ধ্বংসস্তূপ সরতেই ইতিহাসের মুখোমুখি! রোমান সাম্রাজ্যের নয়া গল্প শোনাচ্ছে পম্পেই  

দীর্ঘদিন ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়েছিল ঘরটি। কিন্তু সেই ঘরেই যে এমন জিনিস লুকিয়ে রয়েছে তা হয়তো কল্পনাতীত ছিল। দক্ষিণ-পশ্চিম ইতালির (Italy) বন্দর নগরী পম্পেই (Pompeii)। ৭৯ খ্রিস্টাব্দে মাউন্ট ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুৎপাতের কারণে একেবারে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল শহর ও পার্শ্ববর্তী হারকিউলেনিয়াম-সহ রোমান সাম্রাজ্যের বিস্তৃত এলাকা। ১৯ শতকের গোড়ার দিক থেকে সেখানে দফায় দফায় খননকার্য চলার পর শেষমেশ কেল্লাফতে। ছাই ও জমে যাওয়া লাভার আস্তরণ সরিয়ে ধীরে ধীরে প্রকট হয়েছে গোটা শহর। পাশাপাশি জমাটবাঁধা লাভা ও পুরু ছাইয়ের তলায় চাপা পড়েছিল উঁচু দেওয়ালের ঘরটি। সেই আস্তরণ সরাতেই এবার সামনে এল দু’হাজার বছর আগের এক আশ্চর্য কীর্তি। যা স্যামনে আসতেই তুঙ্গে উন্মাদনা।

তবে পম্পেই ও তার আশপাশের এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ি চললেও এখনও পর্যন্ত এখানকার এক তৃতীয়াংশ এলাকা ছাই ও লাভার তলায় চাপা পড়ে রয়েছে। সে রকমই একটি এলাকায় খননকাজে চালিয়ে কয়েক সপ্তাহ আগে বেরিয়ে এসেছে একটি বিশালাকার ঘর। আর সেখান থেকেই এবার উদ্ধার হল ঝলমলে ফ্রেস্কো। তবে প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা, এটি মূলত একটি ব্যাঙ্কোয়েট রুম বা কোনও অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত খাওয়াদাওয়ার ঘর। এছাড়া বিশাল এই ঘরটির মেঝে ১০ লক্ষেরও বেশি সাদা টাইল দিয়ে মোজাইক করা। দেওয়ালগুলির রং কালো, আর সেই কালো রংয়ের উপরেই কমলা, সবুজ, নীল ও হলুদের মতো উজ্জ্বল রং ব্যবহার করে আঁকা হয়েছে গ্রীসের ইতিহাসের একাধিক দৃশ্য। ঘরের দেওয়াল জুড়ে বিভিন্ন কারুকার্য ও শিল্পকর্ম ছড়িয়ে, ছিটিয়ে রয়েছে।

ইতিমধ্যে, পাহাড় সমান ছাই ও লাভা সরিয়ে দু’টি ফ্রেস্কো বের করেছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে সূর্য ও সঙ্গীতের গ্রিক দেবতা অ্যাপোলো রাজকুমারী কাসান্দ্রাকে প্রেম নিবেদন করছেন। অ্যাপোলোর হাতে বীণা। আর একটি ছবিতে রয়েছেন ট্রয়ের রাজকুমার প্যারিস ও স্পার্টার রানি হেলেন। প্যারিসের পায়ের কাছে একটি বাঘ বসে রয়েছে। প্রচলিত আছে, প্যারিসের প্রেমে পড়ে স্বামী-সংসার ত্যাগ করে ট্রয় পাড়ি দিয়েছিলেন হেলেন। হেলেন-প্যারিসের এই কীর্তির পরেই ট্রয় আক্রমণ করেন গ্রিক রাজারা, দশ বছরের দীর্ঘ যুদ্ধের পরে ট্রয়ের জীবনাবসান হয়। তবে রোমান নগরীর দেওয়ালে গ্রিক প্রত্নকথা সম্পর্কিত এই ছবি ইতিহাসবিদদের পম্পেই সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।

পম্পেই পুরাতাত্ত্বিক এলাকার দায়িত্বে থাকা গবেষক গাব্রিয়েল জুকট্রিগেলের কথায়, পম্পেইকে এত দিন গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহর ভেবে এসেছি। কিন্তু সাম্প্রতিক এই আবিষ্কার আমাদের এই প্রাচীন নগরীর অন্য একটি সত্তা তুলে ধরল। পম্পেই যে রোমান সাম্রাজ্যের শিল্প-সংস্কৃতির অন্যতম পীঠস্থানও ছিল, সে বিষয়ে আমাদের আর কোনও সন্দেহ নেই।