স্যালুট টু সাইবারাবাদ পুলিশ — বেশ করেছেন, ঠিক করেছেন

অভিজিৎ ঘোষ

লেখার শুরুতেই বলি হায়দারাবাদের ঘটনা অর্থাৎ, তরুণী চিকিৎসককে প্রথমে গণধর্ষণ। তারপর তার গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে খুনের ঘটনা। এতটুকু সকলেরই জানা। নয়া ঘটনা শুক্রবার সকালে। অভিযুক্তদের পুলিশি এনকাউন্টারে মৃত্যু। যে ঘটনা আজ ঘটেছে, তাকে পূর্ণ সমর্থন করছি। পরিষ্কার ভাষায় জানাতে চাই যে, দেশের মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থনই প্রমাণ করে দিচ্ছে বিচার ব্যবস্থার উপর মানুষের আস্থা কমেছে। জঘন্য অপরাধীদের শাস্তি দিতে বছরের পর বছর গড়িয়ে যায় আর নতুন-নতুন নির্ভয়ার জন্ম হয়। ফলে সেই আপ্তবাক্যই মানুষের মুখে ঘুরে ফিরে আসে– ‘বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে’।

নির্ভয়ার মৃত্যু হয়েছিল ৭বছর আগে। আজও অপরাধীদের শাস্তি হয়নি। শুধু তাই নয়, নাবালক বলে এক অপরাধী জেলের বাইরে বেরিয়ে পুলিশি তত্ত্বাবধানে বহাল তবিয়তে জীবন কাটাচ্ছে! এটাই হলো দেশের আসল পরিস্থিতি। শুধু ৫ডিসেম্বর তারিখে দেশে খবরে উঠে আসা চারটি ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ধর্ষণকারীরা নির্যাতিতাকে জ্বালিয়ে দিয়েছে। নির্মমতা কোন পর্যায়ে পৌঁছলে, মানসিক বিকৃতি কোন জায়গায় এসে দাঁড়ালে, মানবিকতা, মমত্ববোধ কত নিচে নামলে মানুষ এমন পাশবিক হতে পারে! একটু ভুল বললাম, অনেক পশু মানুষের থেকে এখন বেশি মানবিক।

সকালের এনকাউন্টারের পর দেখলাম বেশ কয়েকজন অন্য কথা বলেছেন। তার মধ্যে রয়েছেন মানেকা গান্ধী, পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়, মানবাধিকার কমিশনের সদস্যা, কিছুটা তির্যক অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ও। ওঁদের শুধু একটা কথাই বলতে হয়, নিজের বাড়ির কন্যা সন্তানের সঙ্গে যদি এমন ঘটনা ঘটতো, তাহলে এত গুছিয়ে এই কথাটা কি বলতে পারতেন? নাকি নিশ্চিতভাবে বলতেন, অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড চাই। যেভাবে মেয়েকে মেরেছে সেভাবেই ওদের মারা হোক। আসলে নিজের ঘর যদি না পোড়ে তাহলে তো বোঝা যায় না ফোস্কার কী জ্বলুনি!!

প্রশ্ন হলো, যাঁরা বলছেন যে এনকাউন্টার করা সঠিক হয়নি, তাঁরা কিন্তু একবারও বলছেন না যে অপরাধীদের ছেড়ে দেওয়া হোক। তাঁরাও বলছেন, অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক। কেউ কেউ মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে তাঁদের কাছে আমার প্রশ্ন, মৃত্যুদণ্ড যদি দাবি করা হয় তাহলে মৃত্যুদণ্ডই তো দিয়েছে হায়দারাবাদ পুলিশ! সেখানে দীর্ঘ বিচারের পর ফাঁসির দড়িতে ঝোলানো হতো, আর এখানে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু। ফারাক একটাই — বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা নেই। দীর্ঘদিন এই নরাধম অপরাধীদের খাইয়ে-পরিয়ে রাখার ঝামেলা নেই। এবং প্রত্যেকদিন সকালে উঠে নির্যাতনকারীর পরিবারের মর্মবেদনা অনুভব করা নেই — আমার মেয়ে চলে গিয়েছে, আর তার অপরাধীরা বেঁচে রয়েছে! এটা অন্তত সইতে হলো না হায়দরাবাদের নির্মমভাবে খুন হওয়া চিকিৎসকের পরিবারকে! যে কষ্ট আজও তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে নির্ভয়ার বাবা-মাকে।

যারা বলছেন, আসলে এটা ফেক এনকাউন্টার, পুলিশ আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে, তাদের সবিনয় দুটি প্রশ্ন, পুলিশ যদি আইনের পথেই চলে তাহলে বহু অপরাধ কখনও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে হয়। অথবা বহু অপরাধের তথ্য না থাকায় তাকে হিমঘরে গ্যারেজ করে দেওয়া যায়। দেশের পুলিশের ইতিবাচক দিক আছে, নেতিবাচক দিকও আছে। এই অপরাধের চরম সাজা নিয়ে বোধহয় দেশের অধিকাংশ মানুষই সহমত হবেন। তাহলে সেই চরম সাজাটা যদি ঘটনার ১০দিনের মাথায় হয়, তা মেনে নিতে এতো অসুবিধে কোথায়? মনে রাখবেন, আইনেও ব্যতিক্রম আছে, আইনেরও মানবিক দিক রয়েছে, যে মানবিকতা বইতে লেখা কালো অক্ষরগুলোকে সব সময় মেনে চলে না। ‘জাস্টিস ফর দিশা’ সেটাই আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেল।

স্যালুট টু সাইবারাবাদ পুলিশ।

Previous articleহায়দরাবাদ কাণ্ডে এনকাউন্টারে মৃত্যু ৪ অভিযুক্তর, আত্মরক্ষার্থে গুলি: পুলিশ কমিশনার
Next articleমুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর, আলোচনায় বসতে চান রাজ্যপাল