
👉 শুরু হয়েছিল নীতি আয়োগ দিয়ে। যোজনা পর্ষদকে ভেঙে ফেলা হয়েছিল। দাবি ছিল, নীতি আয়োগ হলে কাজের গতিবেগ, অভিমুখ, গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়বে। ফল কী হয়েছে তা সরকারি তথ্যে আছে।

👉 তারপর দেশকে অন্ধকারে রেখে নোটবন্দি। যুক্তি কি ছিল? যুক্তি ছিল কালো টাকা উদ্ধার হবে। জঙ্গিদের ফান্ডিং করা বন্ধ হবে। জাল নোট তৈরি বন্ধ হবে। একশো জনের বেশি মানুষের লাশের উপর দাঁড়িয়ে প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়ে যখন পাখা মেলল, দেখা গেল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে ছাড়া ৯৯% টাকাই সরকারি কোষাগারে উঠে এসেছে। নকল টাকা আকছার ধরা পড়ছে। দ্বিবর্ষপূর্তির পর রোজ সোশ্যাল সাইটে আশঙ্কা, শুনছি নাকি দু’হাজার টাকার নোট তুলে নেওয়া হবে! আর জঙ্গি হামলার তথ্য রোজকার সংবাদ মাধ্যম বহন করছে। কাশ্মীরে তিন মাস ইন্টারনেট বন্ধ করার মাঝে আরও কত কী ঘটে গিয়েছে তা কে জানে!

👉 তিন তালাক বিল। সাধু উদ্যোগ। এই ধরণের বিলের ক্ষেত্রে তৃণমূলস্তরে দীর্ঘ প্রচার চালানোর পর প্রয়োগ করলে তার ফল সুদূর প্রসারী হয়। কিন্তু হঠাৎ প্রয়োগের কৃতিত্ব যে নিতেই হবে। ফলস্বরূপ আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তিন তালাক অব্যাহত। এতো শুধু সংবাদ মাধ্যম যা দেখাচ্ছে বা শোনাচ্ছে। রোজ তার বাইরের হিসাব সরকারের মহিলা বিকাশ মন্ত্রকের কাছে থাকা উচিত।
২০১৪-২০১৯। তিন সিদ্ধান্ত। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরেই বুলেট ট্রেনের চুক্তি। আর সরকারও সেই গতিতে চলার অঙ্গীকার করে নিল।

👉 ৩৭০ ধারা। জম্মু-কশ্মীর থেকে তুলে নেওয়া হলো। বিশেষ সুবিধা আর নয়। সেটা যে করা হবে, তা দিন পনেরো আগে মালুম হচ্ছিল। ক্রিকেট দলকে ফিরিয়ে আনা, হঠাৎ সেনা মোতায়েন। বিরোধী নেতাদের বাক্সবন্দি করে ফেলা। এমনকি বাদ গেলেন না মেহবুবা মুফতিও। যিনি পৃথক কাশ্মীরের দাবিদার এবং যাঁর সঙ্গে ছ’মাস আগেও চারহাত এক করে সরকার চালিয়েছে কেন্দ্রের সরকারি দল। কাশ্মীরের মানুষের উপর আস্থা নেই। রাষ্ট্রীয় যন্ত্রই আসল ভরসা। তাই জম্মু-কাশ্মীরে দিনেও পিন পতনের শব্দ। চলছে, চলবে। এতো অতিরিক্ত সেনা, তবু পাক-জঙ্গিরা ঠিক ঢুকে পড়ে, হামলা চালায়। আর সেনা প্রধান ফাটা রেকর্ডের মতো বলতে থাকেন, ইমরান খানদের উচিৎ শিক্ষা দেব। আর মাঝে মাঝেই কিছু হামলার ভিডিও। আর কা-কা তারস্বরে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারি দলের ঘোষণা, সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারত। এই না হলে ৫৬ ইঞ্চি ছাতি! কিন্তু কমরেড, কাশ্মীর তো শান্ত হয়ে গিয়েছে তাই না? রাজ্য থেকে কেন্দ্র শাসিত হয়ে সম্ভবত অর্ধেক সমস্যার সমাপ্তি ঘটেছে। দরকার শুধু একটা মিডাস টাচ, তাই তো!
👉 অযোধ্যা কাণ্ড। সুপ্রিম কোর্ট সমস্যার একটা সমাধান করেছে। কিন্তু প্রশ্ন ওঠা তো বন্ধ হয়নি। নৃতত্ত্ববিদরা বলছেন, অযোধ্যার গর্ভগৃহে মুসলিম সংস্কৃতির কিছু মেলেনি। বেশ। কিন্তু যা পাওয়া গিয়েছে, তার সঙ্গে রাম সংস্কৃতিরও কিছু পাওয়া যায়নি। তাহলে? কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, বাবরি মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল বলেই কি খুব সহজে এই সিদ্ধান্তে আসা গেল? যদি বাবরি মসজিদ অক্ষত থাকত, তাহলে কি আদালত মসজিদ ভেঙে মন্দির তৈরির নির্দেশ দিত? দেশের সর্বোচ্চ আদালতের ডিভিসন বেঞ্চের সিদ্ধান্ত নিয়ে এমন অজস্র প্রশ্ন মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। উত্তর দেবে কে?

