Monday, May 5, 2025

Biresh Chandra Guha: ভারতে জৈবপ্রযুক্তি বিদ্যার জনক বীরেশচন্দ্র গুহ

Date:

Share post:

ভাস্কর ভট্টাচার্য: কলকাতায় তাঁর (Biresh Chandra Guha) নামে একটি রাজপথ আছে। তাঁর উদ্যোগেই ভারতে প্রথম প্রাণ রসায়ন বিদ্যা ও জৈবপ্রযুক্তি বিদ্যার দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছিল বলে বলা হয়। তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টাতেই কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হয়েছিল জৈব রসায়নের দু’বছরের স্নাতকোত্তর কোর্স। এই বিজ্ঞানীই (Biresh Chandra Guha) আবার ১৯৪৩ এর দুর্ভিক্ষের কালে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন গরিব মানুষের সেবায়। ঘাসপাতা থেকে প্রোটিন বিশ্লেষণের গবেষণা করে সন্ধান করেছিলেন মানুষের খাদ্যে উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের।

আরও পড়ুন-Oranges : সৌন্দর্যের সব সমাধানই কমলালেবু!

‘ভিটামিন সি’ বিষয়ে গবেষণায় নিমগ্ন ছিলেন। বেশ কিছুকাল ধরে নিয়াসিন, ভিটামিন ও ভিটামিন সি নিয়ে গবেষণা চালিয়েছিলেন। যার বৈজ্ঞানিক নাম ‘অ্যাসকরবিক’ অ্যাসিড। এই ভিটামিন সি’র অভাবেই হত স্কার্বি রোগ। ভিটামিন সি-র মলিকিউলার ফরমুলা হল C6H8O6. আজ এই মুহূর্তে করোনা সময়ে ভিটামিন সি যে কত প্রয়োজনীয় তা আর নতুন করে বলতে হয় না। যদিও দুই বিজ্ঞানী এডমন্ড হার্সট ও রসায়নবিদ ওয়াল্টার নরম্যান এর হাতেই আবিষ্কৃত হয়ে নাম হয়েছিল ‘অ্যাসকরবিক অ্যাসিড’। ভারত তখনও বিজ্ঞানে ততটা উন্নত নয়, হলে হয়তো বাঙালি বিজ্ঞানীর কপালেও জয় তিলক পড়ত। এই বাঙালি বিজ্ঞানীর নাম বীরেশচন্দ্র গুহ। পার্কসার্কাস পেরিয়ে অদূরে আজও জ্বলজ্বল করছে বীরেশ গুহ রোড।

বীরেশচন্দ্রের মামা ছিলেন শিক্ষাব্রতী সমাজ সংস্কারক অশ্বিনীকুমার দত্ত। বাংলার বিপ্লবী জীবনের এক পরিচিত নাম। স্বাভাবিক ভাবেই বীরেশচন্দ্রের রক্তেও দেশপ্রেমের প্রেরণা। তাই তো এই বিজ্ঞানীকে স্নাতকস্তরে পড়ার সময় তখনকার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে নাম কেটে দেন তৎকালীন কর্তৃপক্ষ। বিপ্লবী নিষিদ্ধ পত্রিকায় প্রবন্ধ লেখার জন্য। প্রেসিডেন্সি থেকে বিতাড়িত হয়ে ভর্তি হলেন এই মেধাবী ছাত্র সেন্ট জেভিয়ার্সে। বিএসসিতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম। এসএসসিতে রসায়নে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। এই সময়েই সান্নিধ্যে এলেন বাংলার আরেক গৌরবান্বিত বিজ্ঞানী প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের। তাঁর সঙ্গে কাজ করতে করতেই বৃত্তি পেয়ে চলে গেলেন ইংল্যান্ড। সেখানে মাস্টার হিসেবে পেলেন প্রথিতযথা গবেষক জ্যাক ডুমন্ড ও জৈব রসায়নের নোবেলজয়ী জন হপকিন্সকে। গবেষণা চললেও মন পড়ে দেশের মাটির জন্য। ডিএসসি করে ফিরে এলেন দেশে। তাঁকে কাজে লাগাবার মতো চাকরি নেই ভারতে। তাঁর জন্য নতুন পদ তৈরি হল, ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ’ নামক প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু সেখানে কাজ করা হয়নি। এই বিজ্ঞানীকে ডেকে নিলেন আরেক বিজ্ঞানী বেঙ্গল কেমিক্যালের প্রতিষ্ঠাতা প্রফুল্লচন্দ্র রায়। বললেন, ‘‘আমার এখানে আপনি ভিটামিনের ওপর গবেষণা করুন।” সঙ্গে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি করলেন জৈব রসায়নের স্নাতকোত্তর শিক্ষা। মন ভরল না। আবার ছুটলেন বিদেশ। সেখানে রসায়নের বৃহৎ কর্মকাণ্ড। লন্ডন সহ বিভিন্ন দেশে ঘুরে ঘুরে দেখলেন, জানলেন সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমন ভাবে পড়ানো হয়। আয়ত্ত করে ফিরলেন দেশে। সেই সঙ্গে গবেষণা করলেন মানব শরীরে যকৃতের মধ্যে ভিটামিন বি-২ এর অস্তিত্ব এবং ফলাফল।

