Friday, August 22, 2025

তৃণমূল সরকার: দশে পা, কুণাল ঘোষের কলম

Date:

Share post:

স্বপ্নের মত লাগে।

মনে হয় এই তো সেদিন।
অনেকরকম অনুভূতি ঢেউ খেলে বেড়ায়।

মমতাদির নেতৃত্বে সরকার। নবছর পার হয়ে দশে পা।

মনে পড়ে যায় চূড়ান্ত কঠিন ও অনিশ্চিত দিনগুলো। পরিবর্তনের যুদ্ধ।
একটা সময় ছিল তৃণমূলের পক্ষে কিছু বললে বা লিখলে, সেটা কটাক্ষের খোরাক। খোদ মমতাদিকেও সেই দুর্দিনে বহু অপমান, আঘাত সহ্য করতে হয়েছে।
তার পরে যে একটা দিন আসবে, মহাকরণের মসনদে মমতাদি, সত্যিই এটা একসময়ে অবিশ্বাস্য ছিল।

পরে, 2011 বিধানসভা নির্বাচনের আগে নেত্রীর পরপর পদযাত্রা। এর মধ্যে যেদিন গোলপার্ক, যোধপুর পার্ক হয়ে যাদবপুরে ঢুকলেন, সেদিন ওই মুহূর্তের ভিড়, স্বতঃস্ফূর্ততা, ফুল, শঙ্খধ্বনি, কাঁসরঘন্টার উন্মাদনা যেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীর গঢ় থেকেই নিশ্চিত বার্তা দিয়েছিল- বদল আসছেই।

চৌত্রিশ বছরের প্রবাদপ্রতিম সিপিআইএম আর বামফ্রন্টকে হারানো যায়, ক্ষমতাচ্যুত করা যায়, মুখ্যমন্ত্রীকে প্রাক্তন বিধায়ক পর্যন্ত বানানো যায়, বাংলা দেখেছিল সেই সন্ধিক্ষণে।

কেন বামফ্রন্ট হেরেছিল? বহু কারণ। বারবার আলোচিত। আজ থাক। পরের পর ভুল নীতি, ক্ষমতার ঔদ্ধত্য, বিরোধীদের উপর দমন পীড়ন, সর্বত্র দলবাজি, এবং শাসকশিবিরেই অন্তর্ঘাত- মানুষ পাড়ার নেতা থেকে মহাকরণ পর্যন্ত সবার উপর চটেছিলেন। না হলে ওই ফল হয় না।

আর মমতাদি কেন জিতেছিলেন?
কারণ তখন তিনি মানুষের মহাজোটের প্রতীক।
লাগাতার মানুষের মধ্যে থেকে আন্দোলনে, বারবার ক্ষতবিক্ষত হয়েও প্রতিবাদ জারি রেখে, মমতাদি তখন বিকল্প মুখ, যাঁকে মেনে নিয়েছিল একাধিক স্রোত। ফাইট ব্যাক কাকে বলে, 2004-এ একমাত্র সাংসদ হওয়ার পর মমতাদি দেখিয়েছিলেন।

বুদ্ধবাবু বনাম মমতাদির লড়াইটায় বুদ্ধবাবু পাল্লা দিতে পারেননি।
2006 এর বিধানসভা ভোটে বামভাসি বাংলা শিরোনামের পর কী করে জমি হারাতে হয়, বুদ্ধবাবু দেখিয়েছেন; আর কী করে জমি কাড়তে হয়, মমতাদি শিখিয়েছেন।
সিপিআইএম সম্পর্কে তাঁর ছিল স্পষ্ট নীতি:” শঠে শঠ্যং। মারি অরি পারি যে কৌশলে।”

বাংলা ও জাতীয় রাজনীতির প্রবল প্রতাপশালী, তথাকথিত ক্যাডারভিত্তিক, প্রবাদপ্রতীম সিপিআইএম তথা বামেদের পরাস্ত করা বড় কম কথা ছিল না।
এক নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায়, আবেগ আর অঙ্কের সুষম মিশ্রণে এই ঐতিহাসিক পালাবদল হয়েছিল।
অনেক যুবকযুবতী জীবনে প্রথমবার বাংলায় পালাবদল দেখেছিলেন।
অসংখ্য ঘটনা মনে পড়ছে; এই প্রক্রিয়াতে ওতোপ্রতোভাবে যুক্ত ছিলাম; সেসব আজ এখানে আর লিখছি না।

 

