মণিপুরে(Manipur) গত ৩ মাস ধরে চলতে থাকা জাতি দাঙ্গায় ইতিমধ্যেই প্রাণ গিয়েছে শতাধিক মানুষের। তবে হিংসার আঁচ শুধু মণিপুরে আটকে নেই। উত্তর-পূর্বের আরও এক রাজ্য মিজোরামে(Mizoram) তা আছড়ে পড়ল। পাশাপাশি হিংসার ছবি দেখা গেল মেঘালয়েও(Meghalaya)। সোমবার রাতে মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার(Kanrad Sangma) দফতর ঘেরাও করে হামলা চালালো জনতা। ঘটনায় আহত হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর ৫ নিরাপত্তারক্ষী। ঘেরাওয়ের জেরে মেঘালয়ের তুরায়(Tura) নিজের দফতরে আটকে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী(Chief minister)।

মেঘালয়ের বর্তমান রাজধানী শিলং। তবে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে গারো পাহাড়ে বসবাসকারী জনজাতিদের দাবি মেঘালয়ের তুরাকে শীতকালীন রাজধানী হিসেবে মান্যতা দেওয়া হোক। সরকারের তরফে এই দাবিতে সেখানকার বেশকয়েকটি নাগরিক সমাজের সংগঠন সরব হলেও তাঁদের কথা কানে তোলেনি ডবল ইঞ্জিনের বিজেপি সরকার। এই দাবিতে অনশনও শুরু করেছিল সেখানকার মানুষ। সোমবার বিকেলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপরই ক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালায় মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে। ঘটনায় আহত হন ৫ নিরাপত্তারক্ষী। পরিস্থিতি সামাল দিতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। স্থানীয় সূত্রের খবর, ডবল ইঞ্জিনের ভাঁওতায় দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত মেঘালয়ের বেশিরভাগ অঞ্চল। উন্নয়নের পুরোটাই সীমাবদ্ধ শিলং এলাকায়। এতেই ক্ষুব্ধ মেঘালয়ের বাকি অঞ্চলগুলি। সেখানে না আছে হাসপাতাল, না আছে স্কুল, রাস্তাঘাট। ঠিকঠাক নয় নাগরিক পরিষেবাও। এতেই ক্ষুব্ধ গারো পাহাড়ের তুরা অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। তাঁদের দাবি, তুরাকে শীতকালীন রাজধানী করলে কিছুটা হলেও উন্নতি হবে এলাকার। তাই এই আন্দোলন। সেটাই এবার হিংসাত্মক আকার নিল। এই ঘটনায় বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এলাকার মানুষ সরকারের উপর এতটাই ক্ষুব্ধ যে সমস্যার দ্রুত সমাধান না করলে পরিস্থিতি দ্রুত মণিপুরের মত আকার ধারণ করতে পারে।

অন্যদিকে, মণিপুরের ঘটনার আঁচ সরাসরি আছড়ে পড়েছে মিজোরামেও। কুকি-মেতেই জাতি দাঙ্গায় প্রাণ বাঁচাতে অনেক মেতেই সম্প্রদায়ের মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন পড়শি রাজ্য মিজোরামে। কিন্তু সেখানেও প্রশ্ন উঠেছে তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে। প্রাক্তন সন্ত্রাসবাদীদের কাছ থেকে মিজোরামের আইজল ছেড়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি পেয়েছিলেন তাঁরা। যদিও তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করেছিল মিজোরামের সরকার। এবার নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আইজল ছাড়লেন ৪১জন। আশ্রয় নিলেন অসমে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, মিজোরামে শরণার্থী হিসাবে থাকা মেতেইদের মধ্যে ৪১জন অসমে চলে গিয়েছেন। সেখানকার কাছার জেলার পুলিশ সুপার নুমল মাহাত্তা জানিয়েছেন, “শনিবার রাতে ওঁরা শিলচরে এসে পৌঁছেছেন। যারা এসেছেন তাঁরা সকলেই সচ্ছ্বল পরিবারের এবং নিজেদের গাড়িতেই এখানে এসেছেন। ওনাদের মধ্যে কেউ কেউ কলেজের প্রফেসর, কেউ কেউ সরকারি উচ্চপদস্থ আধিকারিক। তাঁরা জানিয়েছেন, মিজোরামে এখনও পর্যন্ত তাঁদের উপর কোনও আক্রমণ হয়নি। সেখানকার প্রশাসন তাঁদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়েছে। কিন্তু তাঁরা নিজেরাই নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এখানে চলে এসেছেন। যতদিন না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে ততদিন তাঁরা এখানেই থাকবেন।”
