সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল- আর বাংলার সংস্কৃতি ও।কৃষ্টির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এই ফুটবলের প্রেমে চিরকাল বিভোর হয়ে থেকেছে কলকাতা (Kolkata)। পায়ে পায়ে তেকাঠি-তে পৌঁছনোর লড়াইয়ে এ শহর বড়ই আবেগপ্রবণ। তাই মারাদোনা থেকে মার্তিনেজ যখনই কলকাতায় এসেছেন আনন্দে মাতোয়ারা হয়েছেন ফুটবল প্রেমীরা। এইসব কিংবদন্তিদের মহানগরীতে নিয়ে আসার নেপথ্যে ছিল একটাই নাম – শতদ্রু দত্ত (Shatadru Dutta)। তাই যখন তিনি ফুটবলের রাজপুত্রকে নিয়ে আসার কথা দিয়েছিলেন (Lionel Messi’s India Tour), তখন থেকেই উন্মাদনার পারদ টপ লেভেলে পৌঁছে গেছিল। তারপর এল বহু প্রতীক্ষিত ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ (শনিবার)। যে দিনটা বাংলার বুকে অন্যতম উজ্জ্বল দিন হিসেবে লেখা হতে পারত, তাকে নিমেষে কলঙ্কময়অধ্যায়ে পরিণত করলেন সেই শতদ্রুই। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সকলের চোখে ‘ভিলেন’ হয়ে ওঠা এই ভদ্রলোকের পরিচয় আসলে কী, চলুন জেনে নেওয়া যাক।

চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা, বেনিয়ম, দর্শক ঠকানো, দক্ষতার অভাব, পরিকল্পনাহীন অনুষ্ঠানের আয়োজক হিসেবে রাজ্য, দেশ তথা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের রোষানলে শতদ্রু দত্ত। একাধারে ব্যবসায়ী হলেও তাঁর সব থেকে বড় পরিচয় হয়ে উঠেছিল ‘ক্রীড়া সংগঠক’ হিসেবে। কিন্তু বিশ্বকাপ জয়ী তারকা মেসির (LM 10) অনুষ্ঠানে তিনি বুঝিয়ে দিলেন আসলে ব্যবসাটাই তাঁর মূল লক্ষ্য। তাই হাজার হাজার টাকা দিয়ে টিকিট কাটা দর্শকের আবেগকে সম্মান জানানোর মতো চরিত্র তাঁর গঠনই হয়নি। ফুটবলের রাজপুত্রের G.O.A.T ট্যুরের ‘অপদার্থ’ আয়োজক শতদ্রুর জন্ম এবং বেড়ে ওঠা হুগলির রিষড়ায়। পড়াশোনা করেছেন শ্রীরামপুরের হোলি হোম স্কুলে। পরবর্তীতে অর্থনীতি নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন করে পেশা হিসাবে বেছে নেন ওয়েল্থ ম্যানেজমেন্ট এবং ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কিং। ছোট থেকেই পছন্দের খেলা ছিল ক্রিকেট। কিন্তু ফুটবলের সঙ্গে সম্পর্কটাও চিরকালীন। নিজে খেলোয়াড় হতে না পাড়ায় চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন বিশ্বের খ্যাতনামা প্লেয়ারদের কলকাতায় নিয়ে আসার। এটাই ছিল তাঁর স্বপ্নপূরণের মাধ্যম। শতদ্রুর তাঁর একমাত্র সন্তান দিয়েগোকে খেলা শিখতে বিদেশে পাঠিয়েছেন। ছেলেকে ফুটবলার হিসেবে দেখতে চান বাবা।


এবার আসা যাক তাঁর পেশা জীবনের কথায়। ব্যবসা শুরু করি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি খোলেন শতদ্রু। বরাবরের উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্যবসায়ী দ্রুত সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Saurav Ganguly) সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলেন। সেই পরিচিতি কাজে লাগিয়ে কলকাতার ক্রীড়া মহলে নিজের একটা জায়গা তৈরি করে নেন খুব অল্প সময়ের মধ্যে। সমাজমাধ্যমে বিভিন্ন খেলোয়াড়দের সঙ্গে নিজের ছবি ভিডিও পোস্ট করে নিজেকে ‘ক্রীড়া উদ্যোক্তা’ হিসেবে সকলের সামনে তুলে ধরেন। তিনি অতীতে কলকাতায় এনেছেন পেলে, দিয়েগো মারাদোনা থেকে ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কাফু বা আর্জেন্টিনার গত বিশ্বকাপজয়ী দলের গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজকে। ঠিক করেছিলেন মেসির সফরের পর রোনাল্ডোকে নিয়ে আসবেন শহরে। কিন্তু তার আগেই গ্রেফতার শতদ্রু। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের দেড় ঘণ্টা ধরে যে তান্ডব চলল তাতে মূল আয়োজকের অদক্ষতা ও ব্যর্থতার পরিণাম স্পষ্টভাবে দেখলো গোটা বিশ্ব। একটা কলঙ্কিত দিন তৈরি করে বাংলার মাথা নীচু করে দিলেন তিনি। যদিও ফ্ল্যাশব্যাকে ফিরলে দেখা যায় শতদ্রুর সব অনুষ্ঠানেই কমবেশি বিশৃঙ্খলা ঘটেছে। ২০১৫-য় পেলেকে কলকাতায় এনেছিলেন। বিশৃঙ্খলা তখনও ছিল যদিও খুব একটা বেশি আলোচনা হয়নি। ২০১৭ সালে মারাদোনাকে নিয়ে আসার সময় একইভাবে ভিড় উপচে পড়েছিল। শোনা যায় আয়োজকদের ব্যবস্থাপনায় ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন ফুটবলের কিংবদন্তি।এমিলিয়ানো মার্তিনেজকে আনার সময় টিকিটে অনিয়ম থেকে শুরু করে মঞ্চে বিশৃঙ্খলা ছবি ধরা পড়ে। আর এবার তা সবকিছুকে ছাপিয়ে গেল। লিওনেল মেসিকে আনবেন বলে বহু দিন আগে থেকেই রাজনীতিবিদ, স্পনসর থেকে শুরু করে বিভিন্ন মানুষকে এই উদ্যোগে শামিল করার এবং অর্থ বিনিয়োগ করানোর চেষ্টা করেছিলেন শতদ্রু। অথচ তার সংস্থার সঙ্গে মেসির টিমের কী চুক্তি হয়েছিল তা এখনও স্পষ্ট নয়। এমনকি যেসব স্পন্সরের টাকা দিয়েছেন তাদের কাছেও অনুষ্ঠানসূচি সম্পূর্ণভাবে জানানো হয়নি। ইভেন্ট করে টাকা রোজগার করতেই পারেন শতদ্রু ,কিন্তু তিনি যেটা করেছেন সেটা আসলে তছরুপ। তাই মেসির সমর্থকদের টাকা ফেরত দিয়েও (টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া হবে বলে অন্তত কথা দেওয়া হয়েছে) তাঁর ‘অন্যায়ের শাস্তি’ শেষ হবে না, বলছেন আশাহত দর্শকরা।। ঘটনার জল কতদূর গড়ায় সেটাই দেখার।

–

–

–

–

–

–

–


