কুমোরটুলি-কাণ্ডে ধৃত মা-মেয়েকে বারাসাত আদালতে পেশ, টিআই প্যারেডের আবেদন জানাবে পুলিশ

টিআই প্যারেড শেষ হলে মা ও মেয়েকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানাবে পুলিশ।

কুমোরটুলি ঘাটে ট্রলি-কাণ্ডে ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত মা ও মেয়ে।ধৃত মা এবং মেয়েকে বুধবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে পেশ করা হয়েছিল।আদালত নির্দেশ দিয়েছিল যে এই মামলার শুনানি বারাসাত আদালতে হবে।সেই অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দুজনকেই বারাসত আদালতে নিয়ে যাওয়া হল। বৃহস্পতিবারই অভিযুক্তদের জেল হেফাজতের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। কলকাতা পুলিশকে এই সংক্রান্ত কেস ডায়েরি মধ্যমগ্রাম পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। যে হেতু অভিযুক্তেরা মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা এবং মূল ঘটনাও সেখানে ঘটেছে, তাই তদন্তভার মধ্যমগ্রাম থানার হাতে তুলে দেওয়া হয়।পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আদালতে টিআই প্যারেডের আবেদন জানাবে মধ্যমগ্রাম থানার পুলিশ। দুই অভিযুক্তকে অন্য মহিলাদের সঙ্গে একই সারিতে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হবে।এরপর সাক্ষীদের দ্বারা চিহ্নিতকরণের প্রক্রিয়া শেষ করা হবে।এরপর যে ট্রলি ব্যাগে দেহটি ভরা হয়েছিল, সেটিকেও চিহ্নিতকরণ করা হবে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, টিআই প্যারেড শেষ হলে মা ও মেয়েকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানাবে পুলিশ।

অভিযুক্ত ফাল্গুনী ও তার মা আরতি ঘোষকে বারাসাত আদালত ১৩ মার্চ পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দিলেন। অভিযুক্ত দুজনের হয়ে ৮ জনের বেশি  আইনজীবী জামিনের জন্য আবেদন করেন। আরতি ঘোষ কে ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। তার সুগার প্রেসার এই ধরনের রোগ আছে। বিষয়টি মেডিকেল গ্রাউন্ডে দেখা হোক।এমন কথা আদালতকে বলেন তাদের পক্ষের আইনজীবীরা।

যে ট্রলি ব্যাগ থেকে দেহ উদ্ধার হয়েছে সেই ট্রলি ব্যাগের চাবি তাদের কাছে ছিল না  এই দাবি করে আরতী ও ফাল্গুনীর জামিনের  আবেদন করেন আইনজীবীরা। শুনানি চলাকালীন আরতি ঘোষ অসুস্থ হয়ে পড়েন। যদিও আদালত জামিনের আবেদন বাতিল করে ১৪ দিন জেলে হেফাজতের নির্দেশ দেন।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সকালে কুমোরটুলি ঘাটের কাছে ধরা পড়েন অভিযুক্ত ফাল্গুনী ঘোষ এবং তাঁর মা আরতি ঘোষ। তাঁদের কাছে একটি ট্রলি ব্যাগ ছিল। তার ভিতর থেকে উদ্ধার করা হয় এক মহিলার টুকরো টুকরো দেহ। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে, মৃত মহিলা ফাল্গুনীর পিসিশাশুড়ি সুমিতা ঘোষ। তাঁকে খুন করে দেহ টুকরো টুকরো করে ট্রলিতে ভরেছিলেন মা এবং মেয়ে। তার পর ট্যাক্সি করে ট্রলি নিয়ে এসেছিলেন কুমোরটুলি এলাকায়। সেখানে গঙ্গায় ট্রলি ভাসিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। কিন্তু তার আগেই ধরা পড়ে যান।

মঙ্গলবার রাতেই ফাল্গুনীকে নিয়ে মধ্যমগ্রামের বীরেশপল্লীতে তারা যে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন, সেখানে গিয়েছিল কলকাতার নর্থ পোর্ট থানার পুলিশ। সঙ্গে ছিল ফরেন্সিক দলও। সেখান থেকে ২০টি জিনিস বাজেয়াপ্ত করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, যে ইট দিয়ে পিসিশাশুড়ির মাথা, মুখ এবং‌ ঘাড়ে আঘাত করেছিলেন ফাল্গুনী, তা উদ্ধার করা গিয়েছে। ওই ইট বাড়ির বাইরে বাগানে ফেলে দিয়েছিলেন ফাল্গুনী। খুনের কথা পুলিশি জেরার মুখে তারা স্বীকার করে নিয়েছেন।

এরই পাশাপাশি, আরও বেশ কিছু জিনিস ঘটনাস্থল এবং আশপাশ থেকে বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। তার মধ্যে রয়েছে ধৃতদের মোবাইল, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড এবং ভ্যানিটি ব্যাগ। তবে যে অস্ত্র দিয়ে পা কাটা হয়েছিল সেটা উদ্ধার হয়নি। এই কাজে ফাল্গুনীদের কেউ সাহায্য করেছিলেন নাকি তারা নিজেরাই এই কাজ করেছেন, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।ভাড়া বাড়ির অন্তত পাঁচটি জায়গা থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছেন তদন্তকারীরা।

পিসিশাশুড়ির দেহ ট্রলি ব্যাগে ঢোকাতে ধারালো কোনও অস্ত্র দিয়ে তার দু’টি পা কেটে দিয়েছিলেন ফাল্গুনীরা। এই কাজে অন্য কেউ তাঁদের সাহায্য করেছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খুন করার পর মা-মেয়ে কাটা দেহ ট্রলিব্যাগে ভরে বেরিয়েছিলেন কলকাতা যাওয়ার জন্য। প্রথমে একটি ভ্যান ভাড়া করেছিলেন তারা। সেই ভ্যানচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে পুলিশ। ওই চালক জানিয়েছেন, দুজনে দোলতলায় যাওয়ার জন্য বলেছিলেন। এর জন্য ১৩০ টাকা ভাড়াও দিয়েছিলেন। পুলিশ জানতে চায়, তাদের কাছে ভারী ব্যাগ থাকায় তার সন্দেহ হয়েছিল কিনা। ভ্যানচালক বলেন, অস্বাভাবিক কিছু নজরে আসেনি। এবার ধৃতদের জেরা করে আর কী তথ্য পুলিশ জানতে পারে, সে দিকেই নজর সকলের।