এরপর নতুন সরকার।
মমতাদির সরকারের পথ চলা শুরু।
কিছু বিতর্ক ছিল, আছে, থাকবে।

কিন্তু এটা ঘটনা যে 2011তে পরিবর্তনটা দরকার ছিল এবং সঠিকভাবেই সেই পরিবর্তন হয়েছিল।
এরপর মুখ্যমন্ত্রীর চরকির মত বাংলায় ঘোরা, মানুষের সঙ্গে মেশা, জেলাস্তরে প্রশাসনিক বৈঠক নিয়ে যাওয়া- এতে যে সরকারি কাঠামোতে গতি এসেছে, কাজ হয়েছে, সুফল মিলেছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। মমতাদি তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে একের পর এক সামাজিক স্কিম করে মানুষকে উপকার পাইয়ে দিয়েছেন। রাস্তা, আলো, জল, বিদ্যুৎ, একশো দিনের কাজ – বাংলা অনেক এগিয়েছে। যদি কাজের কথা বলা হয়, তাহলে তৃণমূল সরকার বামজমানাকে টেক্কা দিয়ে কাজ করেছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

তাই বলে কি সরকার বা শাসকদলের কোনো ভুল নেই?
নিরপেক্ষ বিচার করলে আছে।
কিন্তু তার সঙ্গেই পাল্টা যুক্তি হল:
আজ সিপিআইএম তৃণমূলের বিরুদ্ধে যা যা অভিযোগ আনছে, তার প্রায় সবই এবং তার থেকে বেশি তো তাদের জমানায় তাদের বিরুদ্ধে ছিল।

কম্পিউটারের বিরোধিতা, প্রাথমিকে ইংরেজি তুলে দেওয়া, পরের পর গণহত্যা- এগুলো ভোলার? সিপিআইএম শিল্প নিয়ে কথা তোলে । আজব! বুদ্ধবাবুর জমানায় কৃষিজমি দখল করে শিল্পের স্বপ্ন দেখানো ছাড়া চৌত্রিশ বছরের রেকর্ডটা কী? বাংলা নামে আতঙ্ক ছিল শিল্পমহলে। আজ সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে পিন পড়লেও সবাই জানতে পারি। সিপিআইএমের যুগে এসব থাকলে চৌত্রিশ বছর অবধি আসতে হত না। কান্দুয়ার হাত কাটা আর বানতলার মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন বা বিজন সেতুতে আনন্দমার্গী সন্ন্যাসীদের পুড়িয়ে খুন- ভাবতে পারছেন ফেস বুক, টুইটার, গুচ্ছের চ্যানেল, পোর্টাল, ইউ টিউব থাকলে কী হত?

সরকারের ভুল কখনই সমর্থনযোগ্য নয়।
কিন্তু সিপিআইএমের বিরোধিতা যে মানুষ বিশ্বাস করছেন না, তা ভোটের হার দেখলেই বোঝা যায়।
সিপিআইএমকে এখন কংগ্রেসের হাত ধরতে হচ্ছে, ভাবা যায়?
মমতাদি বাঘে গরুকে এক ঘাটে জল খাইয়ে ছেড়েছেন।

আর কংগ্রেস, বিজেপি?
তারা এখানে যা অভিযোগ করছে, তাদের রাজ্যে বা দিল্লিতে তাদের জমানায় ভুরি ভুরি অভিযোগ ছিল বা আছে।

তবে মানতে হবে দুটো জরুরি কথা।
প্রথমত, বহু ভালো কাজ সত্ত্বেও তৃণমূল সরকারের আত্মসমালোচনার অবকাশ আছে। কিছু নীতিগত প্রশ্নে। কিছু কর্মপদ্ধতিগত প্রশ্নে।

আর দ্বিতীয়ত, বিজেপিকে মোকাবিলার নীতিতে ভুল হচ্ছে। এই রাজ্যে বিজেপি পালাবদল ঘটিয়ে দেবার জায়গায় নিশ্চিত এখনও যায়নি। কিন্তু সাংসদসংখ্যায় বা প্রাসঙ্গিকতায় তারা প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে উঠে এসেছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তৃণমূল এটা হতে দিচ্ছে কেন? বিজেপিকে মোকাবিলা শুধু রাজনীতিতে হবে না; সামাজিক নীতি চাই যথাযথ। এটা দলকে ভাবতেই হবে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন মুখ, অল্পবয়সীরা তৃণমূলে আসছে।
অভিষেক যেভাবে দলকে সাংগঠনিক কাঠামো দিয়ে দাঁড় করানোর প্রক্রিয়া চালাচ্ছে; আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ও আবেগের মিশ্রণ ঘটাচ্ছে, খুবই ভালো।

