এক নির্মম, নিন্দনীয় ঘটনার হঠাৎ পরিসমাপ্তি। হায়দরাবাদে পশু চিকিৎসকের গণধর্ষণ-খুনের ঘটনায় এনকাউন্টার মৃত্যু হল চার অভিযুক্তর। ঘটনার পুনর্নির্মাণের জন্য শুক্রবার ভোর তিনটে নাগাদ অভিযুক্তদের ঘটনাস্থলে নিয়ে যায় পুলিশ। শাদনগর যে আন্ডারপাসের তরুণীর দেহ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরেই হেফাজত থেকে অভিযুক্তরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। এমনকী, পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়। ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে পালানোর চেষ্টার সময় অভিযুক্তদের গুলি করে পুলিশ। ঘটনাস্থলেই চারজনের মৃত্যু হয়েছে। সাইবারাবাদের পুলিশ কমিশনার ভি সি সজ্জনার সংবাদমাধ্যমকে জানান, আত্মরক্ষার্থেরই অভিযুক্তদের গুলি করতে বাধ্য হয়েছে পুলিশ।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান সাইবারাবাদ পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। চারজনের দেহ ময়নাতদন্ত করা হবে। সেই ময়নাতদন্তের ভিডিওগ্রাফিও করা হবে। এই ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঘটনা সামনে আসার পরে অনেকই খুশি প্রকাশ করেছেন। মৃত চিকিৎসকের বাবা মন্তব্য করেন, “মেয়ের আত্মা শান্তি পেল”। পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন পরিবারের লোকেরা। তেলেঙ্গানার আইনমন্ত্রী এ ইন্দ্রকরণ রেড্ডি মন্তব্য করেন,“ভগবানই অভিযুক্তদের শাস্তি দিয়েছেন”। পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন নির্ভয়ার বাবা-মাও। এই থেকে দিল্লি পুলিশের শিক্ষা নেওয়া উচিৎ বলে মন্তব্য করেছেন নির্ভয়ার মা।
গত ২৮ নভেম্বর তেলেঙ্গানার শামসাবাদের চেতানপল্লির আন্ডারপাস থেকে উদ্ধার হয় ২৭ বছরের পশু চিকিৎসকের দেহ। তদন্তে জানা যায় ২৭নভেম্বর শামসাবাদ টোলপ্লাডার কাছে তাঁকে গণধর্ষণ করে খুন করা হয়। তদন্ত যত এগিয়েছে ততই ঘটনার নির্মমতা প্রকাশ পেয়েছে। জানা যায়, ছক কষেই ওই তরুণীর স্কুটির চাকা পাংচার করে দেয় দুই ট্রাকচালক ও তাদের দুই খালাসি। তারপর সাহায্যের অছিলায় তরুণীকে ধরে নিয়ে যায় তারা। হাত-পা বেঁধে মুখে মদ ঢেলে দেওয়া হয়। তারপরে চলে পাশবিক অত্যাচার। ট্রাকে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় চেতানপল্লির আন্ডারপাসে। রাস্তায় পেট্রোল কিনে নেয় দুষ্কৃতীরা। পেট্রোল জ্বালিয়ে পড়ানোর সময় তারা বুঝতে পারে যে তরুণী তখনও জীবিত। জীবন্ত অবস্থায় তাঁকে পুড়িয়ে দেয় চারজন

। এই ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের প্রথমে রাখা হয়েছিল শাবাদ থানায়। কিন্তু সেখানে জনরোষ বাড়ছিল। অভিযুক্তদের জনতার হাতে ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়ে উত্তেজিত জনতা। পরে সেখান থেকে তাদের সাইবারাবাদ জেলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। শুক্রবার ভোররাতে হয়তো জনতাকে এড়াতেই অন্ধকারে এই চারজনকে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করানোর জন্য নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। অভিযুক্তদের ওই এলাকায় যাতায়াত থাকায় হাতের তালুর মতো অঞ্চল চিনত তারা। সে কারণেই শেষবারের মতো পুলিশের জাল কেটে বের হতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। আত্মরক্ষার্থে তাদের উপর পুলিশ গুলি চালায়। মৃত্যু হয় চারজনের।
