আগামী ১০ জুলাই বাংলার চার কেন্দ্রে রয়েছে বিধানসভা উপনির্বাচন (Assembly By Election)। তার শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে মনোনয়ন পর্ব। তার আগে এদিন সকাল সকাল আনুষ্ঠানিকভাবে উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে দিল শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)।

মানিকতলায় প্রয়াত সাধন পাণ্ডের স্ত্রী সুপ্তি পাণ্ডে যে প্রার্থী হচ্ছেন তা আগেই ঠিক ছিল। আনুষ্ঠানিক ভাবে সেই নাম ঘোষণা হল। রায়গঞ্জে টিকিট দেওয়া হচ্ছে কৃষ্ণ কল্যাণীকে। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটে হেরে গেলেও রায়গঞ্জ উপনির্বাচনে কৃষ্ণের উপর ভরসা রাখছ তৃণমূল। রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী করছে সেই মুকুটমণি অধিকারীকেই। তিনিও লোকসভা ভোটে হেরেছেন। তবে চমক থাকছে বাগদা কেন্দ্রে। এবার এখানে তৃণমূল প্রার্থী করছে মধুপর্ণা ঠাকুরকে। যিনি রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের মেয়ে। অর্থাৎ, বাগদা মতুয়া ভোটের কথা মাথার রেখে সরাসরি ঠাকুর বাড়ি থেকে প্রার্থী করল তৃণমূল। এখানে কিন্তু টিকিট পেলেন না বিশ্বজিৎ দাস। লোকসভা ভোটের সময়
মধুপর্ণা প্রথম সংবাদ শিরোনামে আসেন। ঠাকুর নগরের ঠাকুর বাড়িতে বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের বিরুদ্ধে একরাশ অভিযোগ এনে অনশনে বসেছিলেন মধুপর্ণা।


যে কেন্দ্রগুলিতে উপনির্বাচন হতে চলেছে তাদের মধ্যে ২০২১ দলের বিধানসভা ভোটে রায়গঞ্জ, বাগদা এবং রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন যথাক্রমে কৃষ্ণ কল্যাণী, বিশ্বজিৎ দাস এবং মুকুটমণি অধিকারী। পরে তাঁরা তিনজনেই তৃণমূলে যোগ দেন। এই লোকসভা ভোটে সকলকেই প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। ফলে তাঁরা বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়। সেই কারণে এই তিন কেন্দ্রে বিধানসভা উপনির্বাচন হতে চলেছে।

অন্যদিকে মানিকতলা আসনে গত বিধানসভায় জয়ী হয়েছিলেন সাধন পাণ্ডে। ২০২২ সালে তিনি মারা যান।দীর্ঘদিন ধরেই উপনির্বাচন ঘোষণা হচ্ছিল না। কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন ওই কেন্দ্রের পরাজিত বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে। দীর্ঘ সময় ধরে সেই মামলা চলায় ভোট করা যাচ্ছিল না এই কেন্দ্রে। অবশেষে আইনি জটিলতা কাটার পর উপনির্বাচন ঘোষণা হয়েছে মানিকতলায়।


এদিকে পৈত্রিক ভিটে ফিরে পাওয়ার দাবিতে আমরণ অনশন চালিয়েছিলেন ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়ির সদস্য তথা রাজ্যসভার সাংসদ মমতা বালা ঠাকুরের মেয়ে মধুপর্না ঠাকুর। আমরণ এই অনশন চালিয়ে যাওয়ার কারণে মুখে কোনও খাবার তুলছিলেন না তিনি। তার সঙ্গে অনশন মঞ্চে ছিলেন অন্যান্য মতুয়া ভক্তেরাও। টানা কয়েকদিন ধরে চলা এই আমরণ অনশনে শারীরিকভাবে যথেষ্টই দুর্বল হয়ে পড়েছেন মধুপর্ণা। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছিলেন। ওই সময় সুগার লেভেল ও ব্লাড প্রেসার অনেকটাই কমে গিয়েছিল তাঁর। তবে নিজের অবস্থান থেকে বিন্দুমাত্র সরতে নারাজ ছিলেন না ঠাকুরবাড়ির এই সদস্য।

মতুয়া ধর্মমেলা চলাকালীন বড়মা বীণাপাণি দেবীর ঘরের তালা ভেঙে ঢুকেছিল শান্তনু ঠাকুর। সেই সময়ের ছবি সংবাদ মাধ্যমেও দেখেছিল গোটা রাজ্য-সহ মতুয়া ভক্তরা। পরে সেই ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেয় শান্তনু। ফলে নিজেদের ঘরেই আর প্রবেশ করতে পারছেন না মা মমতাবালা ঠাকুর ও মেয়ে মধুপর্ণা ঠাকুর।

বড়মা বীণাপানি দেবীর ঠিক পাশের ঘরেই থাকতেন মমতা ঠাকুর ও তার মেয়ে মধুপর্ণা। সেখান থেকেই তাদের বিতাড়িত করা হয়েছে। নিজেদের বাসস্থান ফিরে পেতে, বড়মা বীণাপানি দেবীর ঘরের পাশে তাই একটি খাটিয়া পেতে মধুপর্ণা ঠাকুর অনশনে বসেছিলেন। প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, “আমরা মেয়ে বলে কি নিজের বাবার সম্পত্তি পাব না?” মতুয়া ভক্তদের একটা বড় অংশ মধুপর্ণার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এবার সেই মধুপর্ণাকে বাগদা উপনির্বাচনে টিকিট দিয়ে বড়সড় চমক দিল তৃণমূল।

রায়গঞ্জের কৃষ্ণ কল্যাণী এবং রানাঘাট দক্ষিণের মুকুটমণি অধিকারী লোকসভা ভোটে হেরে গেছেন। তবে উপনির্বাচনে তাঁদের ওপরই ভরসা রেখেছে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। একমাত্র টিকিট পেলেন না বিশ্বজিৎ দাস।