👉 এবং শেষত এনআরসি আর সিএএ। অসমে লাগু করার পরেই আওয়াজ উঠল। সরকার কর্ণপাত করেনি। যদিও কেঁচো খুড়তে গিয়ে কেউটে বেরিয়ে এলো। অসমেই নাকি এনআরসিতে ১৯ লক্ষের নাম নেই। তারমধ্যে আবার ১২লক্ষ হিন্দু। শুধু তাই নয় এক লক্ষ গোর্খা সেনা বাদ। মুসলিমদের জব্দ করতে গিয়ে এ কী হয়ে গেল! প্রতিবাদ শুরু। অসম মানতে নারাজ। অসম বিজেপিই কেন্দ্রীয় বিজেপির বিরুদ্ধে নেমে পড়ল। অবস্থা সামাল দিতে সেই পর্ব কোনওরকমে ধামাচাপা দিয়ে এবার সিএএ। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। পাশ হলো। কিন্তু তারপর? আগুন লাগল দেশে। বসে দেখা ছাড়া কিচ্ছুটি করার নেই মোদি-শাহ জুটির। শরিকরা সরছে। এক ডজনের বেশি রাজ্য “নো” প্ল্যাকার্ড তুলে ধরেছে। এবার এনপিআর- এনআরসি-সিএএ গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। প্রধানমন্ত্রী এক বলছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অন্যরকম। মানুষ বিভ্রান্ত। মানুষ দিশেহারা। মানুষ কিংকর্তব্যবিমুঢ়। প্রশ্ন সর্বত্র, তার মানে রেশন কার্ড, প্যান কার্ড, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, পাসপোর্ট হাতে থাকার পরেও আমরা দেশের নাগরিক নই। এসব মিথ্যে! সত্য শুধু তুমি আর তোমার নয়া নাগরিকত্বর ডঙ্কা! ওই গানটা বারবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে… “তুমি কোন কাননের ফুল, কোন গগনের তারা/ তোমায় কোথায় দেখেছি…”

মিস্টার নরেন্দ্র মোদি, এতক্ষণ আপনার, আপনাদের কীর্তি কলাপের কথা বলছিলাম। ভুল না ঠিক শেষ বিচার করবেন জনতা। কারণ, মানুষকে বেশিদিন বোকা বানাতে আমি-আপনি কেউই পারব না। কিন্তু এই যে এতগুলি কথা বললাম, এত স্তরে স্তরে সাজিয়ে আপনাদের কথা বললাম এর সঙ্গে দেড়শো টাকার মজুরের, একশো দিনের কাজের কর্মীদের, কনট্র্যাকচুয়াল শ্রমিক, সরকারি কর্মী, বেসরকারি কর্মী, ছোট দোকানদার, ছোট ব্যবসায়ীদের কী এলো গেল বলুন তো! ওদের জীবনে কোন পরিবর্তন আনবে ২০১৪-১৯ পর্যন্ত এই ছয় সিদ্ধান্ত? বরং ওরা অর্থাৎ দেশের ৮০%শতাংশ মানুষ যে প্রশ্নটা আমাদের কাছে জানতে চাইছে, সেই প্রশ্নগুলো আপনাকে করতে চাই….

১. পেঁয়াজের দাম কেন ১২০টাকার নিচে নামছে না?

২. আলুর দাম কেন চড়চড় করে ৩০টাকা পেরিয়ে গেল?


৩. পেট্রল-ডিজেলের দাম কেন ৭৫টাকার নিচে নামছে না?

৪. আর্থিক বৃদ্ধির হার ৬%থেকে কমতে কমতে কেন ৪.৫% তে এসে ঠেকেছে?

৫. কংগ্রেস তো খুব খারাপ দল, অপদার্থ, আপনারা পদার্থ! মানলাম। তাহলে দেশে গত ৪৫ বছরে সবচেয়ে বেশি বেকার কেন তৈরি হলো?

৬. দেশের গাড়ি শিল্প কেন তলানিতে। প্রায় প্রত্যেক সংস্থার বাজার ১৫%-এর বেশি কেন কমে গেল?