কিন্তু একসময় যারা সিপিআইএম বা বামশিবিরে ছিল;
বুদ্ধবাবু যতদিন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, যারা অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার গঠনের ডাক দিয়ে পরিবর্তনের বিরোধিতা করেছিল;
যারা মমতাদি, তৃণমূল ও পরিবর্তনপন্থীদের বাপান্ত করত;
তারা যখন আজ ক্ষমতার কাছে থাকার লোভে মমতাদির বা দলের মঞ্চে বসে বড়বড় কথা বলে, তখন এইসব সুবিধেবাদীদের দেখলে গা গুলিয়ে ওঠে। বড় নাম হোক বা পাড়ার নেতা, এরা দলের সম্পদ নয়। এরা ইঁদুর, সভ্যতার শুরু থেকে এদের দুঃসময়ে জাহাজ বদলের রেকর্ড আছে।
এদের থেকে দলের ঢের উপকার হবে কিছু বিকল্প পদক্ষেপে। শুধু দলের আলোয় আলোকিত নেতা নন, দরকার এমন কিছু বিন্দু, যাঁরা নিজেরাও দলকে কিছু আলো দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন এবং যা পরীক্ষিত।

যদি কাজ, সরকারি পরিষেবার কথা বলেন, মমতাদির সরকার অনেক এগিয়ে।
কিন্তু কিছু ভাবনা, নীতি, পদক্ষেপে নন ইস্যু বড় হয়ে সাময়িক অস্বস্তির কাঁটা হচ্ছে। যেটা এড়ানো সম্ভব।

যদি এই মুহূর্তেও বলেন, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতাদির বা দল হিসেবে তৃণমূলের বিকল্প নেই।
আবার বলছি, কিছু ভুল, কিছু অন্যায় আছে। কিন্তু তার মানে এই নয় গোটা সিস্টেমটা র নেতৃত্ব দিতে বিকল্প কোনো দল বা মুখ প্রস্তুত।
মমতাদি দীর্ঘদিন বিরোধী রাজনীতি করে বাংলা চষে ফেলেছেন, বার দুই রেলমন্ত্রী হয়ে বিরাট প্রশাসন সামলেছেন; আজও তাঁর অভিজ্ঞতার ঝুলির কাছাকাছি এখানে কেউ নেই। এখনও তিনি যা পরিশ্রম করেন, তার অর্ধেক করলেই অনেকে ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়বেন। ফলে এই সরকারের নবছর পূর্ণ করে দশে পায়ের মুহূর্তে এটা বলাই যায় যে সরকার আছে এবং থাকবে। আর কিছু পদ্ধতি বা নীতিগত ভুল যদি সংশোধন করা যায়, তাহলে এই সরকারের প্রতি মানুষের যে অংশের একটু বিরক্তি বা ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, সেই ড্যামেজও কন্ট্রোল করা সম্ভব।

আমার কথা বলতে পারি, আমি পরিবর্তনের আন্দোলনের এক কঠিন দিনের সৈনিক। সিপিআইএমকে সরিয়ে মমতাদি ক্ষমতায় আসছেন, এমন গ্যারান্টি না পেয়েই যারা সঙ্গে ছিলেন, আমি তাদের একজন। পরে আমার সঙ্গে নির্দিষ্ট ইস্যুতে মতপার্থক্য থাকলেও আমি দল ছাড়া বা বদলের কথা ভাবিনি। বরং বন্দিদশার সময়ও দলকে সাংসদ হিসেবে আমার সদস্যপদের চাঁদা দিয়ে গিয়েছি। যে স্রোতটার কঠিন দিন থেকে সঙ্গে ছিলাম, হঠাৎ ছাড়ার কথা মনে আসেনি। এখনও পরিবর্তনের আন্দোলনের সময়ের বিভিন্ন ঘটনা মনে পড়লে রোমাঞ্চিত হই। ফলে, একটি ইস্যুতে আমি ভিন্নমত বলে সেই রাগে সরকারের ভালো কাজগুলোকেও খারাপ বলব, সেটা আমার দ্বারা হয়ে ওঠে না।

