কথায় আছে যস্মিন দেশে যদাচার! যেমন দেশ তেমনই আচার- এই প্রবাদের সার্থকতাকেই পাথেয় করে বিদেশ বিভুঁইয়ে থেকে শুধুমাত্র মা দুর্গার প্রতি তাদের ভালোবাসা দিয়েই নজির গড়ে ফেললেন মার্কিন মুলুকের এক ঝাঁক প্রবাসী বাঙালি৷

পাঁজি-পুঁথি এখানে ব্রাত্য, মন আর আত্মার বিশুদ্ধ ভক্তিটাই এখানে সম্বল৷ স্বদেশে যখন মায়ের বোধনের প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে, তখন সাত সমুদ্র তেরো নদীর পাড়ে মার্কিন মুলুকে বিল গেটসের পাড়া সিয়াটেলে মহা ধুমধামে আয়োজিত হচ্ছে মায়ের পুজো৷ সারা সপ্তাহ চূড়ান্ত ব্যস্ততা, হাতে সম্বল সপ্তাহান্তের দুটি ছুটির দিন শনি আর রবি৷ সেই দুদিনেই সেরে ফেলতে হবে মা দুর্গার আরাধনা৷ যেমন ভাবা তেমন কাজ৷ রাতারাতি বুক করে ফেলা হল কমিউনিটি সেন্টার, মা দুর্গার মূর্তির ব্যবস্থাও হয়ে গেল দেশে যোগাযোগ করে৷ এরপরে শুধুই আয়োজন৷ কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে মায়ের বোধনের আগেই বিল গেটসের পাড়া, স্টার বাকস কফির গ্লোবাল সদর দফতরের এলাকায় দুদিনের মধ্যে মা দুর্গার আরাধনা সেরে ফেললেন সিয়াটেলের ‘উত্তরায়ণ’ ক্লাবের সদস্যরা৷ এদের মধ্যে বিশ্বখ্যাত বিমান প্রস্তুতকারক সংস্থার ডিরেক্টর অভীক ভট্টাচার্য অন্যতম৷ তিনি নিজে তাঁর বাঙালি বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে দিন রাত পরিশ্রম করেছেন, মায়ের পুজোর ব্যবস্থা করেছেন নিষ্ঠা ভরে৷ শেষে সবার সহযোগিতায় উত্তরায়ণ ক্লাবের দুর্গাপুজো সম্পন্ন হল ৫ এবং ৬ অক্টোবর, শনি ও রবি দুদিন৷

সমালোচকরা হয়ত চোখ কোঁচকাবেন ! প্রশ্ন তুলবেন পুজোর নির্ঘন্ট না মানাকে কেন্দ্র করে৷ তাদের জন্য জবাব একটাই, পাঁজি পুঁথি এখানে ব্রাত্য৷ পেটের টানে বিদেশে কর্মরত বাঙালির প্রবল উত্সাহের কাছে হার মানছে মার্কিন মুলুকের দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততা ও পেশাদারিত্ব৷ এতটাই সাড়া ফেলেছে সিয়াটেলের প্রবাসী বাঙালিদের আয়োজিত এই দুর্গোত্সব যে এখানকার অধিবাসী বিশ্বখ্যাত শিল্পপতি বিল গেটসও চাঁদা পাঠিয়েছেন দুর্গা পুুজোর জন্য। এখানেই শেষ নয় ! উত্তরায়ণের বন্ধু আরও তিনটি ক্লাবও একইরকমভাবে দু দিন দুদিন করে দুর্গাপুজোর আয়োজন করবেন, তাদের নিজের নিজের এলাকায়৷ সেখানেও থাকবে নিষ্ঠাভরে মায়ের আরাধনা, আট থেকে আশির দেদার আনন্দ আর অবশ্যই বাঙালির বিখ্যাত পেটভুজো৷
