কুমোরটুলি কাণ্ডে ধৃত মা-মেয়ের জেল হেফাজত, শুনানি বারাসাত আদালতে হবে

কুমোরটুলি কাণ্ডে (Kumartuli Case) ধৃত মা এবং মেয়েকে বুধবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে পেশ করা হয়েছিল। বিচারক দুজনেরই জেল হেফাজতের (Jail Custody) নির্দেশ দিয়েছেন। তাদের দুজনকে এক দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার ব্যাঙ্কশাল আদালত কলকাতা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে, সমস্ত কেস ডায়েরি মধ্যমগ্রাম থানার হাতে দ্রুত তুলে দিতে হবে।যে হেতু অভিযুক্তেরা মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা এবং মূল ঘটনাও সেখানে ঘটেছে, তাই তদন্তভার মধ্যমগ্রাম(madhyamgram) থানার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।এই মামলার শুনানি বারাসাত আদালতে হবে। বৃহস্পতিবার থেকেই সেই শুনানি শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।যদিও মঙ্গলবারই ধৃত ফাল্গুনী ঘোষকে নিয়ে নর্থ পোর্ট থানার পুলিশ ফরেনসিক আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে মধ্যমগ্রামে গিয়েছিল। যে বাড়িতে ধৃতরা ভাড়া থাকতেন সেই বাড়ির পাশের পরিত্যক্ত জমি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে খুনে ব্যবহৃত ইট।

মঙ্গলবার রাতেই ফাল্গুনীকে নিয়ে মধ্যমগ্রামের বীরেশপল্লীতে তারা যে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন, সেখানে গিয়েছিল কলকাতার নর্থ পোর্ট থানার পুলিশ। সঙ্গে ছিল ফরেন্সিক দলও। সেখান থেকে ২০টি জিনিস বাজেয়াপ্ত করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, যে ইট দিয়ে পিসিশাশুড়ির মাথা, মুখ এবং‌ ঘাড়ে আঘাত করেছিলেন ফাল্গুনী, তা উদ্ধার করা গিয়েছে। ওই ইট বাড়ির বাইরে বাগানে ফেলে দিয়েছিলেন ফাল্গুনী। খুনের কথা পুলিশি জেরার মুখে তারা স্বীকার করে নিয়েছেন।

এরই পাশাপাশি, আরও বেশ কিছু জিনিস ঘটনাস্থল এবং আশপাশ থেকে বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। তার মধ্যে রয়েছে ধৃতদের মোবাইল, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড এবং ভ্যানিটি ব্যাগ। তবে যে অস্ত্র দিয়ে পা কাটা হয়েছিল সেটা উদ্ধার হয়নি। এই কাজে ফাল্গুনীদের কেউ সাহায্য করেছিলেন নাকি তারা নিজেরাই এই কাজ করেছেন, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।ভাড়া বাড়ির অন্তত পাঁচটি জায়গা থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছেন তদন্তকারীরা।

পিসিশাশুড়ির দেহ ট্রলি ব্যাগে ঢোকাতে ধারালো কোনও অস্ত্র দিয়ে তার দু’টি পা কেটে দিয়েছিলেন ফাল্গুনীরা। এই কাজে অন্য কেউ তাঁদের সাহায্য করেছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খুন করার পর মা-মেয়ে কাটা দেহ ট্রলিব্যাগে ভরে বেরিয়েছিলেন কলকাতা যাওয়ার জন্য। প্রথমে একটি ভ্যান ভাড়া করেছিলেন তারা। সেই ভ্যানচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে পুলিশ। ওই চালক জানিয়েছেন, দুজনে দোলতলায় যাওয়ার জন্য বলেছিলেন। এর জন্য ১৩০ টাকা ভাড়াও দিয়েছিলেন। পুলিশ জানতে চায়, তাদের কাছে ভারী ব্যাগ থাকায় তার সন্দেহ হয়েছিল কিনা। ভ্যানচালক বলেন, অস্বাভাবিক কিছু নজরে আসেনি। এবার ধৃতদের জেরা করে আর কী তথ্য পুলিশ জানতে পারে, সে দিকেই নজর সকলের।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মা ও মেয়ে বেলাগাম জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত ছিলেন। প্রায়ই রাতের দিকে অপরিচিত যুবকরা ওই বাড়িতে যাতায়াত করত বলে পড়শিদের অভিযোগ। আরও অভিযোগ, গভীর রাত পর্যন্ত ওই বাড়িতে মধুচক্র চলত। তারা পুরসভাকেও ঘটনাটি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয় নি।

এদিকে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, কুমোরটুলিতে ট্রলি ব্যাগে উদ্ধার হওয়া দেহটি ফাল্গুনীর পিসিশাশুড়ি সুমিতা ঘোষের।আপাতত বাড়িটি তালাবন্ধ রয়েছে। বাড়ির মালিককে পুলিশ ডেকে পাঠিয়েছে।