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (C V Ananda Bose)। মঙ্গলবার রাজভবনের তরফে তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে একেবারেই চিন্তিত নন কল্যাণ। বললেন, “চিঠি পাঠানো মানেই FIR নয়।”
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে গিয়ে বিহার নির্বাচন ফলাফলে প্রসঙ্গে আনন্দ বোস (C V Ananda Bose) বলেন, ”SIR নতুন পদ্ধতি, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তা প্রয়োজন। বিহারে তার প্রমাণ হয়েছে।” বিজেপির সুরে সুর মিলিয়ে রাজ্যপাল বলেন, ”ভোট হওয়া উচিত ব্যালটে, বুলেটের মাধ্যমে নয়। রাজ্যের মানুষ SIR নিয়ে বিভ্রান্ত। তাঁদের বিষয়টা বোঝাতে হবে। আমি নিশ্চিত, এ রাজ্যের মানুষও SIR গ্রহণ করবেন।” এই মন্তব্যের পরেই ওইদিন এক অনুষ্ঠানে গিয়ে আনন্দ বোসকে নিশানা করেন তৃণমূল সাংসদ। তীব্র আক্রমণ করে তিনি বলেন, ”রাজ্যপালকে আগে বলুন তাঁর রাজভবনে বিজেপির অপরাধীদের যাতে না রাখে। রাজভবনে অপরাধী রাখছেন আর তাদের একটা করে বন্দুক দিচ্ছেন, বোমা দিচ্ছেন। বলছেন, মেরে এসো তৃণমূলের লোকেদের। আগে এসব বন্ধ করুন। তিনি অপদার্থ রাজ্যপাল! বিজেপির চাকরবাকর রাজ্যপাল যতদিন থাকবে, ততদিন ভালো জিনিস পশ্চিমবাংলায় হবে না।” কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Kalyan Banerjee) তোলা অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজভবনে বিশেষ তল্লাশি অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন আনন্দ বোস। ডাকা হয় বম্ব স্কোয়াড। পাশাপাশি, ছিল কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনী, কলকাতা পুলিশ ও রাজভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে বাহিনী। অভিযানে উপস্থিত থাকবেন বলে সফরে কাটছাঁট করে উত্তরবঙ্গ থেকে রাজভবনে ফেরন রাজ্যপাল। সোমবার, বেলা আড়াইটের পর এই তল্লাশি অভিযান হয়।
মঙ্গলবার রাজভবনের তরফে তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের থানায়। রাজভবন সূত্রে খবর, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহকে উস্কে দেওয়া অর্থাৎ বিএনএস এর ১৫১, ১৫২ নম্বর ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। একই সঙ্গে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনার জন্য ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় ১৯৭ নং ধারা নিয়ে আনা হয়েছে। পাশাপাশি, সামাজিক সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগ, বিএনএস-এর ১৯৬-এর ১ (এ) ধারা আনা হয়েছে। পাশাপাশি জনমতের আতঙ্ক সৃষ্টি অর্থাৎ বিএনএস-এর ১৫৩ ১ (বি), ১৫৩ ১( সি), ১৫৩ (২) আনা হয়েছে।
তবে, এই বিষয়টিকে একেবারেই পাত্তা দিতে নারাজ শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে পাল্টা তোপ দেগেছেন কল্যাণ। বলেন, “একটা চিঠি দেওয়া মানেই এফআইআর নয়। আমি সি ভি আনন্দ বোসের থেকে আইন বেশি বুঝি।” নিজের অবস্থানে অনড় থেকে সাংসদ আরও বলেন, “ধারা ছাড়ুন, সি ভি আনন্দ বোসকে ছাড়ব নাকি আমি? ও যা ইচ্ছা করুক। ওই রকম হাজারটা সি ভি আনন্দ বোস দেখছি।” রাজ্যপালকে ‘ফালতু’ এবং ‘থার্ড গ্রেডেড’ লোক বলে কটাক্ষ করে কল্যাণবাবু দাবি করেন, রাজ্যপাল নিজেই উস্কানিমূলক কথা বলেছেন এবং রাজভবন যে সমস্ত ধারার উল্লেখ করেছে, সেগুলি আসলে রাজ্যপালের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা উচিত।
–
–
–
–
–
–
