কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার রদবদলে বাংলার শিকে ছিঁড়তে পারে, কণাদ দাশগুপ্তের কলম

রাজধানীর ক্ষমতার অলিন্দের জোর জল্পনা, কিছুদিনের মধ্যেই রদবদল হতে চলেছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার৷ আর এই রদবদলে মূলত অগ্রাধিকার পেতে চলেছে তিন রাজ্য, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড এবং বাংলা৷
বিহারে JDU-র সঙ্গে আসন্ন নির্বাচনে জোট বা অনিশ্চিত হলে, বিহার থেকেও বাড়তি মন্ত্রী করার প্রস্তাব বিজেপির শীর্ষস্তরের বিবেচনাধীন৷

মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ডে বিরোধী বেঞ্চে চলে গিয়েছে বিজেপি৷ খুব বড়সড় অঘটন না ঘটলে এই দু’রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল হয়েই পাঁচ বছর থাকতে হবে বিজেপিকে৷ তাই দুই রাজ্য সরকারের উপরই চাপ বাড়াতে চাইছে বিজেপি’র হাই কম্যাণ্ড৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার আসন্ন রদবদলে এই দু’রাজ্য থেকে তাই মন্ত্রী আনার সিদ্ধান্ত প্রায় পাকা৷

ওদিকে বাংলায় বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা একুশে৷ তবে শাসক তৃণমূল চাইলে ভোট এগিয়েও আসতে পারে৷ ফলে হাতে বিশেষ সময় নেই৷ লোকসভা নির্বাচন ছিলো মোদির নির্বাচন৷ রাজ্য থেকে বিজেপির 18 আসন পাওয়ার পিছনে ‘মোদিকে ভোট’ দেওয়ার লজিক জোরালোভাবে কাজ করেছিলো৷ বিধানসভা ভোটে সেই ‘মোদি-ম্যাজিক’- এর সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে৷ তাছাড়া মোদির বিশ্বাসযোগ্যতায় যে টান পড়েছে, তা প্রবলভাবে স্পষ্ট হয়েছে ঝাড়খণ্ডের ভোটে৷ মোদির নামে এখন আর সেভাবে ভোট আনতে পারছে না গেরুয়া-শিবির৷ পাশাপাশি দিল্লি নিশ্চিত, ক্ষমতা দখল করার মতো ‘মুখ’-এর অভাব রয়েছে বঙ্গ-বিজেপিতে৷ বাংলার বিজেপির কোনও মুখকে এখনও ‘কাজের মানুষ’ হিসেবে পেশ করাই যায়নি৷ কিন্তু তাই বলে তো তৃণমূলকে ওয়াকওভার দেওয়া যায়না৷ তাই চালু পদ্ধতিই কাজে লাগাতে চাইছেন মোদি-শাহ৷

এই মুহুর্তে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় বাংলার প্রতিনিধিত্ব যে দু’জন করছেন, ধারে ও ভারে তাঁরা কেউই তৃণমূলকে টেক্কা দেওয়ার মতো প্রভাবশালী নন৷ ফলে ফাঁক একটা থেকেই গিয়েছে৷ তার উপর বাড়তি বিড়ম্বনা এখন NRC-CAA নিয়ে বিরোধীদের পাল্টা বিশ্বাসযোগ্য প্রচার চালানো৷ বিশ্বাসযোগ্য প্রচার চালানোর জন্য বিশ্বাসযোগ্য অবস্থানে থাকা কোনও মুখ দরকার৷ তেমন মুখ দলে না থাকলে, তা তৈরি করে নিতে হবে৷ কারন, একুশের ভোটের জমি তৈরি করতে শুধুই বক্তৃতা যথেষ্ট নয়, ‘কাজের কাজ’ কিছু করতে হবে৷ কিন্তু কীভাবে হবে সেই কাজের কাজ ! সূত্রের খবর, ‘বিশ্বাসযোগ্য’ মুখ তৈরি করতে বলিয়ে- কইয়ে সাংসদদের মধ্য থেকে 2 অথবা 3 জনকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দেওয়ার কথা সিরিয়াসলি ভেবেছে টিম-মোদি৷ এই নাম বাছাই নিয়ে যথেষ্টই হোমওয়ার্ক করেছে দিল্লি৷ সমাজের সর্বস্তরে যাতে মন্ত্রিসভার সম্ভাব্য সম্প্রসারণে গোটা রাজ্যে প্রভাব পড়ে এবং আগামী বিধানসভা ভোটে দলও লাভবান হয়৷

জানা গিয়েছে, দিল্লি প্রাথমিকভাবে সেই নামের যে তালিকা নিয়ে আলোচনা করছে, তাতে আছেন, লকেট চট্টোপাধ্যায়, কুনার হেমব্রম, জন বার্লা, জয়ন্ত রায়, সুকান্ত মজুমদার, সুভাষ সরকার৷ দিলীপ ঘোষের নাম এক নম্বরে থাকলেও, তিনি ফের দলের রাজ্য সভাপতি হতে চলেছেন বলে খবর৷ তাই মন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা দিলীপবাবুর কম৷ তবে বিশেষক্ষেত্রে এই নিয়মের বদল হতেই পারে, যেভাবে অমিত শাহ নিজেই দল ও সরকারে আছেন৷

মন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি উজ্জ্বল অবশ্যই লকেট চট্টোপাধ্যায়ের৷ দলের নেত্রী হিসাবে গত দু-তিন বছর তাঁর পারফরম্যান্স অসাধারন৷ সুবক্তা তো বটেই, পাশাপাশি সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন৷ সাংসদ হিসেবেও এই ক’দিনেই নজর কেড়েছেন৷ লকেটের একটাই অভাব, ‘কথা দেওয়ার’ মতো অবস্থানে তিনি নেই৷ তাই লকেটকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আনলে বাংলায় তাঁর গ্রহনযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে বলেই দিল্লি-বিজেপির ধারনা৷ কুনার হেমব্রম বা জন বার্লা’র মধ্যে একজন আসতে পারেন মন্ত্রিসভায়৷ এই দু’জন যথাক্রমে ঝাড়গ্রাম এবং আলিপুরদুয়ারের সাংসদ। আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত৷ লোকসভা ভোটে আদিবাসী- আসনগুলিতে তৃণমূল ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে৷ বিধানসভা নির্বাচনেও সেই সাফল্য ধরে রাখতে এই দু’জনের একজনকে মন্ত্রী করা হতে পারে৷ বিবেচনায় আছে সুভাষ সরকার, জয়ন্ত রায়, সুকান্ত মজুমদারের নাম৷ এই তিনজনের প্রথম দু’জন নামজাদা চিকিৎসক৷ তৃতীয়জন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। সরকারি কর্মী, চিকিৎসক, শিক্ষক তথা শিক্ষিতসমাজের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করতে মরিয়া বিজেপি। তাই এই তিনজনের একজন মন্ত্রিসভার সম্ভাব্য সম্প্রসারণে জায়গা পেতে পারেন৷

আরও পড়ুন-সাইরাসের পুনর্বহালকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে টাটা সন্স

 

Previous articleদিল্লিতে ফের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, ঘটনাস্থলে দমকলের ৫০টি ইঞ্জিন
Next articleবিদায়ী বছরে ভারতে ১১০টি বাঘ ও ৪৯১টি চিতাবাঘের মৃত্যু: রিপোর্ট