একাধিক আমলার সঙ্গে কথা হয়।
নবান্ন থেকে জেলা।
এক বিডিও বলছিলেন,” এই যে সি এম জেলায় মিটিংয়ে আসেন, আমাদের কাছে আতঙ্ক। কাজ এগিয়ে রাখতে হয়। ফলে আলটিমেটলি মানুষের লাভ। সব প্রকল্পে গতি বাড়ে। এটা কিন্তু এ রাজ্যে সত্যিই ভালো ফল দিচ্ছে।”

বড় শিল্পের ঘাটতি মমতাদি জানেন। সেজন্য বোধহয় আগে মানুষকে একটু রিলিফ দিতে জন্ম থেকে মৃত্যু, প্রতিটি পর্যায়ে সাহায্যের ব্যবস্থা করেছেন।
জঙ্গলমহল বা পাহাড়, বামজমানায় ভয়ানক হয়ে উঠেছিল, এখন পর্যটকরা শান্তিতে যান। আরও বহু পর্যটনকেন্দ্র চালু। এগুলো তো কর্মসংস্থান বাড়ায়। সরকারি আবাস আধুনিক হয়েছে। নতুন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, সেতু, উড়ালপুল হচ্ছে। গ্রামোন্নয়ন, স্বনির্ভরতাতেও বহু স্কিম। বাংলার প্রায় দশ কোটি নাগরিকের কাছেই কোনো না কোনো পরিষেবা দিচ্ছে সরকার।

আসলে এটা মমতাদির রাজনীতির ফোকাস আর প্রাইওরিটির ফল। তিনি মানুষের সঙ্গে চলেন, মানুষকে নিয়ে চলেন, ইমেজ কনশাস- তাই প্রথমেই চান মানুষের কষ্ট লাঘব হোক। সেই মানুষ সঙ্গে আসুন। যার জন্য কঠিন অপ্রিয় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত চট করে নিতে পারেন না তিনি। রেলমন্ত্রী থাকাকালীনও টিকিটের দাম বাড়াতে দেননি। বলেছেন বিকল্প আয় বাড়ুক। এই মডেল নিয়ে তর্ক করতে পারেন কিছু অর্থনীতিবিদ; কিন্তু বাস্তব হল আমাদের মত দেশে বহু মানুষকে সরকারি সাহায্য দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন মমতাদি। রাষ্ট্রের কর্তব্য গরিবের পাশা থাকা, এই থিওরি মমতাদি কার্যকর করে দেখিয়েছেন।

মমতাদির জনসংযোগ ও মিডিয়ানীতি চিরকাল তাৎপর্যপূর্ণ। তবে এখন মিডিয়ার ক্ষেত্রে মন থেকে সমর্থনের জায়গাটা কম। সবটাই বাণিজ্যিক। বিজ্ঞাপন তাই গুণগান। বিজ্ঞাপন বন্ধ হলে কার কী রূপ হবে, মমতাদির প্রতি কার কত প্রেম থাকবে, বোধ করি লিখে বোঝাতে হবে না। এই জায়গাটাতেও দলের উপযুক্ত নীতি দরকার।

বিরোধী রাজনীতি একরকম।
শাসকের ভূমিকা আরেকরকম।
শাসক থাকলে শরীরে মেদ জমে, সকলকে সন্তুষ্ট করা যায় না, সংগঠন ঝাঁঝ হারিয়ে পুলিশপ্রশাসন নির্ভর হয়ে পড়ে।
বামেদের এর খেসারত দিতে হয়েছে।
ধাক্কা এত বড় যে নতুন প্রজন্ম হাল ধরার সুযোগ পাচ্ছে না।
তৃণমূলকে এখান থেকে শিক্ষা নেওয়ার সময় এসে গিয়েছে। দলের পক্ষে আশার কথা, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এবং পিকে-কে কাজে লাগিয়ে ” দিদিকে বলো”সহ এমন কিছু কর্মসূচি নিচ্ছেন, যাতে মানুষ আবার তৃণমূলমুখীই থাকছেন। সংগঠনেও মেদ ঝরানোর কাজ চলছে। তবে মমতাদি বা অভিষেককেও ভাবতে হবে, 2011র যুদ্ধে আসল রণকৌশলে যারা মূল এগারো দূরের কথা, রিজার্ভ বেঞ্চেও ছিল না; এখন সরকারি তকমার সূত্রে সেইসব প্লেয়ার বেশি খেলালে জেতা ম্যাচ না টাইব্রেকার পর্যন্ত গড়িয়ে যায়! এরা কিন্তু শূন্য থেকে উঠে এসে জয় দেখেনি। জয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে কথা বলাটাই এদের অভ্যেস। দল বাড়বেই, তবে, আদি তৃণমূল কর্মী বা দুঃসময়ের কর্মীদের দীর্ঘশ্বাস না বাড়ে, সেটা কিন্তু গুরুত্ব দিয়েই দেখা দরকার।

