Tuesday, August 26, 2025

২০০ ব্যাঙ্ক লুঠ করে অভুক্তকে দান, গরিবের মসিহা এই ‘স্মাইলি হ্যাকার’

Date:

Share post:

ঘরে বসে ইউরোপ-আমেরিকার একের পর এক ব্যাঙ্ক লুট। আর সেই লুটের টাকা বিলিয়ে দিয়েছিলেন আফ্রিকা, প্যালেস্তিনের অনাহারে থাকা সাধারণ মানুষকে। তাঁর এই কীর্তিকলাপ ‘মানি হাইস্ট’-এর প্রফেসরকে গুনে গুনে ১০ গোল দেবে। হ্যাকিংয়ের দুনিয়ায় সাড়া ফেলে দেওয়া এই যুবককে বিশ্ব চেনে ‘স্মাইলি হ্যাকার’ নামে। যদিও তাঁর আসল নাম হামজা বেন্দেলাজ(Hamza Bendelladj)।

আলজিরিয়ার তিজি ওজুতে ১৯৮৮ বা ১৯৮৯ সালে জন্ম হামজা বেন্দেলাজের। পড়াশোনায় তুখোড় হামজা ছিলেন কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক। পাঁচটি ভাষা গড়গড়িয়ে বলতে পারতেন তিনি। প্রযুক্তিতে ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ। সেই দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে দুনিয়ার যে কোনও ব্যাঙ্ক থেকে টাকা লোপাট করতে সমর্থ ছিলেন হামজা। কার্যক্ষেত্রে তিনি ব্যবহার করতেন ‘বিএক্স১’ ছদ্মনাম। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ইউরোপ, আমেরিকার ২১৭টি ব্যাঙ্ক হ্যাক করে ২৮ কোটি ডলার (২২৩৯ কোটি ২০ লক্ষ ২০ হাজার) টাকা লুট করেছিলেন হামজা। এর মধ্যে বেশির ভাগ ব্যাঙ্কই ছিল আমেরিকার। ব্যাঙ্কগুলির কম্পিউটারে ভাইরাস ঢুকিয়ে টাকা বার করে নিতেন তিনি। মনে করা হয়, মোট ১৪ লক্ষ কম্পিউটার হ্যাক করেছিলেন হামজা। ইন্টারপোল, আমেরিকার ফেডেরাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)-এর ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ হ্যাকারদের তালিকায় প্রথম ১০ জনের মধ্যে ঠাঁই পেয়েছিলেন হামজা।

তবে এহেন হামজা গরিবের কাছে ছিলেন মসিহা। জানা যায়, ব্যাঙ্ক থেকে যে টাকা লুট করতেন হামজা, তা বিভিন্ন প্যালেস্তিনীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় দান করতেন। পাশাপাশি আফ্রিকা, প্যালেস্তিনের মতো গরিব দেশে অনাহারে থাকা মানুষগুলির জন্য যেত এই লুটের টাকা। ফলে ‘গরিবের রবিনহুড’ বলা হত তাঁকে। যদিও খুব স্বাভাবিকভাবেই তাঁর বিচারের নথিতে সে রকম দানধ্যানের উল্লেখ নেই। টাকা হাতিয়ে হামজা কী করতেন, সেখানে বলা হয়নি।

তবে তদন্তকারীরা তুলে ধরেছিল কীভাবে ব্যাঙ্কের কম্পিউটার হ্যাক করত হামজা? একটি ম্যালওয়্যার তৈরি করেছিলেন তিনি। নাম ‘স্পাইআই বটনেট’। এই ম্যালওয়্যার তৈরিতে তাঁকে সাহায্য করেছিলেন রাশিয়ার আলেকজান্দ্র আন্দ্রেইভিচ নামে আর এক হ্যাকার। ২০০৯ থেকে ২০১১ সালে হ্যাকারদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয় হয়েছিল এই ভাইরাস। এর মাধ্যমে অনলাইনে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট লগ ইনের তথ্য হাতিয়ে নেওয়া যেত। গ্রাহকদের পাসওয়ার্ড, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য… হাতিয়ে নেওয়া যেত সব কিছু। এর পরেই হামজাকে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে এফবিআই। টানা দু’বছর তাঁর খোঁজ চলেছিল। শেষে এক গুপ্তচরকে সেই ‘স্পাইআই’ বিক্রি করে ফেঁসে যান হামজা। ‘স্পাইআই’-এর দাম তিনি নিয়েছিলেন সাড়ে আট হাজার ডলার (ভারতীয় মু্দ্রায় ছ’লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা)। সেখান থেকেই তিনি নজরে পড়ে গিয়েছিলেন আমেরিকার তদন্তকারী সংস্থার।

