অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশের (Bangladesh) উত্তেজনার পরিস্থিতিতে একের পর এক সংবাদমাধ্যমের অফিস ভাঙচুরের খবরের পাশাপাশি ধানমান্ডিতে প্রগতিশীল ধর্মনিরপেক্ষ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ‘ছায়ানট’-এর সাততলা ভবনের প্রতিটি কক্ষে ঢুকে ভাঙচুর চালানোর ঘটনার প্রকাশ্যে আসতেই নিন্দায় সরব পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতিমনস্ক শিল্পী সাহিত্যিক থেকে সাধারণ মানুষের। সমাজমাধ্যমে ছায়ানটের বিধ্বস্ত কক্ষগুলির ছবি এবং ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে (ভিডিও সত্যতা যাচাই করা হয়নি)। যেভাবে হারমোনিয়াম তবলা আছড়ে ফেলা হচ্ছে তাতে কোথাও গিয়ে স্পষ্ট মৌলবাদের উস্কানি বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। উত্তেজিত জনতার রোষ থেকে রেহাই পাননি পদ্মাপাড়ের সাংবাদিকেরাও। বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশের দুই সংবাদপত্র ‘প্রথম আলো’ এবং ‘দ্য ডেলি স্টার’-এর দফতরে ভাঙচুরের পরেই আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। লিফটের ভাঙ্গা দরজার সামনে কুপিয়ে কেঁদে চলেছেন চিত্র সাংবাদিক প্রবীর দাস (Prabir Das)। ছবি তাঁর বেঁচে থাকার রসদ। তাই ডেলি স্টারের অফিসের কম্পিউটারেই সব সেভ করে রেখেছিলেন। আগুনের লেলিহান শিখায় চোখের সামনে শুধুই মুঠো মুঠো ছাই। স্বপ্ন পুড়ে শেষ, এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না প্রবীর।

বৃহস্পতিবার রাত ১টা নাগাদ ধানমান্ডিতে ছায়ানটের ভবনে হামলা চালান বিক্ষোভকারীরা। চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ থেকে শুরু করে সাততলা ভবনের প্রতিটি ঘরে ঢুকে ঢুকে ভাঙচুর করা হয়েছে। পরে অগ্নিসংযোগ করা হয় একাধিক জায়গায়। সংস্কৃতির ওপর এই আক্রমণ কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না বাংলার বিশিষ্টরা।আন্দোলনের নামে বীভৎসতা আর বাংলা সংস্কৃতির উপর এই আক্রমণের ছবিটা দেখে শিউরে উঠছেন শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার (Pabitra Sarkar)। তিনি বলছেন এ ঘটনা চোখে দেখায় বড় কষ্টের। বিশেষ ধর্মের সংকীর্ণ মনোভাব থেকে এই ধরনের হামলা করা হচ্ছে। এইভাবে ভারত বিদ্বেষ তথা রবীন্দ্র অপমান মেনে নেওয়া যায় না। ক্যাকটাস ব্যান্ডের গায়ক সিধু (Sidhu ) জানিয়েছেন যেভাবে বাদ্যযন্ত্র ভেঙে দেয়া হচ্ছে সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। তাঁর কথায়, ধর্ম আদর্শ বিদ্বেষ এইসব মতপার্থক্যের ঊর্ধ্বে সংগীতকে রাখা উচিত। যাঁরা এই ধরনের জঘন্য কাজ করছেন তাঁরা একমাত্রিক চিন্তাভাবনায় বিশ্বাসী অথবা তাদের ব্রেন ওয়াশ করা হয়েছে বলেও মত গায়কের। গায়ক রাঘব চট্টোপাধ্যায় (Raghab Chatterjee) যথেষ্ট আতঙ্কিত, বলছেন আগামীতে বাংলাদেশের কী হবে তা নিয়ে ভয় লাগছে। নাট্য ব্যক্তি তো চন্দন সেনের (Chandan Sen) কথায়, মৌলবাদ যখন খুব বেশি করে মাথাচাড়া দেয় তখনই সংস্কৃতির উপর আক্রমণ নেমে আসে। বাংলাদেশে ঠিক তেমনটাই ঘটছে।

প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিক্ষোভের আগুন যাতে কোনোভাবেই বাংলায় এসে না পড়ে তাই কড়া নিরাপত্তা সীমান্ত এলাকায়।থার্মাল ক্যামেরা, নাইটভিশন ক্যামেরা, সিসিটিভি ক্যামেরা ও ড্রোনের সাহায্যে নজরদারি চালানোর পাশাপাশি বিশেষ লক্ষ্য দেয়া হচ্ছে ‘চিকেনস নেকে’র (Chicken’s Neck) দিকে।