এমন একটা সময়ে নবছর পার করে দশে পা দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যখন এক কঠিন সময়।
একদিকে করোনা।
তার মধ্যেই সুপার সাইক্লোন আমপান।
সরকার, প্রশাসনের কাছে অগ্নিপরীক্ষা।
একদিকে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং; অন্যদিকে উপকূলবর্তী এলাকায় জরুরি ত্রাণশিবির।
দুদিক একসঙ্গে সামাল দেওয়া।
করোনা বা আমপান, কোনোটাই কারুর হাতে নয়। শুধু লড়াইয়ের অংশটা আমাদের।
মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রথম শপথ নেওয়ার এই তারিখটিতে মমতাদি চোয়াল শক্ত করে লড়তে তৈরি হচ্ছেন। চিরকাল সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দেন তিনি। এখনও নিশ্চিতভাবেই সেই প্রক্রিয়া শুরু। এই অগ্নিপরীক্ষাতেও সরকারকে কোমর বেঁধে মানুষের পাশে দাঁড় করাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।

কালিঘাটের টালির ঘর থেকে এক সাধারণ ঘরের যে তরুণীর উত্থান; যিনি পাড়ার দুধের ডিপোর দিদিমণির কাজও করেছেন; প্রভাবশালী বাড়ির মেয়ে বা বধূ না হয়েও নিজের ক্ষমতায় কয়েক দশক প্রাসঙ্গিক আছেন; দেশের রেলমন্ত্রী হয়েছেন; জনসমুদ্রে ঢেউ তুলেছেন; হাজার বিতর্ক সামলেও ভোটের সাফল্য ধরে রেখেছেন; এবং আজ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন;
তাঁর এই বিশেষ দিনটি অবশ্যই আলাদা বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে।
বছরের পর বছর যিনি হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালার দক্ষতায় জনতাকে নিয়ন্ত্রিত করেন, তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্বের দশম বর্ষ শুরুর মুহূর্তে এখন এটাই দেখার: জয় তিনি করেছেন। এখন জয়কে ধরে রাখা এবং সাফল্যকে আরও শীর্ষে নিয়ে যেতে তিনি কোন কোন পদক্ষেপ নেন।
2019-এর লোকসভা নির্বাচন যে ফাটল দেখিয়েছিল, এখন মেরামতপর্ব চলছে। কিছু সুফলও মিলেছে। মমতাদির পদক্ষেপগুলির দিকে আরও বেশি করে তাকিয়ে আছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা; কারণ, সামনে 2021, তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্বের নবীকরণের বছর।

spot_img

Related articles

ইমান বেচলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী: শিখ সম্প্রদায়ের অপমানে নীরব রবনিতকে প্রশ্ন তৃণমূলের

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবনিত সিং বিট্টু  শিখ সম্প্রদায়ের মানুষের সম্মানকে বাংলার বিজেপি নেতাদের সামনে বিক্রি করে দিলেন। নরেন্দ্র মোদির...

আইনি জটিলতা কাটিয়ে স্নাতকের মেধাতালিকা প্রকাশ, শুরু হচ্ছে ভর্তি: জানালেন শিক্ষামন্ত্রী

আইনি জটিলতা কাটিয়ে স্নাতকস্তরে প্রকাশিত হল অনলাইনে পোর্টালে ভর্তির ফলাফল। শুক্রবার ফল (Result) প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই ভর্তি প্রক্রিয়া...

কিছু হাই কোর্টের বিচারপতির কর্তব্যবোধ কম পড়ছে: মত সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির

একাধিক হাই কোর্টের বিচারপতিদের স্বরূপ বাংলায় অনেক আগেই খুলে গিয়েছে, যখন হাই কোর্টের বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে...

মোদিজি আসুন বাংলার উন্নয়ন দেখে যান: কটাক্ষ চন্দ্রিমার

“ছাব্বিশের নির্বাচনের আগে আবার আসতে শুরু করেছেন। এবার থেমে থাকুন দাদা।“ নাম না করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কড়া...