Thursday, August 28, 2025

আন্দোলন তো করছেন, কিন্তু বিজেপির চালটা বুঝতে পেরেছেন তো!

Date:

Share post:

দেবাশিস বিশ্বাস

NRC/CAA বিরোধী আন্দোলন, মিটিং মিছিল হয়তো দেশের নানান প্রান্তে চলছে। কয়েকটি রাজ্য ছাড়া গণতান্ত্রিক পথেই চলছে। কিন্তু সেই সমাবেশ বা আন্দোলন গুলোকে খালি চোখে দেখলেই বোঝা যাবে যে আন্দোলন থেকে দেশের বিশাল সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠী হিন্দুরা নিজেদেরকে সরিয়ে নিচ্ছেন। লড়াইটা কেবল মুসলিমদের লড়াইয়ে পরিণত হয়ে যাচ্ছে অতি দ্রুত। অথচ হিন্দুদের বিশাল অংশ কিন্তু NRC-র বিরোধী ছিলেন, কেন্দ্রীয় শাসক দলেরও বিরোধী ছিলেন এবং সেই বিরোধিতা দিনে দিনে যে বাড়ছিল তা মহারাষ্ট্র, হরিয়ানার বিধানসভা নির্বাচন এবং বহু রাজ্যের উপনির্বাচনে স্পষ্ট হচ্ছিল। এই সব নির্বাচন ক্ষেত্রগুলোতে হিন্দুরা সন্দেহাতীতভাবে সংখ্যা গুরু। প্রমাদ গুনতে শুরু করেছিল চন্দ্রগুপ্ত-চাণক্য জুটি।

CAA সব ঘুলিয়ে দিল। যতজন আন্দোলন করছেন, নিঃসন্দেহে তার থেকে বহু বহু গুন মানুষ সেই আন্দোলন থেকে সরে গিয়েছেন বা হয়তো NRC/CAA- এর পক্ষে চলে গিয়েছেন। চাণক্য-শাহ অতি সুকৌশলে এত বড় রাষ্ট্রীয় ইস্যুকে মুসলিমদের সমস্যায় পর্যবসিত করে দিতে সক্ষম হয়েছেন। বামপন্থীরাও এই ফাঁদে পা দিয়ে কেবল মুর্শিদাবাদ, ও অন্যান্য কিছু সংখ্যালঘু এলাকায় সফল সমাবেশ করে ছবি পোস্ট করছেন। মুসলিমরাও অতি দুর্ভাগ্যজনকভাবে নিজেদের ধর্মীয় প্রতীক পোশাক পরিচ্ছদ পরে আন্দোলন সমাবেশে এসে বিষয়টি আরও জটিল করে তুলেছেন।

অপেক্ষা করুন আর কিছুদিন পরেই মোদি-শাহ বাহিনী NRC/CAA- এর সমর্থনে প্রচারে নামবেন। তাঁরা বুদ্ধি করেই এখন চুপ করে বসে আছেন, নানা জায়গায় হিংসা দেখেও মুখে কুলুপ। চরম বাচাল খড়গপুরের ঘোষদাও চুপ। তাঁরা চাইছেন আরও বিশৃঙখলা বাড়ুক, আরও মেরুকরণ বাড়ুক, একজোট হিন্দু মুসলিমরা আলাদা হয়ে যাক, তারপর নামা যাবে। এই ভাঙচুর, ট্রেনে আগুন, নারা এ তকবির স্লোগান, দেশভাগের সময়ের ভয়াবহ দাঙ্গার স্মৃতি উস্কে দেবেই। তারপর আতঙ্কিত হিন্দুদের রক্ষক অবতার হিসাবে তাঁরা পথে নামবেন। জনস্রোত ভাসিয়ে নিয়ে যাবে সবাইকে। এই দেশের প্রায় ৮৩% হিন্দু, এর সাথে জুড়ে নিন বৌদ্ধ, শিখ, খ্রিস্টানও। কোথায় তলিয়ে যাবে মুসলিমরা? মুসলিম ভোট BJP পায়না, তা পাবার তোয়াক্কাও করেনা।

লক্ষ্য করুন সরকার বা সঙ্ঘ পরিবার বিরোধী আন্দোলনের পীঠস্থান JNU/JU চুপ। লড়াই এ নেমেছে জামিয়া মিলিয়া। অথচ JNU আর জামিয়া দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের union ই SFI ও অন্যান্য বামপন্থী দের দখলে। অর্থাৎ আন্দোলনের পন্থা নিয়ে বামপন্থী দের সংশয় ও স্পষ্ট।

তাই অনুরোধ, আন্দোলন করুন কিন্তু সবাই মিলেমিশে। আর মুসলিম দের অনুরোধ আন্দোলন সমাবেশে আসার আগে নিজেদের ধর্মীয় পরিচয়বাহী পোশাক, যেমন টুপি ইত্যাদি বাড়ীতে রেখে আসুন। এখন ভাবছেন সরকার ভয় পেয়েছে। আপনি মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন। এই সরকার কে চেনেননি এখনো। NRC/CAB আপনাদের কত ক্ষতি করবে জানিনা, কিন্তু দেশের সংখ্যাগুরু হিন্দু দের থেকে দূরত্ব এবং নাগরিক দের মধ্যে স্পষ্ট আড়াআড়ি বিভাজন আপনাদের ক্ষতি করবে বহু বহু গুণ বেশী।
কি করা উচিৎ বুঝতে না পারলে, আপাততঃ লড়াই মুলতুবি রাখুন, পরে যদি বাস্তবে ধর্মের ভিত্তিতে আঘাত আসে, তখন নামবেন, এবং হ্যাঁ হিন্দুদের নিয়েই নামবেন ভারতীয় হিসাবে। শুধুমাত্র মুসলিমরা এ দেশের সরকারের কোনই ক্ষতি করতে পারবেন না। এটা স্পষ্ট বুঝুন।

spot_img

Related articles

রজতজয়ন্তীতে ডব্লিউবিএনইউজেএসকে উচ্চ প্রশংসা, মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ প্রধান বিচারপতির

কলকাতার পশ্চিমবঙ্গ জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয় (ডব্লিউবিএনইউজেএস)-এর উৎকর্ষতা এখন বেঙ্গালুরুর থেকেও এগিয়ে—রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করলেন কলকাতা হাই কোর্টের...

এসএসসি নিয়োগ পরীক্ষা পিছবে না, আবেদন খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট 

স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেও লাভ হলো না কিছু প্রার্থীর। দেশের...

যাত্রীদের জন্য দুঃসংবাদ! রবিবার টালিগঞ্জ থেকে ক্ষুদিরাম পর্যন্ত বন্ধ মেট্রো 

কলকাতার ব্লু লাইনের যাত্রীদের জন্য দুঃসংবাদ। আগামী রবিবার মহানায়ক উত্তম কুমার (টালিগঞ্জ) থেকে শহিদ ক্ষুদিরাম স্টেশন পর্যন্ত বন্ধ...

এনএইচএম কর্মীদের বড় উপহার, উৎসবের মুখে বোনাস ঘোষণা রাজ্যের 

উৎসবের দোরগোড়ায় জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের কাজে নিযুক্ত রাজ্যের স্বেচ্ছাসেবক ও চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের জন্য বড় ঘোষণা করল রাজ্য সরকার।...