Saturday, August 23, 2025

চরম অ.র্থকষ্টের জেরেই কি এমন ‘ডিসিশন’? সুমনের ফেসবুক লাইভ ঘিরে চা.ঞ্চল্য

Date:

Share post:

কলকাতায় (Kolkata) বন্ধ ফ্ল্যাটের (Flat) ভিতর থেকে উদ্ধার হয়েছে বাবা-মা এবং তাঁদের একমাত্র পুত্রসন্তানের ঝুলন্ত দেহ। তাঁরা একসঙ্গে আত্মহত্যা (Suicide) করেছেন কি না তার উত্তর খুঁজতে গিয়ে বুধবার পুলিশের হাতে এসেছে একটি ফেসবুক লাইভের (Facebook Live) সূত্র। আর ওই সূত্র ধরেই দানা বাঁধছে রহস্য। পুলিশ সূত্রে খবর ওই ফেসবুক লাইভটি করেছেন সুমনরাজ মৈত্র (Suman Raj Moitra)। ৩৯ বছরের সুমনরাজ সেই লাইভে জানিয়েছেন, তাঁরা একটি সিদ্ধান্ত (Decision) নিয়েছেন। আর সিদ্ধান্ত নাকি তাঁদের নিতেই হতো।

তবে প্রাথমিকভাবে গড়িয়া স্টেশন এলাকায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ বিষয়টিকে আত্মহত্যার ঘটনা বলে মনে করছে বলে সূত্রের খবর। ওই এলাকার বন্ধ ফ্ল্যাটের দরজা খোলার পর তিন জনের দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এঁরা হলেন অপর্ণা মৈত্র (৬৮), তাঁর স্বামী স্বপন মৈত্র (৭৫) এবং তাঁদের ছেলে সুমনরাজ। স্বপন পেশায় সেরামিক ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। স্থানীয়রা এ-ও জানিয়েছেন যে, গত তিন দিন ধরে মৈত্র পরিবারের কাউকে বাইরে বেরোতে দেখেননি তাঁরা। বুধবার সকালে ফ্ল্যাটের ভিতর থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানোয় পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছিল। তারাই এসে ফ্ল্যাটের ভিতরে তিনটি আলাদা জায়গায় তিন জনের দেহ ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে। পুলিশ সূত্রে খবর, ফেসবুক লাইভে কিছুটা অসংলগ্ন ভাবে সুমনরাজকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমার কী করা উচিত? আমাকে দেখতে পেলেই ওরা মেরে দেবে বলছে!’’ এরপরে কিছুটা থেমে আবার সুমনরাজকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমার এক ছোটোমামা আছে তাকে এটা বলেছি। জানি না, উনি বলছেন একটু অপেক্ষা করে যেতে। এখান থেকে আমাদের শিফট করে দেবেন। কিন্তু চলে যাওয়াটা এর সমাধান নয়।’’

সুমন আরও বলেছেন, ‘‘বেশ কিছু দিন হল, এখানকার বাচ্চারা আমাকে পাগল পাগল বলে যাচ্ছে। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আজই আমাকে একটা ডিসিশনে আসতে হবে। হয়তো আমি সেই ডিসিশনটা নিয়েও ফেলেছি।’’ পাশাপাশি লাইভে সুমনরাজকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘‘আমাকে একঘরে করে রাখা হয়েছে। গত ৯ বছরে আমি কারও সঙ্গে কোনও কথা বলিনি।’’ তবে সুমনের বাবা স্বপন মৈত্র ছিলেন সেরামিক ইঞ্জিনিয়ার। ছেলেবেলা থেকে অভাব কাকে বলে জানা ছিল না ৩৯ বছরের সুমন মৈত্রের। আগাগোড়া ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা। এমনকি বাড়িতেও নিজেদের মধ্যে কথোপকথন চলত ইংরেজিতে। তবে আচমকা তাঁদের পরিবারে অবসাদ এবং অর্থাভাবের কালোছায়া নেমে আসে। মামা আর্থিক সাহায্য করতেন বটে। কিন্তু মামার কাছে হাত পেতে আর কতদিন! শেষ পর্যন্ত কি অভাবের তাড়নায় চরম সিদ্ধান্ত নিল গড়িয়া গড়াগাছার বহুতল আবাসনের বাসিন্দা মৈত্র পরিবার?

