SIR প্রক্রিয়ার চাপে মানুষের মৃত্যুর অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (Election Commission) দৃষ্টি আকর্ষণ করল তৃণমূল (TMC)। শনিবার, রাজ্যের দুই মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য (Chandrima Bhattacharya) ও অরূপ বিশ্বাস (Arup Biswas) এবং দুই সাংসদ পার্থ ভৌমিক (Partha Bhoumik) ও বাপি হালদার (Bapi Halder) রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (CEO) মনোজ কুমার আগরওয়ালের সঙ্গে দেখা করেন। তৃণমূলের প্রতিনিধিরা স্পষ্ট জানান, SIR চালুর পর থেকে রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার সম্পূর্ণ দায় কমিশনের উপরেই বর্তায়। তাঁদের দাবি, কমিশনের তৈরি পোর্টাল (Portal) ভুলে ভরা, বারবার কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বুথ লেভেল কর্মীদের চরম বিভ্রান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। তৃণমূলের অভিযোগ, বিশেষ একটি দলকে খুশি করতে এবং ভোট বাক্সে সুবিধে পাইয়ে দিতে অপরিকল্পিত উপায়ে SIR করা হচ্ছে।

কেন্দ্র ও কমিশনের মিলিত ষড়যন্ত্রে মানুষের জীবনহানিতেও থামছে না। শুধু বিশেষ একটি দলকে খুশি করতে এবং ভোট বাক্সে সুবিধে পাইয়ে দিতে অপরিকল্পিত উপায়ে এসআইআর করা হচ্ছে। এদিন রাজ্য মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের অফিসে স্মারকলিপি জমা দিয়ে কেন্দ্র ও কমিশনকে একহাত নিল তৃণমূল। এসআইআর নিয়ে ফের কমিশনকে তোপ দেগে তৃণমূল নেতৃত্ব জানান, ২ বছরের কাজ দু’মাসে করতে গিয়ে মানুষের জীবন বলি দিতে হচ্ছে। তারপরও ভ্রুক্ষেপ নেই কমিশনের। কেন্দ্রের সরকারের অঙ্গুলিহেলনে একটি বিশেষ দলকে সুবিধা পাইয়ে দিতে এই প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে কমিশন। 

এদিন দুপুরে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল সিইও দফতরে স্মারকলিপি জমা দেন। এরপর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অরূপ, চন্দ্রিমা, পার্থরা বলেন, এসআইআর আতঙ্কে বিএলও-সহ একাধিক সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কমিশন কোনওভাবেই এর দায় এড়াতে পারে না। রাজ্য তথা দেশজুড়ে এসআইআরের নামে যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, সেখানে সাধারণ মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। এমনকী বিএলওরাও আত্মঘাতী হচ্ছেন। অত্যধিক চাপে মৃত্যু হচ্ছে। কেন এই চাপ? কেন মানুষের জীবন সংশয়ে? উত্তর দেবে কি নির্বাচন কমিশন? বিএলও থেকে শুরু করে বিডিওদের সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। দুই বছরের কাজ যেনতেন প্রকারে দুই মাসে শেষ করার চেষ্টা। একটাই উদ্দেশ্য, একটি বিশেষ দলকে সুবিধে করে দিতে হবে আসন্ন নির্বাচনে। নির্বাচন কমিশনে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এই অভিযোগ তৃণমূল নেতৃত্বের।

রাজ্যে SIR প্রক্রিয়ার মধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় একাধিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এদিনই সকালে নদিয়ার কৃষ্ণনগরে ‘আত্মঘাতী’ হয়েছেন এক বিএলও রিঙ্কু তরফদার। তিনি সুইসাইড নোটে নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে পোস্ট করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ৩৪ জন সাধারণ মানুষ প্রাণ দিয়েছেন এসআইআর আতঙ্কে।

তৃণমূলের আরও অভিযোগ, প্রতি বুথে ১৫০ থেকে ২০০ জন ভোটারের নাম ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া হচ্ছে। কমিশনের ওয়েবসাইট ভুলেভরা। কমিশনের গাফিলতিতে বহু মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। প্রতিনিধি দলের বক্তব্য, কুলপির ক্ষেত্রে ২০০৩ সালের তথ্য কেন মানা হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

তৃণমূলের প্রতিনিধিরা জানান, ভুলে ঠাসা সাইটের জন্য বহু মানুষ বিপাকে পড়ছেন। ২০০২ সালের ভোটার তালিকা দেখা যাচ্ছে বহু ক্ষেত্রে, যেখানে প্রত্যেক বুথে ১৫০ থেকে ২০০ জনের নাম বাদ গিয়েছে। তাঁদের দাবি, কমিশন নাকি একটি রাজনৈতিক দলের ইঙ্গিতে প্রায় দুই কোটি নাম বাদ দিতে উদ্যত হয়েছে। ছবি ভুল, ক্রমিক নম্বর ভুল, বাবার নাম-স্বামীর নাম সব এক—এই সমস্ত অভিযোগ তুলে তাঁরা বলেন, এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের পক্ষে বা বিএলওদের পক্ষে সঠিকভাবে কাজ করা সম্ভব নয়।

তৃণমূল প্রতিনিধি দলের তাদের বক্তব্য, ২, ৫, ১৪, ২০ নভেম্বর এবং ৩০ অক্টোবর—মোট পাঁচবার চিঠি দেওয়া হলেও কমিশন কোনও উত্তর দেয়নি। কমিশনের কাছে একটি দাবি–পত্রও জমা দেওয়া হয়েছে, যা চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য পড়ে শোনান।

পার্থ ভৌমিক অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন গণতান্ত্রিক প্ল্যাটফর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে। তাঁর প্রশ্ন, “এক কোটি বেশি নাম বাদ যাবে—এই তথ্য একটি রাজনৈতিক দল আগেভাগে জানল কীভাবে? কমিশন কী বলছে?”—এই প্রশ্নেরও স্পষ্ট জবাব দাবি করেছে তৃণমূল।

–

–