জানা যায়, ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি হামজা মালয়েশিয়া থেকে মিশর যাচ্ছিলেন স্ত্রী আর মেয়েকে নিয়ে। ব্যাঙ্কক বিমানবন্দরে নামার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ধরে থাইল্যান্ডের পুলিশ। গ্রেফতারের পরেও শান্ত ছিলেন হামজা। হাসতে হাসতে হাতকড়া পরেছিলেন। সেই ছবি ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা দুনিয়ায়। তার পরেই দুনিয়ার কাছে তিনি পরিচিত হয়েছিলেন ‘স্মাইলিং হ্যাকার’ নামে। তিনি ধরা পড়লেও তাঁর স্ত্রী আর মেয়ে বিমান ধরে চলে গিয়েছিলেন মিশর। ২০১৩ সালে থাইল্যান্ড হামজাকে প্রত্যর্পণ করে আমেরিকার কাছে। আটলান্টায় তাঁর বিচার শুরু হয়। ২০১৫ সালের ২৫ জুন তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। বিচারে ৩০ বছর জেল এবং এক কোটি ৪০ লক্ষ ডলার জরিমানা করা হয় তাকে। ভারতীয় মুদ্রায় যা ১১১ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকা। যদিও পরে গুজব ছড়ায় হামজাকে ফাঁসির সাজা দিয়েছে মার্কিন আদালত। তবে তা খারিজ করে আলজিরিয়ায় আমেরিকার রাষ্ট্রদূত জোয়ান এ পোলাশচিক টুইটারে লেখেন, “কম্পিউটার সংক্রান্ত অপরাধ গুরুতর অপরাধ নয়। তার সাজা মৃত্যুদণ্ড নয়।” এখনও আমেরিকার জেলে বন্দি রয়েছেন গরিবের মসিহা হামজা বেন্দেলাজ।

spot_img

Related articles

বাকস্বাধীনতাকে রক্ষাকবচ করে কনটেন্টের নামে ‘স্বেচ্ছাচারিতা’ নয়, রায় শীর্ষ আদালতের

ভিউ বাড়াতে ইউটিউবে (You Tube) অশালীন, নিষিদ্ধ কনটেন্টে না সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court)। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, এবার থেকে...

যেমন ইচ্ছে জল ছাড়ছে ডিভিসি, ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী

লাগাতার বৃষ্টিতে নদীগুলি বিপদসীমায় বইছে। নিচু জায়গাগুলি ভেসে গিয়েছে জলে। এর মধ্যে ডিভিসি(DVC) জল ছেড়ে আরও বিপদে ফেলার...

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির তালিকা দেওয়ার নির্দেশ জেলাশাসকদের

বন্যায়(Flood) যে সমস্ত বাড়ি ভেসে যাচ্ছে তার তালিকা তৈরি করে মুখ্যসচিবের(Chief Secratory) কাছে দেওয়ার জন্য জেলাশাসকদের নির্দেশ দিলেন...

১৯ হাজার কোটি ব্যয়ে ৯১ কোটি শ্রম দিবস

কেন্দ্র বঞ্চনা করে। বাংলা করে উন্নয়ন। একশো দিনের কাজে বাংলার বকেয়া দেয়নি কেন্দ্র। তারপরই কেন্দ্রের তোয়াক্কা না করে...