অধীরকে উপড়ে ফেলতে তৈরি কংগ্রেস! পঞ্চম দফা নির্বাচনের আগে কেন সরব, উঠছে প্রশ্ন

অধীর রঞ্জন চৌধুরী নির্ণয় করার কেউ নন। নির্ণয় নেব আমরা, কংগ্রেস পার্টি রয়েছে, হাইকম্যান্ড রয়েছে। এই জন্য যা আমরা নির্ণয় করব সেটাই সঠিক হবে।

প্রয়োজনে অধীর চৌধুরীকেও সেন্সর করতে পারে জাতীয় কংগ্রেস। বিজেপি বিরোধী জোটের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে এই বার্তাই দিলেন জাতীয় কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। কেন্দ্রের সরকার গঠনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পরই বাংলায় তৃণমূল বিরোধিতা করে ভোটের মঞ্চে ফায়দা তোলা কংগ্রেস নেতার প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের (Congress High Command)। যদিও রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, চার দফার নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে কেন প্রকাশ্যে অধীর বিরোধিতা কংগ্রেসের? লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই অধীর চৌধুরী (Adhir Ranjan Chowdhury) যেভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে একটিও বক্তব্য পেশ না করে বিরোধী জোট ভেস্তে দিয়েছেন, তখন কংগ্রেস হাইকম্যান্ড নীরব থেকেছে। কংগ্রেসের আসন পাকা করে ফেলার পর অবশেষে খাড়গের মুখ খোলায় অন্য রাজনৈতিক অভিসন্ধি দেখছে রাজনৈতিক মহল। তৃণমূলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, অনেক আগে এব্যাপারে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া উচিত ছিল দিল্লির হাইকম্যান্ডের।

সম্প্রতি তৃণমূল সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) নির্বাচনী প্রচার মঞ্চ থেকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন তিনি বিরোধী I.N.D.I.A. “জোটে আছি, থাকব”। সেই সময়ই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর তৃণমূল বিরোধী কথা জোটের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের জোটে থাকার বার্তা যে শরিক নেতাদের কতটা আশ্বস্ত করেছে তা মুম্বাইতে I.N.D.I.A. জোটের বৈঠকে নেতাদের কথাতেই স্পষ্ট। মল্লিকার্জুন খাড়গে (Mallikarjun Kharge) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্বাসের প্রসঙ্গে বলেন, “প্রথমে উনি বলেছিলেন যে বাইরে থেকে সমর্থন দেব। আগেও এরকম হয়েছে, অনেক দল বাইরে থেকে সমর্থন করেছিল। ২০০৪ সালে যখন ইউপিএ (UPA) সরকার গঠন হয়েছিল তখন বামেরা বাইরে থেকে সমর্থন জানিয়েছিল। সম্প্রতি ওনার আরও একটি বার্তা এসেছে যে সরকার গঠিত হলে সরকারে তিনি যুক্ত হবেন। স্বাভাবিকভাবেই জোটের সঙ্গেই তিনি আছেন এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।”

এরপরই তৃণমূল নেত্রীর বিরোধিতা করা নিয়ে অধীর চৌধুরীকে ধুয়ে দেন খাড়গে। তিনি বলেন, “অধীর রঞ্জন চৌধুরী নির্ণয় করার কেউ নন। নির্ণয় নেব আমরা, কংগ্রেস পার্টি রয়েছে, হাইকম্যান্ড রয়েছে। এই জন্য যা আমরা নির্ণয় করব সেটাই সঠিক হবে।” তবে অধীর চৌধুরীর এই বক্তব্যের জন্য কংগ্রেস যে তাঁকে ছেঁটে ফেলতেও প্রস্তুত, সেকথাও শনিবার স্পষ্ট করে দেন খাড়গে। তাঁর কথায়, “হাইকম্যান্ড আমরা। হাইকম্যান্ড যে নিয়ম তৈরি করবে তা মেনে চলতে হবে। যদি কেউ মেনে না চলেন তাহলে তিনি বাইরে যাবেন।”

তবে এখানেই রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন কেন এই বার্তা চার দফা নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে। লোকসভা নির্বাচনের আসন রফা পর্যায়ে বারবার তৃণমূলের বিরোধিতা করার পরেও স্পষ্টভাবে অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে মুখ খোলেনি কংগ্রেস। কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ কোনও বক্তব্যের সমালোচনা করলেও কখনই তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। প্রথম চার দফার নির্বাচনে যে আসনে ভোট হয়েছে, সেখানে কংগ্রেসের জেতা আসন রয়েছে। উল্টোদিকে বাকি তিন দফার নির্বাচনে কোনও আসন কংগ্রেসের নেই। সেই আসনগুলিতে কোনও জয়ের আশা নেই দেখেই কী পঞ্চম দফা নির্বাচনের আগে এতদিনে অধীরের বিরোধিতার পথ নিল কংগ্রেস, প্রশ্ন রাজনীতিকদের।

তৃণমূল প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ কুণাল ঘোষ দাবি করেন, “যখন নির্বাচনী পরিমণ্ডল তৈরি হচ্ছিল সেই সময়ই তো কড়া মনোভাব দেখানো উচিত ছিল কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের। যা বলেছেন ঠিক আছে। কিন্তু অনেক বিলম্বিত বার্তা। বিলম্বিত বোধোদয়।”