Wednesday, November 12, 2025

পুরোনো ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসুন, ভারতীয় সেনায় মহিলা-নেতৃত্বে সায় সুপ্রিম কোর্টের

Date:

Share post:

ঐতিহাসিক রায় শীর্ষ আদালতের৷

পুরুষদের পাশাপাশি ভারতীয় সেনাবাহিনীকে এবার নেতৃত্ব দিতে পারবেন মহিলারাও। এক ঐতিহাসিক রায়ে সেনায় মহিলাদের নেতৃত্বের পক্ষেই সায় দিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত

মহিলা কমান্ডারের প্রসঙ্গে সোমবার এই রায় ঘোষনা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের এই ছাড়পত্রের ফলে এবার থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর মহিলারাও তাঁদের পুরুষ সহকর্মীদের মতোই নেতৃত্ব দিতে পারবেন৷

সেনা বাহিনীতে মহিলা নেতৃত্বের বিষয়টি নিয়ে মামলার শুনানি চলাকালীন সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, “মহিলাদের শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে তাঁদের অধিকারের কোনও যোগ থাকতে পারেনা৷ এক্ষেত্রে প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন৷”

কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে শীর্ষ আদালতে জানানো হয়েছিলো, সেনাবাহিনীকে নেতৃত্বে দেবেন একজন মহিলা, এটা মান্য করার মানসিকতা এখনও ভারতীয় সেনার মধ্যে তৈরি হয়নি৷
কেন্দ্রের এই যুক্তিকে বৈষম্যমূলক ও বিরক্তিকর আখ্যা দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, এবার সময় হয়েছে এই ধরণের “চিরাচরিত ভাবনা” থেকে বেরিয়ে আসার।

সরকারের তরফে মামলার শুনানিতে বলা হয়, এখনও যুদ্ধক্ষেত্রে মহিলাদের নেতৃত্বের জন্যে ভারতবর্ষ ঠিক উপযুক্ত নয়। রণক্ষেত্রে মহিলাদের কম্যান্ডিং অফিসার হিসেবে মেনে নিতে জওয়ানরাও ততটা প্রস্তুত নন। তাছাড়া মাতৃত্বকালীন ছুটি থেকে শুরু করে নানা অসুবিধাও রয়েছে মহিলাদের।

কিছুদিন আগে কম্যান্ডিং অফিসারের পদের জন্য দাবি জানিয়ে আবেদন করেছিলেন কয়েকজন মহিলা। সেই আবেদনের বিরোধিতায় সরকারের তরফে সুপ্রিম কোর্টকে বলা হয়, ভারতীয় সেনাবাহিনীর যে কোনও র‍্যাঙ্কেই পুরুষদের আধিপত্য বেশি। এই সব জওয়ানরা সাধারণত গ্রামীণ এলাকা থেকে আসেন। পুরোনো, সংস্কারাচ্ছন্ন মানসিকতার কারণে কোনও মহিলা কম্যান্ডিং অফিসারকে মেনে নেওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাছাড়াও অন্য কারণও রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের যুক্তি, সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণের সময় অথবা কোনও দুর্গম জায়গায় পোস্টিংয়ের সময় যে শারীরিক ও মানসিক দৃঢ়তার দরকার, সেটা মহিলাদের ক্ষেত্রে খুব একটা থাকে না। তাই কমব্যাট ফোর্সে মহিলাদের না নেওয়াটাই যুক্তিসঙ্গত।শীর্ষ আদালতে বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি অজয় রাস্তোগির বেঞ্চে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সওয়াল করেন প্রবীণ আইনজীবী আর বালাসুব্রহ্মনিয়ম ও আইনজীবী নীলা গোখেল।

কেন্দ্রীয় আইনজীবীদের এই সওয়াল খারিজ করে বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি অজয় রাস্তোগি বলেছেন, প্রশাসনের মানসিকতার বদল দরকার। তবেই সেনাবাহিনীতে মহিলা-পুরুষ এই বৈষম্য দূর হবে। কম্যান্ডিং অফিসার শুধু নয়, সেনাবাহিনীর অন্যান্য পদেও মহিলাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা থাকা উচিত নয়। কেননা মহিলারা পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেন।
সেনাবাহিনীর শর্ট সার্ভিস কমিশনে বা SSC-তে ১৪ বছর চাকরি করা মহিলাদের স্থায়ী কমিশনের বিকল্প দেওয়া হবে কিনা এই প্রসঙ্গও তোলা হয় আদালতে। এই প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, SSC-তে ১৪ বছরের চাকরির সময়কালে সীমাবদ্ধ রাখা নয়, সকল মহিলা অফিসারকে স্থায়ী কমিশন দিতে হবে। ‘শর্ট সার্ভিস কমিশন’ অনুসারে, একজন মহিলা অফিসার ১০-১৪ বছর সেনায় কাজ করতে পারেন। পাশাপাশি মহিলা অফিসারদের সেনা সার্ভিস কর্পস, অর্ডিন্যান্স, সেনা শিক্ষাক্ষেত্র, বিচারপতি, অ্যাডভোকেট জেনারেল, ইঞ্জিনিয়ার, সিগন্যাল, গোয়েন্দা ও বৈদ্যুতিন ক্ষেত্রেও নিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

spot_img

Related articles

লক্ষ্য ২০২৭! ২৫ নভেম্বর শুরু ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ

ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হচ্ছে আগামী ২৫ নভেম্বর থেকে। রাজ্যের সেচ ও জলপথ মন্ত্রী মানস...

রাজ্যের সমবায় ব্যাঙ্কে স্বচ্ছতা আনতে চালু অনলাইন অডিট ব্যবস্থা

রাজ্যের সমবায় ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা আনতে বড় পদক্ষেপ নিল রাজ্য সরকার। এ বার থেকে সমস্ত সমবায় সমিতি...

সরকারি প্রকল্পে স্বচ্ছতা বাড়াতে চালু হচ্ছে জিও ট্যাগিং ব্যবস্থা! নির্দেশিকা জারি নবান্নের 

সরকারি প্রকল্পের বাস্তবায়ন ও তদারকিতে আরও স্বচ্ছতা আনতে বড় পদক্ষেপ নিল রাজ্য সরকার। নবান্নের নির্দেশে এবার থেকে রাজ্যের...

মুখ্যমন্ত্রীকে কটূক্তি! ‘নারীবিদ্বেষী’ শান্তনু ঠাকুরের ইস্তফার দাবি তৃণমূলের

বিজেপি বাংলাকে সম্মান করে না। এই বিজেপি মহিলাদেরও সম্মান করে না, করতে জানেও না। সেটা আরও একবার প্রমাণ...