Thursday, August 28, 2025

নির্ভয়ে শান্তিতে বাঁচার অধিকার ফিরিয়ে দাও আমায়: দোষীদের মুক্তির পর আর্জি বিলকিস বানোর

Date:

Share post:

বিলকিস বানো(Bilkis Banu) গণধ*র্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া ১১ জনকে মুক্তি দিয়েছে গুজরাট সরকার। এই ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অপরাধীদের মুক্তিতে আতঙ্কিত বিলকিস ও তাঁর পরিবার। আর সেই আতঙ্কই প্রথমবার ফুটে উঠল আক্রান্তের আর্তিতে। রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে সরব হয়ে এবার বিলকিস বললেন, “নির্ভয়ে শান্তিতে বাঁচার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হোক আমায়।”

এদিন সংবাদমাধ্যমকে বিলকিস বানো বলেন, “দুদিন আগে গত ১৫ অগাস্ট বিগত ২০ বছরের যন্ত্রণা আমার জীবনে নতুন করে ফিরে এসেছে। যখন আমি শুনলাম ১১ জন অপরাধী যারা আমার পরিবার ও আমার জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে, আমার তিন বছরের মেয়েকে আমার থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে, তারা মুক্তি পেয়েছে। কিছু বলার মত শব্দ আমার কাছে নেই। আমি স্তব্ধ। আমি শুধু এটাই বলতে পারি কোনও মহিলার জন্য ন্যায় এভাবে কীকরে শেষ হতে পারে? আমি আমার দেশের শীর্ষ আদালতকে ভরসা করেছিলাম। দেশের রাষ্ট্রশক্তিকে ভরসা করেছিলাম এবং ধীরে ধীরে এই যন্ত্রণার অভ্যাস করে নিচ্ছিলাম।”

একইসঙ্গে বানো বলেন, “এই অপরাধীদের মুক্তি আমার জীবনের শান্তি আবার কেড়ে নিয়েছে। ন্যায়ের প্রতি আমার বিশ্বাসকে নাড়িয়ে দিয়েছে। আমার দুঃখ এবং এই হতাশা শুধু আমার জন্য নয় বরং সেই প্রতিটি মহিলার জন্য যারা আদালতে ন্যায়ের জন্য সংঘর্ষ করছেন।” এরপর যন্ত্রনাবিদ্ধ কন্ঠে তিনি বলেন, “এত বড় অন্যায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কেউ আমার সুরক্ষা ও ভালোর বিষয়ে কেউ ভাবেনি। আমি গুজরাট সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি তারা যেন এই সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেয়। নির্ভয়ে শান্তিতে বাঁচার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হোক আমায়।”

আরও পড়ুন- অর্পিতার পর পার্থকে টানা জেরা ইডির, সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে চলল জেরা

উল্লেখ্য, ২০০২ সালে গোধরায় সবরমতী এক্সপ্রেসে অগ্নিকাণ্ডের পর গুজরাট জুড়ে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়ায়। এই পরিস্থিতিতে পরিবারের ১৫ সদস্যসহ পালিয়ে যাচ্ছিলেন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিস। তবে পথেই তাদের ওপর তলোয়ার কাছ থেকে লাঠি সহ চড়াও হয় ২০ থেকে ৩০ জনের একটি দল। গণধর্ষণ করা হয় বিলকিসকে। তাঁর চোখের সামনে পরিবারের সাত সদস্যকে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরে সমাজকর্মীদের তৎপরতায় বিক্ষোভ শুরু হলে ২০০৪ সালে ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। শুরুতে আমেদাবাদে শুনানি শুরু হলেও পরে মামলা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় মুম্বইয়ে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হওয়া ১১ জনকে ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি গণধর্ষণ ও ৭ খুনের ঘটনায় এই ১১ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল মুম্বইয়ের বিশেষ সিবিআই আদালত। পরে বম্বে হাইকোর্ট সেই সাজা বহাল রাখে। তবে ততদিনে এই ১১ জন অপরাধী ১৫ বছর জেল খেটেছে। তাদেরই মধ্যে একজন সুপ্রিম কোর্টের সাজা মুকুবের আবেদন জানায়। গুজরাট সরকারকে বিষয়টি বিবেচনা করে দেখার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সেইমতো এই ১১ জনের সাজা মুকুব করার সিদ্ধান্ত নেয় গুজরাট সরকার। গত রবিবার মুক্তিপ্রদানের নির্দেশপত্র হাতে আসার পর সোমবার জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয় তাদের।

আরও পড়ুন- ইস্টবেঙ্গল সংগ্রহশালার উদ্বোধনে মুখ‍্যমন্ত্রী মমতা বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়, একনজরে লাল-হলুদের কিছু মুহূর্ত

 

spot_img

Related articles

উন্মুক্ত শৌচমুক্ত ৯৪ পুরসভা, স্বচ্ছতার শংসাপত্র বাংলাকে

শহরাঞ্চলে আর খোলা শৌচের দৃশ্য নেই। পুরসভাগুলির উদ্যোগ এবং পুর দফতরের তদারকিতে উন্মুক্ত শৌচমুক্ত হয়েছে কলকাতা সহ রাজ্যের...

ফাঁকা কেন্দ্রগুলিতে দ্রুত ইআরও–এইআরও নিয়োগের নির্দেশ কমিশনের 

ফাঁকা পড়ে থাকা একাধিক বিধানসভা কেন্দ্রে দ্রুত ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন আধিকারিক (ইআরও) এবং অ্যাসিসটেন্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন আধিকারিক (এইআরও) নিয়োগের...

নথিভুক্ত অথচ নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলিকে শুনানিতে তলব করল কমিশন 

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ফের সক্রিয় হল রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর। নথিভুক্ত হলেও কার্যত নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলিকে শুনানিতে...

সুখবর! পুজোর আগে পার্ট টাইম কর্মীদের বেতন বাড়াল রাজ্য 

পুজোর আগে রাজ্যের আংশিক সময়ের কর্মীদের জন্য বড় সুখবর দিল নবান্ন। বিভিন্ন দফতর ও সরকার অধীনস্থ সংস্থায় কর্মরত...