আলিমুদ্দিন, DYFI কার্যালয় হয়ে লাখো মানুষের শ্রদ্ধা-সম্মানে ভেসে NRS-এ বুদ্ধদেবের দেহ দান

ভিড়ের কারণে খুব ধীর গতিতে এগোয় গাড়ি। ভিড়ের মধ্যে দেখা যায় ফুল, মালা উড়ে আসছে শববাহী শকটের দিকে।

প্রয়াত রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মরদেহ শুক্রবার সকালে পিস ওয়ার্ল্ড থেকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় রাজ্য বিধানসভায়। সেখান থেকে বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ মরদেহ এসে পৌঁছায় আলিমুদ্দিনে। অবশ্য তার বহু আগে থেকে সিপিএম কর্মী-সমর্থকরা ভিড় করতে থাকেন আলিমুদ্দিনে। বেলা ১২টার সময় দেখা যায় বুদ্ধদেবকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় জমিয়েছেন বহু সাধারণ মানুষও। কয়েক হাজার মানুষের লম্বা লাইন পড়েছে সিপিএমের রাজ্য দফতরের বাইরে। প্রায় প্রত্যেকেরই বুকে কালো ব্যাজে সাদা-কালোয় বুদ্ধদেবের একটি ছবি। কারও হাতে লাল গোলাপ, কেউ আবার বুদ্ধবাবুর ছবি এবং ফুল নিয়ে হাজির হন সেখানে। ভিন রাজ্য থেকেও এসেছেন বহু মানুষ। ত্রিপুরা,কেরালা থেকে এসেছেন সাতজনের একটি দল। তারা জানালেন, প্রিয় নেতাকে শেষ চোখের দেখা দেখতে এবং শ্রদ্ধা জানাতে এতদূর দৌড়ে আসা তাদের। তাদের বক্তব্য, বুদ্ধবাবুর মতো সৎ মানুষ আজকের দিনে, রাজনীতির জগতে বিরল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আলিমুদ্দিন থেকে মানুষের লাইন ততক্ষণে শিয়ালদহের দিকে নোনপুকুর ছাড়িয়েছে, অন্যদিকে আর একটি লাইন এজেসি বোস রোডে পৌঁছে যায়। বেশ কয়েকজন প্রতিবন্ধীকেও দেখা যায় হুইল চেয়ারে বসে চলে এসেছেন প্রিয় নেতাকে শ্রদ্ধা জানাতে।ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা রাস্তায় ঠায় অপেক্ষা করেছেন ধৈর্য ধরে।

আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের দলীয় দফতর থেকে বুদ্ধবাবুকে বার করা হল নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টা খানেক পড়ে। যখন প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য দফতর দীনেশ মজুমদার ভবনে। তখনও কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থক রাস্তায় অপেক্ষারত। বুদ্ধদেব ছিলেন ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য শাখার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। ৪৫ মিনিট বুদ্ধদেবের দেহ শায়িত থাকার কথা ছিল সেখানে। অপেক্ষারত মানুষের ভিড় পুরোটাই এয়ে পড়ে দীনেশ মজুমদার ভবনের সামনে। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিএমের রাজ্য দফতর থেকে ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য দফতর পৌঁছতে একটি গাড়ির খুব বেশি হলে ৫ থেকে ৭ মিনিট সময় লাগার কথা। কিন্তু শুক্রবার আলিমুদ্দিন থেকে ডিওয়াইএফআই দফতর পৌঁছতে পারল শববাহী শকটের সময় লাগল প্রায় ৪৫ মিনিট। ভিড়ের কারণে খুব ধীর গতিতে এগোয় গাড়ি। ভিড়ের মধ্যে দেখা যায় ফুল, মালা উড়ে আসছে শববাহী শকটের দিকে।

সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিমান বসু, গৌতম দেব, সূর্যকান্ত মিশ্র, সুজন চক্রবর্তী, মহম্মদ সেলিম, মীরা ভট্টাচার্য,সুচেতন ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে অন্যান্য নেতৃত্ব। শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পরে মিছিল করে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় শিয়ালদহের এনআরএস হাসপাতালে। রাস্তায় তখন হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক সেই মিছিলে পা মিলিয়েছেন।এনআরএসে যখন বুদ্ধদেবের মরদেহ পৌঁছায়, তখন ঘড়ির কাঁটা সাড়ে পাঁচটার ঘরে। সবাই চোখের জলে ভাসিয়ে প্রিয় নেতার ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে এনআরএস কর্তৃপক্ষের হাতে তার মরণোত্তর দেহ দান করেন বুদ্ধ জায়া মীরা ভট্টাচার্য।আর তারই সঙ্গে বঙ্গ রাজনীতিতে একটি অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল।

 

 

 

Previous articleমেয়েটি কেন সোনা পেল না আগামীতে জানা যাবে! ক্ষুব্ধ মমতা, আর্চারি অ্যাকাডেমি নিয়ে আশা প্রকাশ
Next articleকলকাতা লিগে দুরন্ত জয় ইস্টবেঙ্গলের, ইস্টার্ন রেলওয়েকে হারাল ৩-০ গোলে