চৈত্র সংক্রান্তির দিন আমাদের ইশকুলের সকলের কার্ড আঁকার শেষ দিন। পরদিন নববর্ষ। সবচেয়ে স্পেশাল কার্ডটা (মানে যেটা মোটামুটি উৎরোনোর মতন আঁকা হল) কাকে দেবো তাও স্থির হয়ে গেছে। সন্ধ্যায় বর্ষশেষের মন্দির। আর কিছুদিনের মধ্যেই গ্রীষ্মের ছুটি পড়ে যাবে। তেপান্তরের মাঠের মতন ধুধু গরমে তেঁতুলমাখা আর এই সময়ের শেখা ও বারম্বার গাওয়া দুটো গান, “আধেক ঘুমে নয়ন চুমে“ আর “কার যেন এই মনের বেদন“ ঘুরে ঘুরে আসে ঘুঘুর ডাকের সঙ্গে সঙ্গে এই অসময়ে। আমাদের ছোটছোট পা, শুকনো পাতা ঠেলে ঠেলে, ইউক্যালিপটাসের পাতার বোঁবোঁ করে পাক খেয়ে পড়া কোন এক অচিনপুরের হেলিকপ্টার ভাবতে ভাবতে হস্টেলে ফেরে।

নতুন বছর। কারুর মন ভালো নেই এইবার। এদিকে কিন্তু বাগানের মেহগনি পাতাগুলো নতুন – চিকণ সবুজ, আর তার সাথে দেবদারু তার কপাল নুইয়ে পাল্লা দিতে মশগুল। এই গানটা আমার সেই সেকালের তরী বাওয়ার সঙ্গী ও তাদের সঙ্গে কাটানো চৈত্র-সংক্রান্তির এক আশ্চর্য শৈশব জিইয়ে রাখতে গাইলাম। আমার এখনকার নিত্যদিনের নকুলদানা নাম্নী সঙ্গিনীর শৈশব চৈত্রের দুপুরে, সেইসব দুপুরের সঙ্গে, মিলেমিশে বাঁচুক।
