অপরাধ মূলক ষড়যন্ত্র, গ্রেফতার নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া সায়ন লাহিড়ি

অপরাধ মূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেফতার নবান্ন অভিযানের অন্যতম আহ্বায়ক সায়ন লাহিড়ি (Sayan Lahiri)। গতকাল, মঙ্গলবার রাতে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। “পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ” নামে আচমকা গজিয়ে ওঠা সংগঠনের অন্যতম হোতা এই সায়ন। যে সংগঠন নবান্ন অভিযানের নামে কার্যত নৈরাজ্য চালিয়েছে। আর জি করের নির্যাতিতার বিচার নয়, লাশের উপর দাঁড়িয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করেছিল।

নবান্ন অভিযানের আগে গত, রবিবার কলকাতা পুলিশের প্রকাশ করা ভিডিওতে শহরের একটি পাঁচতারা হোটেলে ঢুকতে দেখা যায় সায়নকে (Sayan Lahiri)। সেখানে তিনি কোনও রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে দাবি করে পুলিশ। জানা যায়, বিজেপির কিছু প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে নবান্ন অভিযানের আগে বৈঠক করেছিল এই সায়ন। পুলিশ খতিয়ে দেকছে, সেই বৈঠকেই এই অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের ছক কষা হযেছিল কি না।

মঙ্গলবার আর জি কর কাণ্ডের বিচার চেয়ে ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’-এর ডাকা নবান্ন অভিযানে উত্তপ্ত হয়েছে পরিস্থিতি। আন্দোলনকারীদের আটকাতে হাওড়ার জায়গায় জায়গায় ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু অভিযান শুরু হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যে অশান্ত হয় পরিস্থিতি। জায়গায় জায়গায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয় আন্দোলনকারীদের। পুলিশের দিকে উড়ে আসে ইট-পাটকেল, বোতল ইত্যাদি। পাল্টা জলকামান ছোড়ে পুলিশ। ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাসের শেল। পুলিশকে কয়েকটি জায়গায় মৃদু লাঠিচার্জও করতে হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে পুলিশ জানায়, নবান্ন অভিযান থেকে মোট ২২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে, কলকাতা পুলিশ মোট ১২৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের মধ্যে ১০৩ জন পুরুষ এবং ২৩ জন মহিলা রয়েছেন। রাজ্য পুলিশের হাতে ধৃতের সংখ্যা ৯৪। পাশাপাশি, ১৫ জন পুলিশকর্মীও আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার।

অপরদিকে, নবান্ন অভিযানের পরপরই কলকাতা পুলিশের তরফে সোশ্যাল মিডিয়ায় ২১টি ছবি প্রকাশ করেছিল। সেখানে পুলিশের ওপর হামলাকারী বেশ কেকজন চিহ্নিত করা হয়েছিল। আর সেই পোস্টে লেখা হয়েছিল, ‘সন্ধান চাই: নীচের ছবিতে যাঁদের চেহারা চিহ্নিত করা হয়েছে, তাঁদের সন্ধান জানা থাকলে অনুরোধ, জানান আমাদের, সরাসরি বা আপনার সংশ্লিষ্ট থানার মাধ্যমে।’

ছাত্র সমাজের ডাকা মঙ্গলবারের নবান্ন অভিযানে একাধিক জায়গায় জাতীয় পতাকাকে অবমাননা করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে রাজ্য আইনি পদক্ষেপ করবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ-এর ব্যানারে ডাকা নবান্ন অভিযানে এদিন পুলিসকে আক্রমণ, হাঙ্গামা, সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের ঘটনায় কলকাতার আলিপুর, হেস্টিংস, ময়দান, মুচিপাড়া, হেয়ার স্ট্রিট, আমহার্স্ট স্ট্রিট, বড়বাজার, নর্থ পোর্ট, জোড়াসাঁকো থানায় জামিন অযোগ্য একাধিক ধারায় ১১টি এফআইআর করা হয়েছে। লালবাজার জানিয়েছে, শুধু কলকাতায় ১৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিন কলকাতা পুলিসের ২৫ জন কর্মী জখম হয়েছেন।

তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, পশ্চিমবঙ্গ মেইনটেন্যান্স অব পাবলিক অর্ডার আইনের ৯ নম্বর ধারায় তথাকথিত ছাত্র সমাজের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। এই আইনের বিশেষত্ব হল, এতে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তির টাকা দোষী সাব্যস্ত আন্দোলনকারীদের থেকে আদায় করা যাবে।

আরও পড়ুন: বুধবারের বিজেপির কর্মনাশা বনধ ব্যর্থ করার ডাক আইএনটিটিইউসি-র

 

Previous articleকর্মসংস্কৃতির বাংলায় কোনও বনধ নয়, সকাল থেকে সজাগ প্রশাসন 
Next articleবিভিন্ন স্টেশনে রেল অবরোধ, সকাল থেকেই অশান্তি তৈরির চেষ্টা বিজেপির