দেশে ফিরে দেশের নানা বিভাগে দায়িত্বপূর্ণ কাজ করেছেন নানা সময়ে। ভারত সরকারের খাদ্য বিভাগে উপদেষ্টা হয়ে যোগ দিয়েছিলেন। খাদ্যপুষ্টিগুণ বা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের খাদ্যে প্রোটিন ভিটামিন বা খনিজ পদার্থ থাকাটা কত জরুরি। তাঁরই প্রয়াসে শুরু হয়েছিল ‘ফুড টেকনোলজি রিসার্চ ইনস্টিটিউট’। এ দেশে খাদ্য সংরক্ষণ ও টেকনোলজির সবটুকুই তাঁর অবদান। আধুনিক ভারতের মর্ডান বায়োলজিস্ট হিসেবে পূজ্য। অন্যদিকে আবার দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনেরও সদস্য হয়েছিলেন।

সব সময় চালিয়েছেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা। খুঁজেছেন মিষ্টি জলের মাছের সঙ্গে সামুদ্রিক মাছের খাদ্যের গুণাগুণ। এই গবেষণার মধ্যেও খুঁজেছেন কোন মাছে কতটা প্রোটিন বা খনিজ পদার্থ রয়েছে। তাঁর একটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার নিয়োসিয়াজেন। জৈব রসায়নে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

আরও পড়ুন-“রণক্লান্ত কংগ্রেস”, দলীয় মুখপত্রে ফের হাত শিবিরকে তোপ তৃণমূলের

দেশে বিদেশে জৈব রসায়নের ওপর অজস্র বক্তৃতা প্রদান বা প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এত সবের মধ্যেও দেশের প্রতি ছিল গভীর ভালবাসা। পরম ছাত্রদরদি আজীবন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসান্নিধ্যে কাটিয়েছেন। সঙ্গে পেয়েছিলেন ফুলরেণু গুহর মতো সমাজসেবী এবং মানবদরদি নেত্রীকে। তিনি বাংলার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও হয়েছিলেন। রাজনীতি থেকে সমাজসেবার যা কিছু কাজে এক সময় ফুলরেণু গুহর নাম সর্বজনবিদিত। বীরেশ গুহর মতো তাঁর সহধর্মিণীর নামেও নামকরণ করা হয়েছে একটি রাজপথের। ভারতের প্রাণ রসায়নের জনক বীরেশচন্দ্র গুহ জন্মেছিলেন ১৯০৪ সালের ৮ জুন অবিভক্ত ময়মনসিংহে। অধুনা বাংলা…

spot_img

Related articles

চেনা মেজাজে মুখ্যমন্ত্রী, বহরমপুরে আচমকা ঢুকলেন প্রতিমাশিল্পীর বাড়ি

জনসংযোগ জননেত্রীর। বালিগঞ্জ হোক কিংবা বহরমপুর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব জায়গাতেই মিশে যান মানুষের ভিড়ে। মানুষের ঘরে। হ্যাঁ, ঘরে।...

পিএফ বঞ্চনার প্রতিবাদ! চা-বাগান মালিকদের বিরুদ্ধে বড় লড়াইয়ের ডাক আইএনটিটিইউসির

চা-বাগানের শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিএফ) বঞ্চনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে শিলিগুড়ি পিএফ অফিসের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে অংশ নিলেন...

টুটুকে নিয়ে মিলল না সমাধান, ফের হবে বৈঠক

টুটু বোসের(Tutu Bose) পদত্যাগ গ্রহনের সিদ্ধান্ত ঝুলেই রইল। সোমবারের বৈঠকেও মিলল না সমাধান। পরের সপ্তাহে ফের মোহনবাগানের(Mohunbagan) কার্যকরী...

সিনেমায় কোপ! ট্রাম্পের নতুন ঘোষণায় চিন্তায় ভারতের প্রযোজকরা

ট্রাম্পের শুল্কের বন্যায় অস্থির বিশ্ব। চিনের উপর আবার অতিরিক্ত শুল্ক। এবার বিনোদন ক্ষেত্রকেও চড়া শুল্কের আওতায় আনলেন মার্কিন...