ফিফা বর্ষসেরা গোলের লড়াইয়ে রিচার্লিসন, পায়েতদের  চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন প্রতিবন্ধী ওলেকসি

আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি জুরিখে পুসকাস অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা করবে ফিফা। সেরা তিনজন উপস্থিত থাকবেন পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে।

কাতার বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে সার্বিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিলের রিচার্লিসনের বাইসাইকেল কিকের দুর্দান্ত চোখ জুড়ানো গোলটি এখনও ফুটবলপ্রেমীদের স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে। এবারের বিশ্বকাপের সেরা গোলের স্বীকৃতিও পেয়েছে এটি। কিন্তু জানলে অবাক হবেন, বিশ্বকাপ মাতানো সেই গোলকে বর্ষসেরা (ফিফা পুসকাস অ্যাওয়ার্ড) গোলের লড়াইয়ে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন একজন এক প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়। মার্সিন ওলেকসি নামের পোল্যান্ডের এই ফুটবলার অ্যাম্পিউটি ফুটবলে খেলেন।

এই ফুটবলার ক্রাচে ভর করে মাঠে দাপিয়ে বেড়ান, কিন্তু বল খেলেন এক পা দিয়ে।৩৬ বছর বয়সী ওলেকসি পোল্যান্ডের অ্যাম্প ফুটবল দল ওয়ার্তা পোজনায় হয়ে খেলেন। গত ৭ নভেম্বর ঘরোয়া টুর্নামেন্টে স্তিল সেজজোর বিপক্ষে বাইসাইকেল কিকে দুর্দান্ত এক গোল করেন। সেই গোলটি ২০২২ সালের ফিফা পুসকাস অ্যাওয়ার্ডের সেরা তিনে জায়গা করে নিয়েছে। বাকি দুটি গোলের মধ্যে একটি রিচার্লিসনের, অন্যটি ইউরোপা কনফারেনস লিগে থিসালোনিকির বিপক্ষে করা মার্শেইয়ের দিমিত্রি পায়েতের গোল।

 

অ্যাম্প ফুটবলের কোনও গোল এই প্রথম ফিফার বর্ষসেরা গোলের তালিকায় মনোনয়ন পেল।বিশ্বকাপের বছরের জন্য মোট ১১টি গোল ফিফার মনোনয়ন পেয়েছিল। এর মধ্যে নারী ফুটবলার ছিলেন তিনজন। ওলেকসি ছাড়া সবাই সুস্থ ও স্বাভাবিক খেলোয়াড়।গত ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলা ভোটের ভিত্তিতে সেরা তিন গোল নির্বাচিত হয়েছে। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি জুরিখে পুসকাস অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা করবে ফিফা। সেরা তিনজন উপস্থিত থাকবেন পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে।

জেনে আরও আশ্চর্য হবেন, একসময় রিচার্লিসন, পায়েতদের মতো সুস্থ–স্বাভাবিক জীবনযাপন করতেন তিনি । গোলরক্ষক হিসেবে পোল্যান্ডের তৃতীয় ও চতুর্থ ডিভিসনের প্রতিযোগিতাতেও খেলেছেন। কিন্তু ২০১০ সালের সড়ক দুর্ঘটনা তার জীবনের গতিকে অন্যখাতে বভয়ে দেয়। তিনি নিজেই জানিয়েছেন, রাস্তার পাশে কাজ করছিলেন। হঠাৎই দ্রুতগতিতে যাওয়া একটি গাড়ি তাঁকে ধাক্কা দেয়। একটি পা কেটে বাদ দিতে হয় ওলেকসির।

তিনি আরও জানিয়েছেন, মনের জোর আর স্বজনদের সহায়তায় এক পা নিয়েই আবার ফুটবলে ফিরেছিলেন ওলেকসি। একটি ফুটবল স্কুলে কোচিং করাতেন। কিন্তু না খেলতে পারার কষ্ট তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াত।২০১৯ সালে অ্যাম্প ফুটবল খেলা শুরু করেন। মাত্র ২ বছরের মধ্যে পোল্যান্ডের ঘরোয়া ফুটবল মরসুমের ‘সেরা আবিষ্কারে’র স্বীকৃতি পান। গত বছর ডাক পান পোল্যান্ডের অ্যাম্পিউটি জাতীয় দলে। তুরস্কের মাটিতে খেলেন বিশ্বকাপও।এবার পেলেন ফিফার পুসকাস অ্যাওয়ার্ডে মনোনয়ন। -পুরস্কারের অন্যতম দাবিদার ওলেকসি বলেছেন , বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে ফিফা পুরস্কারে আমার নাম আছে। কেমন যেন ঘোর ঘোর লাগছে। অ্যাম্প ফুটবল আমাকে শুধু ফুটবলই ফিরিয়ে দেয়নি, দ্বিতীয় জীবনও দিয়েছে। ফুটবল সব সময়ই আমার ভালোবাসার জায়গা ছিল। এখন শুধু খেলছিই না, পোল্যান্ড জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্বও করছি। যে স্বপ্নটা আমি সব সময়ই দেখেছি। অ্যাম্প ফুটবলকে আমি ধন্যবাদ জানাই, এই খেলা দেখিয়েছে প্রতিবন্ধকতা বলে কিছু নেই।