কর্নাটকে ভোট প্রচারে খামতি রাখেনি গেরুয়া শিবির। বিধানসভা নির্বাচনের আগে একাধিকবার কন্নড়ভূমে উড়ে গিয়েছেন মোদি-শাহ। রোড শো থেকে শুরু করে পোস্টার, ব্যানারে ছয়লাপ করে দিয়েছে বিজেপি। তাও কর্নাটকের মানুষের কাছে গোহারা হেরেছে বিজেপি। বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়েছে কংগ্রেস। এরপরই অস্বস্তি বেড়েছে বিজেপিতে। এই পরিস্থিতিতেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গড়করির মন্তব্য, ‘পোস্টার, ব্যানার দেখিয়ে ভোট পাওয়া যায় না। মানুষের মন পেতে হলে জনসেবা করতে হয়।’ এই মন্তব্যে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। কার উদ্দেশে একথা বললেন নীতিন গড়করি?
আরও পড়ুন:বড় চমক মোহনবাগানের, সবুজ-মেরুন ক্লাবে আসছেন বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক মার্টিনেজ
ভোটমুখী রাজস্থানের শিকার জেলায় এক অনুষ্ঠানে বলা গড়করির এই মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, কাকে বা কাদের উদ্দেশে এই কথা বলতে চেয়েছেন নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভার এই সদস্য তথা প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি গড়করি। কর্নাটক নির্বাচনে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে বিজেপি। গতবারের তুলনায় ৩৮ আসন কম পেয়েছে তারা। সেখানে বিজেপির প্রচারের বড় মুখ ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কর্নাটকের ভোটের ফল প্রকাশের দু’দিনের মাথায় গড়করির এই মন্তব্যের উদ্দেশ্য বিজেপিতে অন্তর্দ্বন্দ প্রকাশ্যে। এমনিতেই মজার ছলে ইঙ্গিতপূর্ণ রাজনৈতিক কথা বলাতে বেশ নামডাক আছে গড়করির। আবার আর এক প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি ভেঙ্কাইয়া নায়ডুর মতো গড়করিও রাজনীতিতে ব্যক্তিগত আক্রমণ, আত্মপ্রচারের তীব্র বিরোধী। ধর্মীয় বিভেদ বিচ্ছেদের রাজনীতিতেও তিনি সুর মেলান না কখনও। আবার তিনি একমাত্র কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যাঁর বিরুদ্ধে বিরোধীরা পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলেন কখনও। সব মিলিয়ে মোদি-শাহ জমানার চলতি ঘরানার বিপরীতের মানুষ তিনি। সেই কারণেও তাঁর কথা বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
সোমবার কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী রাজস্থানের শিকার জেলায় প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি প্রয়াত ভৈঁরো সিং শেখাওয়াতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। শেখাওয়াত রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী এবং সজ্জন নেতা হিসাবে সব দলের কাছে সম্মানীয় রাজনীতিক ছিলেন। জনসেবার জন্যও বিস্তর নামডাক ছিল আরএসসের এই প্রচারকের। গড়করি সঙ্ঘ পরিবারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি এবং আরএসএসের সদর দফতর নাগপুরের সাংসদ।
গড়করি অনুষ্ঠানের সঙ্গে মানানসই কথা বললেও কর্নাটকের নির্বাচনী ফলের প্রেক্ষিতে তাঁর মন্তব্য ভিন্ন মাত্রা পেয়ে গিয়েছে। ঘটনাচক্রে এই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিজেও নানা সময়ে দাবি করেছেন, তিনি সর্বদা কাজের বিনিময়ে ভোট চান। তাঁর কথায়, ‘আমি যা কাজ করেছি, তাতে ভোট চাওয়ার অধিকার আমার আছে।’ এমনকী কেন্দ্রীয় এই মন্ত্রী আগাম ঘোষণা করেছেন, আগামী লোকসভা নির্বাচনে সাড়ে তিন লাখের বেশি ভোটের ব্যবধানে জিতবেন।
প্রসঙ্গত গড়করি ২০১৯-এর ভোটে নাগপুর থেকে সাড়ে তিন লাখ ভোটের ব্যবধানে জেতেন। এবার তিনি আরও ঘোষণা করেছেন, পরের লোকসভা ভোটে প্রার্থী হবেন, কিন্তু ভোট ভিক্ষা করবেন না। পোস্টার, ব্যানার লাগানো, সভা-সমিতি, রোড-শো কিছুই করবেন না। এমনকী কাউকে খাতির করে এক কাপ চা’ও খাওয়াবেন না।
তাঁর কথায়, ‘নিজের কেন্দ্র ও দেশের জন্য যে কাজ করেছি তাতে রেকর্ড মার্জিনে জয় নিশ্চিত। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ ভোট দেবেন আমাকে।’
কর্নাটকে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে অপদার্থতা, দুর্নীতির অভিযোগ তো ছিলই, চোখ ধাঁধানো প্রচারও মানুষ ভালভাবে নেয়নি বলে নানা মহল থেকে কথা উঠেছে। বিশেষ করে বেঙ্গালুরুতে প্রধানমন্ত্রীর দু’দিন ধরে ঘন্টার পর ঘণ্টা রাস্তা আটকে রোজ-শো নিয়ে তুমুল সমালোচনা হয়। সামাজিক মাধ্যমে নিন্দায় মুখর হন বহু মানুষ।
রাজস্থানে আগামী নভেম্বরে বিধানসভার ভোট। রাজ্যে ক্ষমতায় কংগ্রেস। যদিও প্রচারের বহরে এখনই অনেক এগিয়ে গড়করির দল। পোস্টার, ব্যানার, কাটআউটে ছেয়ে আছে চারপাশ। রাস্তার মোড়ে মোড়ে মোদির কাট আউট। এককথায় ছমাস আগে থেকেই মোদিময় মরুরাজ্য।