৭. বিএসএনএল দেশের প্রাইম সংস্থা। তার অধিকাংশ টাওয়ার ব্যবহার করে অন্য বেসরকারি সংস্থা। তারা লাভে চলে আর বিএসএনএল ক্ষতিতে! প্রায় এক লক্ষ কর্মীকে সংস্থা বন্ধ করার হুমকি দিয়ে স্বেচ্ছাবসরে বাধ্য করলেন! কংগ্রেস তো খারাপ, ব্যর্থ, মানুষ তাই তাদের সরিয়ে দিয়েছে। আপনারা কোন কাননের ফুল যে তা রিভাইভ না করে তার বিসর্জনের বাজনা বাজাচ্ছেন!
৮. রেল দেশের গর্বের সংস্থা। তার স্টেশন, ট্রেন, এলাকা পর্যন্ত বেসরকারি হাতে দিয়ে দিচ্ছেন?
৯. ৮-১০টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে বেচে দিয়ে টাকা তুলছেন। কেন? আদানি আর আম্বনির মতো কেনাবেচার ব্যাপারী আর সরকারের মধ্যে তো কোনও পার্থক্যই রাখলেন না!
১০. ৬ বছর রাজত্ব করার পরেও এখনও কেন প্রতিরক্ষা বাজেটের অধিকাংশটাই চলে যায় কাশ্মীরের নিরাপত্তা খাতে?
১১. ৬ বছর রাজত্ব করার পরেও কেন দেশের ৫% শতাংশের বেশি মানুষকে আয়করের আওতার মধ্যে আনা গেল না?
১২. বিজয় মালিয়া, নীরব মোদি সহ কম করে গোটা আটেক ঠগ প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকা ব্যাঙ্কের গায়েব করে বিদেশে ফেরার! তাদের কবে আনবেন, আর এই টাকা সাধারণের ঘরে কবেই বা ঢুকবে? নাকি ভোট এলেই লন্ডনের গোটা দুয়েক ফুটেজ দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করবেন আপনার তদন্তকারী সংস্থা কত তৎপর! আর ওদের টাকার সুদ তুলবেন আমাদের মতো আমজনতার পকেট কেটে?
না, আপাতত এক ডজন জিজ্ঞাসা রইল। আমি জানি মিস্টার প্রাইম মিনিস্টার আপনি জবাব কাউকে দেন না, শুধু আপনি বলেন। বলেন ভাল। কর্পোরেট লুক আছে। কে বলছে চাওয়ালা! আপনার মেক ওভার ফ্যান্টাস্টিক। কিন্তু আপনার যাঁরা সমর্থক, যাঁরা সোশ্যাল মিডিয়া ফাটিয়ে দিচ্ছেন আপনার ৫৬ইঞ্চির স্বপক্ষে, তাঁরা তো আশা করি এক ডজন প্রশ্নের জবাব দেবেন! রামায়ণ, মহাভারত, গীতার কল্পনা জগত ছেড়ে একবার বাস্তবের মাটিতে নামুন। মাথায় রাখবেন, কথায় কথায় কংগ্রেস এটা করে গিয়েছে বলে অজুহাত খাড়া করবেন না। তাহলে ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কেন? যেমন ২০১৪সালে ডিটেনশন ক্যাম্প ভেঙে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৯-এ তা নেই বলে দিতে আপনার নৈতিকতায় বাধে না, তেমন মিথ্যাচারণ করবেন না প্লিজ। কংগ্রেস এনপিআর করেছে বলে দায় এড়াবেন না। কংগ্রেস তা করে গেলে বাতিল করেননি কেন? ৬৫ বছরের যোজনা পর্ষদ ভেঙে দিতে তিন মিনিট সময় লাগে না, আর জনতার ঠ্যালা খেয়ে অন্যের বক্সে বল ঠেলে দিয়ে যদি ভাবেন নিশ্চিত থাকবেন, তাহলে ভবি অত সহজে ভোলার নয়। দেশীয় সংস্থা যদি বেচে দিয়ে সমস্যার সমাধান হয়, তাহলে আপনাদের সঙ্গে কংগ্রেসের পার্থক্য কী? কিসের দেশীয়করণ, কিসের ভারতীয়সত্ত্বা, কিসের ওইসব জাতীয়তাবাদের বুলি? তারচেয়ে চলুন দেশটার নাম ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি রেখে দিন। ওটাই আপনাদের কাজের সঙ্গে মানানাসই!
বিধিসম্মত সতর্কীকরণ : আমি সিপিএম, মাওবাদী, কংগ্রেসী, তৃণমূলপন্থী, শিবসেনা বা ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সমর্থক নই!