Sunday, December 21, 2025

‘এ জন্মেই পুনর্জন্ম’, উৎপল সিনহার কলম

Date:

Share post:

উৎপল সিনহা

ক্রুর ঝড় থেমে গ্যাছে , এখন আকাশ বড় নীল। গাছের সবুজ পাতা কেঁপে কেঁপে অত্যন্ত সুসম বিন্যাসে আবার স্থির।

খরগোশের চঞ্চল উদ্যম আশেপাশে , বাজপাখি উঁচু চূড়া থেকে অনাবিল আনন্দে তাকায় চতুর্দিকে , কোনো নিষ্ঠুর দু্ঃশীল চিন্তা নেই আপাতত , বিস্তর বয়স , চোখে কম দ্যাখে , নখ উদ্যমরহিত , বুকে গোপন জখম , তবুও ডরায় তাকে নিম্নচারী পাখির মিছিল ।

বাজপাখির পুনর্জন্ম হয়। তবে মৃত্যুর পরে নয় , বেঁচে থাকতেই নতুন এক জন্ম পায় বাজপাখি , যদি চায়। আর যদি না চায় , তাহলে এক সময়ের দুরন্ত শিকারীর সামনে খোলা থাকে স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ। হয় আত্মহত্যা করো অথবা শকুনের মতো মৃতদেহ ভক্ষণ। কিন্তু কেন ? কেন এমন অবস্থা হয় তাদের ?

সে এক আকর্ষণীয় বৃত্তান্ত । বাজপাখি বাঁচে প্রায় ৭০ বছর। কিন্তু এই বাঁচার অর্ধেক পেরোলেই তাদের মুখোমুখি হতে হয় এক অসহ্য পরিস্থিতির। অনেকটা যেন মেটামরফসিস। বেশিরভাগ মানুষের যেমন চল্লিশ পেরোলেই চালশে , ঠিক তেমনি বাজপাখির জীবনেও চল্লিশ বছরে পদার্পণ চালশের চেয়েও অনেক বেশি মারাত্মক , এমনকি প্রাণঘাতী।

চল্লিশে পা রাখলেই বাজপাখির শরীরের প্রধান তিনটি অঙ্গ ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়ে। তার থাবা ( পায়ের নখ ) লম্বা ও নরম হয়ে যায়। শিকার ধরা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলে খাদ্য সঙ্কট দেখা দেয়। ঠোঁটটা সামনের দিকে মুড়ে যায়। ফলে খাবার খুঁটে বা ছিঁড়ে খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তার ডানা ভারী হয়ে যায় এবং বুকের কাছে আটকে যাওয়ার কারণে তার উড়ান সীমিত হয়ে যায়। এক কথায় তার বেঁচে থাকা অর্থহীন হয়ে পড়ে।

শিকার খোঁজা, ধরা এবং খাওয়া একেবারে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। এ অবস্থায় মৃত্যুর প্রহর গোনা ছাড়া উপায় কি?

কিন্তু মনে রাখতে হয় ,
‘ জীব দিয়েছেন যিনি,
আহার দেবেন তিনি ‘ ।

আত্মহনন এবং শকুনের মতো মৃতদেহ ভক্ষণ ছাড়াও আরেকটি পথ খোলা থাকে ভাঙা , অশক্ত ও সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত বাজপাখির সামনে। সে পথ বড়োই কঠিন এবং ভয়ঙ্কর যন্ত্রণার। কিন্তু সে পথেই তার পুনর্জন্ম হয়। চল্লিশ বছর বয়সে চূড়ান্ত ক্ষয়শীল শরীরে সে আশ্রয় নেয় কোনো একটি উঁচু পাহাড়ের কোলে। সেখানেই নতুন ডেরা বেঁধে শুরু হয় তার নতুন করে বেঁচে ওঠার লড়াই। পুনর্জন্ম পাওয়ার প্রাণপণ সংগ্রাম।

প্রথমেই সে তার জীর্ণ অকেজো ঠোঁটটা পাথরে ঠুকে ঠুকে ভেঙে ফেলে। অসহ্য যন্ত্রণার পর একসময় আর যন্ত্রণা হয় না। ঠিক এভাবেই সে তার অকেজো নখগুলোও ভেঙে ফেলে।

মনে মনে হয়তো গাইতে থাকে ‘ যা হারিয়ে যায় তা আগলে বসে রইবো কত আর ‘ ! এরপর বাজপাখি অপেক্ষা করতে থাকে নতুন নখ ও ঠোঁট গজানোর। একসময় সে ফিরে পায় তার হারানো ঠোঁট ও নখ। তখন আরেকবার সে বরণ করে অপরিসীম যন্ত্রণা। সে ছিঁড়ে ফেলে তার ডানার সমস্ত পালক এবং ভয়াবহ কষ্ট সহ্য করে মুখ বুজে অপেক্ষা করতে থাকে নতুন পালক গজানোর।

দীর্ঘ ১৫০ দিনের দুঃসহ যন্ত্রণা ও শবরীর প্রতীক্ষার পর অবশেষে সে নতুন করে ফিরে পায় তার হারানো সবকিছু। আবার তার দেহে ফিরে আসে পুরোনো শক্তি ও ক্ষিপ্রতা। শুরু হয় আবার লম্বা উড়ান আকাশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।

আবার নতুন করে ভুলে যাওয়া নাম ধরে ডাকার আনন্দময় জীবন শুরু হয় তার। এরপর সে জীবিত থাকে আরও প্রায় ৩০ বছর। জীবিত থাকে আনন্দে , আকাঙ্খায় , আগের মতোই প্রবল শক্তি ও অনিঃশেষ গরিমা নিয়ে।

আরও পড়ুন – সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীকে ঢেলে সাজাতে উদ্যোগ, বরাদ্দ ৮.৮২ কোটি 

spot_img

Related articles

রবিবাসরীয় ম্যারাথনে দুপুর পর্যন্ত একাধিক রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণ কলকাতা পুলিশের

ছুটির সকালে কলকাতার একাধিক রাস্তায় গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ। রবিবার ভোর থেকে দুপুরে একটা পর্যন্ত ম্যারাথনের কারণে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ...

উর্দি গায়ে প্রতিবাদী শাশ্বত, আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে প্রকাশ্যে ‘হোক কলরব’ মোশন পোস্টার 

দৃপ্ত চোখ, হাতে জ্বলন্ত বোতল। রাজ চক্রবর্তীর ছবিতে ফের পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় (Saswata Chatterjee)। তবে কোনও...

১৭ বছর বয়সেই রঞ্জিতে হাজার রানের মাইলস্টোন, ভারতীয় ক্রিকেটের ধ্রুবতারা পাণ্ডোভ

ভারতের জনবহুল দেশে ক্রিকেট প্রতিভার অভাব নেই। অনেক প্রতিভা সঠিক ভাবে বিকশিত হয়ে জাতীয় দলের জার্সিতে দেশকে গর্বিত...

সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীকে ঢেলে সাজাতে উদ্যোগ, বরাদ্দ ৮.৮২ কোটি 

পশ্চিমবঙ্গ সরকার সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর পরিকাঠামো উন্নত করতে নতুন যানকেন্দ্রিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ব্যারাকপুরে ডেপুটি ইনস্পেক্টর জেনারেলের দফতর...