শুভেন্দু অধিকারীকে ঘিরে জল্পনা যখন মধ্যগগণে, তখনই ইঙ্গিতপূর্ণ এক পোস্ট করে শিরোনামে চলে এলেন কোচবিহার দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক মিহির গোস্বামী৷

এক ফেসবুক পোস্টে হঠাৎই তিনি জানিয়েছেন, “প্রতিশোধ নেওয়ার চেয়ে রাস্তা বদলে ফেলা ভালো”৷ জল্পনা শুরু হয়েছে, মিহির গোস্বামী ‘রাস্তা বদলে ফেলা’ বলতে ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন! তিনি বিজেপিতেই যাচ্ছেন, এমন ইঙ্গিতই কি দিলেন এই তৃণমূল বিধায়ক?

বেশ কিছুদিন ধরেই মিহির গোস্বামী নানা কথা বলছেন, নানা কাজ করছেন, যার একটিও তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে যায়নি৷ তিনি নিজে এখনও পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে মুখ না খুললেও জল্পনা তৈরি হয়েছে, মিহির গোস্বামী কি তাহলে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন?

দলীয় পদ হারানোর পর মিহিরবাবু নিজের কার্যালয় থেকে সরিয়েছেন দলের পতাকা, দলের সাইন-বোর্ড৷ কার্যালয়ের দেওয়াল থেকে সরেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ সব নেতা- নেত্রীদের ছবি৷ তোপ দেগেছেন প্রশান্ত কিশোরের দিকে৷ নাম না করে পিকে’র উদ্দেশ্যেই তিনি বলেছেন, “কোনও ঠিকাদারি সংস্থাকে দিয়ে সংগঠন চাঙ্গা করা যায় না।’

কোচবিহারজুড়ে তখন থেকেই জোর গুঞ্জন, বিজেপি-তে যোগ দিতে চলেছেন তৃণমূল বিধায়ক মিহির গোস্বামী৷ তাঁর সঙ্গে ইতিমধ্যেই নাকি গেরুয়া শিবিরের একাধিক হেভিওয়েটের সঙ্গে কথাবার্তা চূড়ান্ত হয়েছে৷ এবং এই কারনেই দিনকয়েক আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের তৃণমূল নেতাদের বৈঠকের দিন সব বিধায়ক, নেতা উপস্থিত থাকলেও অনুপস্থিত ছিলেন মিহির গোস্বামী। উল্টে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলেন, “ঠিকাদার নিয়োগ করে কখনই সংগঠন শক্তিশালী হয় না৷ দলের সংগঠন চলে নেতা ও কর্মীদের মিলিত সিদ্ধান্তে। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক নেতা বা কর্মীকে ঠিকাদারি সংস্থার মাইনে করা লোকেদের নির্দেশ মেনে কাজ করতে হবে কেন ?” রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, মিহির গোস্বামী’র এই ধরনের মন্তব্যেই প্রমাণিত তৃণমূলের সাথে ওনার আর বনিবনা চলছে না। বিজেপিতে যোগ দেওয়া ঠিকঠাক হয়ে গিয়েছে বলেই মিহিরবাবু এ ধরনের মন্তব্য করার সাহস পেয়েছেন৷ তাঁর কার্যালয়ের সামনেও নতুন ব্যানার লাগানো হয়েছে৷ তাতে লেখা, ‘কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক মিহির গোস্বামীর কার্যালয়’। তৃণমূলের কথা বা প্রতীক, কিছুই নেই৷

অক্টোবরের ৩ তারিখে দলের সব পদ থেকেই ইস্তফা দিয়েছেন কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের এই বিধায়ক। জেলা সংগঠনে তাঁকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলেই ক্ষোভ রয়েছে তাঁর। সেই ক্ষোভের জেরেই তিনি বিজেপিমুখী হচ্ছেন বলে গুঞ্জন৷

গুঞ্জন আরও পোক্ত হয়, বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামানিক তাঁর বাড়িতে গিয়ে দীর্ঘ সময় কাটানোর পর৷ ওদিকে নিশীথের সঙ্গে সাক্ষাতের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মিহির গোস্বামীর বাড়িতে যান রাজ্যের দুই মন্ত্রী, রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এবং বিনয়কৃষ্ণ বর্মন৷ যদিও মিহিরবাবু তখন বাড়িতে ছিলেন না৷ বাড়ি থেকে জানতে পারেন মিহির গিয়েছেন. আলিপুরদুয়ারে তাঁর বোনের বাড়িতে৷ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আলিপুরদুয়ারেও যান দুই মন্ত্রী । সেখানেও তাঁর দেখা পাননি তাঁরা৷ তিনি নাকি ততক্ষণে অসমে অন্য বোনের বাড়ি রওনা দিয়েছেন ।

সম্প্রতি তৃণমূলের কোচবিহার জেলা ও ব্লক কমিটির তালিকা প্রকাশ হতেই ক্ষোভ দেখা দেয় দলের একাংশের মধ্যে । ক্ষোভ প্রকাশ করে দলের বিভিন্ন সাংগঠনিক পদ থেকে ইস্তফা দেন বিধায়ক মিহির গোস্বামী । এরপর থেকেই তিনি বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন বলে জল্পনা শুরু হয় ।বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক বিক্ষুব্ধ বিধায়ক মিহির গোস্বামীর সঙ্গে দেখা করলে জল্পনা আরও বাড়ে৷

আর এই জল্পনাতেই ঘি ঢেলেছেন মিহির গোস্বামী নিজেই৷ আলোচ্য পোস্টে মিহির গোস্বামী লিখেছেন, “তর্কের চেয়ে নীরবতা ভালো৷ প্রতিশোধ নেওয়ার চেয়ে রাস্তা বদলে ফেলা ভালো৷ আর স্বার্থপর মানুষের পাশে চলার চেয়ে, একা চলা অনেক ভালো”৷

মিহির গোস্বামীর ওই ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট নজরে আসার পর জেলা তথা রাজ্যস্তরের তৃণমূল কংগ্রেসে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে৷ তাহলে কি মিহির গোস্বামী “স্বার্থপর মানুষের পাশে চলার চেয়ে, একা চলাকেই অনেক ভালো” বলে মনে করছেন ? না’কি, প্রতিশোধ না নিয়ে রাস্তা বদলের ‘ভালো’ পথে হেঁটেই এই তৃণমূল বিধায়ক পৌঁছে যাচ্ছেন গেরুয়া শিবিরে ৷

জল্পনা এই মুহুর্তে তুঙ্গে৷

আরও পড়ুন-Shuvendu update : এ পাশে ব্যানার, ও পাশে অখিল গিরি, কাঁথি জমজমাট