স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, মৈত্র পরিবারের সঙ্গে কারও তেমন ঘনিষ্ঠতা ছিল না। তবে কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেও তাঁদের দেখেননি কেউ। মূলত, নিজেদের মতোই থাকতেন মৈত্ররা। মাঝেমাঝে ফ্ল্যাটে আসতেন এক ব্যক্তি। তিনি সুমনের মামা দেবাশিস ঘোষ। পুলিশ সূত্রে খবর, গত বছর ২৮ ডিসেম্বর দেবাশিসই এসেছিলেন বোনের বাড়িতে। ঘটনার খবর পেয়েও ছুটে এসেছেন দেবাশিস। তাঁর দাবি, ওই পরিবারকে আর্থিক ভাবে তিনিই দেখাশোনা করতেন। ফ্ল্যাটটিও তাঁর। প্রসঙ্গত, হার্টের সমস্যা ছিল স্বপনের। কিছু দিন আগে তাঁর বাইপাস সার্জারিও হয়। সম্প্রতি চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ডাক্তারের ফি দেওয়ার মতো টাকা ছিল না মৈত্র পরিবারের কাছে। আবার দেবাশিস যখন গত ২৮ ডিসেম্বর ডাক্তার দেখানোর জন্য সেই টাকা দিতে চেয়েছেন বলে দাবি করছেন, সেই টাকা নেননি সুমনরা। তবে মৈত্র পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা যে ছিল, তার প্রমাণ হিসাবে স্থানীয়রা বলছেন, ফ্ল্যাট রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বাবদ টাকা মৈত্র পরিবার ছ’মাসের অগ্রিম হিসাবে দিয়ে দিতেন। কিন্তু তাঁরা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি, আদতে ঘোর আর্থিক সমস্যায় ভুগছে পরিবারটি।

 

 

 

spot_img

Related articles

ফলতা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইলিশ উৎসব, পড়ুয়াদের জন্য পাতে ভাপা–ভাজা ইলিশ

বাজারে ইলিশের যা আগুন ছোঁয়া দাম তাতে উচ্চবিত্তদেরই পাতে ইলিশ জোটাতে হিমশিম খাওয়ার জোগাড়। কিন্তু সেই  দুর্মূল্যের বাজারেই...

আমেরিকায় চিঠি–পার্সেল পাঠানোয় বিধিনিষেধ, সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় ডাক বিভাগের 

ভারত–মার্কিন শুল্কযুদ্ধের জেরে এবার বড়সড় প্রভাব পড়ল ডাক পরিষেবায়। আমেরিকায় চিঠি ও পার্সেল পাঠানোর প্রক্রিয়ায় বিধিনিষেধ জারি করল...

ডেঙ্গি সংক্রমণ রুখতে তৎপর রাজ্য! জেলাগুলিকে একগুচ্ছ কড়া নির্দেশ মুখ্যসচিবের 

রাজ্যে ডেঙ্গি সংক্রমণ ক্রমশ বাড়তে থাকায় শনিবার নবান্নে জেলাশাসক ও স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন মুখ্যসচিব...

দায় বেসরকারিকরণ নীতির! মোদিরাজে পাঁচ বছরে চাকরি হারিয়েছেন লক্ষাধিক কর্মী

মোদি সরকারের আমলে বিগত পাঁচ বছরে চাকরি হারিয়েছেন লক্ষাধিক সরকারি কর্মী। সম্প্রতি লোকসভায় এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য দিল কেন্দ্র।...