ঘটনা প্রকাশ্যে আসার ২৪ ঘন্টার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) নির্দেশ দেগঙ্গার(Deganga) ৫ মৃতের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য ও কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেওয়া হল। বিজেপি শাসিত কর্ণাটকে কাজ করতে গিয়ে বিষাক্ত গ্যাসে মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। এদের মধ্যে দেগঙ্গা বিধানসভা এলাকায় ৩ জন ও হাড়োয়া বিধানসভা এলাকার ২ জন। মঙ্গলবার বারাসাতে উত্তর ২৪ পরগনার জেলা শাসকের দপ্তরে এই ৫ পরিবারের হাতে ২ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য তুলে দিলেন রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক(Jyatipriyo Mallik) সহ অন্যরা।

এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা, বারাসাত পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায়, হাড়োয়ার বিধায়ক নুরুল হাজি, দেগঙ্গার বিধায়ক রহিমা মন্ডল, জেলা পরিষদের সভাধিপতি বীনা মন্ডল, বন ও ভূমির কর্মাধ্যক্ষ একেএম ফারহাদ দেগঙ্গার তৃণমূল সভাপতি মিন্টু সাহাজি সহ দুই অতিরিক্ত জেলাশাসক। এদিন বনমন্ত্রী বলেন, ঈদের আগেই এই ঘটনা খুব দুর্ভাগ্যজনক। এটা রাজনীতি করার সময় নয়। রাজ্যের মানবিক মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জেলাশাসকের মাধ্যমে এই আর্থিক সাহায্য দেওয়া হল। পাশাপাশি বাংলা আবাস যোজনায় ওই ৫ পরিবারের জন্য ঘর বানিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়াও রাজ্য সরকারে যত প্রকল্প আছে পরিবারগুলি যাতে পায় তার ব্যবস্থা করা হবে। সেই সঙ্গে তাদের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করা হবে। যাতে পরিবারগুলির আগামীতে কোনও সমস্যা না হয়।

আরও পড়ুন:ত্রিপুরার মাফিয়ারাজ নিয়ে এবার মুখ খুললেন বিজেপিরই মন্ত্রী

জেলা শাসক সুমিত গুপ্তা জানান, এদিন ২টো নাগাদ ৩টি ও ৪টা নাগাদ বাকি ২টি দেহ দমদম এয়ারপোর্টে আসবে। সেখান থেকে প্রত্যেকের বাড়িতে যাতে সুষ্ঠুভাবে দেহগুলি পৌছায় তার ব্যবস্থা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। তৃণমূলের দেগঙ্গার ব্লক সভাপতি মিন্টু সাহাজি বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা দলগত ভাবে পরিবারগুলির পাশে সর্বদা থাকবো। যাতে তাদের কোন সমস্যা না হয়। এদিন এয়ারপোর্ট থেকে দেহগুলি নিয়ে বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক দেগঙ্গায় ফেরেন। পাশাপাশি রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষও দেগঙ্গায় গিয়ে পরিবারগুলির সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানান। খাদ্যমন্ত্রী জানান, মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশে পরিবারগুলি যাতে ঠিকঠাক রাজ্যের রেশনিং ব্যাবস্থার সুযোগ পায় তার জন্য সবরকম ব্যবস্থা করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৮ মাস আগে দেগঙ্গা থেকে কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালুরুতে কাজ করতে গিয়েছিল কয়েকজন যুবক। তাঁদের মধ্যে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন দেগঙ্গার ৫ জন যুবক। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতরা হলেন মহম্মদ সামিউল ইসলাম(১৭), মিরাজুল ইসলাম(১৯), নিজামুদ্দিন সাহজি(১৯), মহম্মদ ওমর ফারুক(২৯)ও সারাফাত আলি(২৮)। ম্যানহোল পরিষ্কার করতে নেমে বিষাক্ত গ্যাসের কারণে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে বলেই পরিবার সূত্রে দাবি করা হয়েছে। গুরুতর জখম আরও ৩ জন। এদের মধ্যে ২ জন দেগঙ্গা এবং ১-জন শাসনের বাসিন্দা। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রবিবার রাতে পরিবারের কাছে এই খবর এসে পৌঁছায়। প্রশাসনের তরফে ইতিমধ্যেই মৃতদেহ দেগঙ্গায় ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রবিবার রাতে এই পাঁচ যুবকের পরিবারের কাছে তাঁদের মৃত্যুর খবর আসে। তাদের জানানো হয়, ম্যানহোল পরিষ্কার করতে নেমেছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। সেখানেই বিষাক্ত গ্যাসে দমবন্ধ হয়ে প্রাণ হারান ওই পাঁচ শ্রমিক। গুরুতর জখম হয়েছেন আরও চারজন। গুরুতর অবস্থায় তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মর্মান্তিক এই খবর দেগঙ্গায় পৌঁছাতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মৃতের পরিবার। এতবড় ঘটনা কিভাবে ঘটল, তা বুঝে উঠতে পারছেন না পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়রা। গত সোমবার মৃত শ্রমিকদের বাড়ি যান স্থানীয় জেলাপরিষদের সদস্য তথা বন এবং ভূমি কর্মাধ্যক্ষ একেএম ফারহাদ। পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার পাশাপাশি প্রশাসনিক সাহায্যের আশ্বাসও দেন তিনি। তারপরই আজ মঙ্গলবার বারাসাত জেলা শাসকের দপ্তরে বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও অন্যান্যদের উপস্থিতিতে মৃত পরিবারের হাতে দু লক্ষ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়।
