Monday, November 10, 2025

সিঙ্গুরে ডাকাত-কালীর পুজোয় এখনও চলে শতাব্দী প্রাচীন রীতি

Date:

Share post:

কেউ বলে ৫০০ বছর। আবার কারো মতে ৩০০ বছর। এই কালীর বয়স নিয়ে ভিন্ন মত দীর্ঘদিনের। বহু বছর আগের কথা। হুগলির (Hoogli) সিঙ্গুরে তখনও তেমন একটা জনপদ গড়ে ওঠেনি। ঘন জঙ্গলে ঘেরা ছিল গোটা এলাকা। দিনের বেলাতেও এই পথ দিয়ে যেতে ভয় পেত মানুষ। তখন ঘন জঙ্গলের মধ‍্যে ছিল ডাকাতদের আস্তানা। তবে এই পুজোকে কেন্দ্র করে নানা কাহিনী প্রচারিত আছে। একদিন অসুস্থ রামকৃষ্ণ দেবকে দেখতে মা সারদাদেবী কামারপুকুর থেকে সিঙ্গুর হয়ে দক্ষিণেশ্বর যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে একটু পিছিয়ে পড়েছিলেন তিনি। সেই সুযোগে ডাকাত দল মা সারদাকে আটক করে। কথিত আছে তখনই মা সারদার পিছনে দর্শন দেন স্বয়ং মা কালী। তাই দেখে অপরাধ বুঝতে পেরে সারদাদেবীর পা ধরে কাঁদতে শুরু করে ডাকাতরা। রাত অনেক হয়ে যাওয়ায় ওই দিন পুরুষোত্তম পুরেই রাতে থাকেন মা সারদা। রাতে তাঁকে খেতে দেওয়া হয় চাল-কড়াই ভাজা। পরের দিন ডাকাতরাই তাঁকে দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুর রামকৃষ্ণের কাছে পৌঁছে দেন। কেউ বলে গগন ডাকাত। আবার কারো মতে বিশে ডাকাতের দল তখন এই অঞ্চলের ত্রাস ছিল।

কথিত আছে, চালকেবাটী গ্রামের মোড়ল চাষের সামগ্রী নিয়ে হাটে যাওয়ার সময় সিঙ্গুরের পথে ক্লান্ত হয়ে গাছের তলায় ঘুমিয়ে পড়েন। তখন মা কালী তাঁকে স্বপ্নাদেশ দেন ঐ স্থানে মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে। পরে তিনি এক চালার ছোট মন্দির তৈরি করে দেন।মন্দির তো হল, পুজো কে করবে, কীভাবে চলবে পুজোর খরচ? , বর্ধমানের রাজা স্বপ্নাদেশ পেয়ে মায়ের পুজোর জন‍্য জমি দান করেন। সেবাইতও রাখা হয়। সেই সেবাইতের বংশধরেরা এখনও পুজো চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রথম থেকেই পুজোয় ভোগ দেওয়া হয় চাল-কড়াই ভাজা আর কারণ দিয়ে। শুরুতে ছাগ বলি দেন সেবাইত ও রাজার প্রতিনিধিরা। পরে হয় অন‍্যদের মানসিক বলি। কথিত আছে, সেই সময় ডাকাতি করতে যাওয়ার অনুমতির জন‍্য পুজো-যজ্ঞ চলত। ঘটের উপর মায়ের পায়ের ফুল না পড়া পর্য‍ন্ত চলত পুজো। তাতে কাজ না হলে নরবলিও দেওয়া হত। বহু বছর ধরে সিঙ্গুরের এই কালী ডাকাত কালী নামেই পরিচিত।

আরও পড়ুন:খেলরত্ন নয়, অর্জুন পুরস্কার চাইছেন রবি, জানালেন ফেডারেশনের এক কর্তা

এখন মন্দির প্রাঙ্গন ঝাঁ চকচকে। সারা বছর প্রচুর ভক্ত সমাগম হয়। এই মন্দিরে মা কালীর কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রাচীন রীতি মেনে আজও এই প্রতিমার কোনও পরিবর্তন হয়না। চার বছর পর নবকলেবর হয়। তখন মূর্তি সংস্কার করা হয়। সারা বছর তামার ঘটের জল পাল্টানো হয় না। পুজোর দিন বর্গক্ষত্রিয় পরিবারের সদস‍্যরা গঙ্গা থেকে জল এনে দেন। তখন ঘট পরিবর্তন করা হয়। তখন মন্দিরে কোন মহিলার প্রবেশ নিষিদ্ধ। পুজোর নদিন আগে থেকে শুরু হয় চণ্ডীপাঠ।

 

spot_img

Related articles

ধর্মীয় বই কিনতে গিয়ে ২ কোটি টাকার প্রতারণার ফাঁদে কলকাতা ইসকন! গ্রেফতার ১ 

ধর্মীয় বই কেনার অর্ডার দিতে গিয়ে প্রায় ২ কোটি টাকার প্রতারণার শিকার হল কলকাতা ইসকন। অভিযোগ, অর্ডার অনুযায়ী...

বিশ্বকাপজয়ী মেয়ের সৌজন্যে হারানো পুলিশের চাকরি ফিরে পাচ্ছেন বাবা

কয়েকদিন আগেই আইসিসি একদিনের বিশ্বকাপ(ICC World Cup)  জিতেছে ভারতীয়  মহিলা দল। মেয়েদের সাফল্যে গর্বিত মা-বাবারা। তবে বিশ্বকাপজয়ী মেয়ের...

গ্যাস-সমস্যায় নিঃশ্বাসের পরীক্ষা: যুগান্তকারী আবিষ্কারে বিশ্বে স্বীকৃতি বাঁকুড়ার চিকিৎসকের

একটি সাধারণ সমস্যা, যাতে জর্জরিত বর্তমান যুবসমাজ থেকে শিশুরা পর্যন্ত। গ্যাস বা গ্যাসট্রাইটিসের মতো সমস্যা নির্ধারণ করার জন্য...

একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগে বাড়তে পারে আসন সংখ্যা, জানালো এসএসসি 

রাজ্যের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের ফলাফল ইতিমধ্যেই প্রকাশ করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। প্রকাশিত ফল অনুযায়ী,...