হালতু-কাণ্ডে নয়া মোড়। হালতুতে একই পরিবারে তিন জনের মৃত্যুর ঘটনায় দিন কয়েক আগেই চঞ্চল মুখোপাধ্যায় নামে এক ‘লোন এজেন্ট’ কে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এবার সেই ঘটনায় সোমশুভ্র মণ্ডল নামে অন্য এক লোন এজেন্টকে গ্রেফতার করল পুলিশ।সুভাষগ্রাম থেকে তাঁকে গ্রেফতার করেছে কসবা থানার পুলিশ। অভিযোগ, মৃত সোমনাথ এবং তার পরিবারকে ব্যাঙ্ক লোনের টাকা মেটাতে না পারায়, বারবার চাপ দিয়ে হেনস্থা করেছিলেন চঞ্চল এবং সোমশুভ্র দু’জনেই। এমনকী, সেটা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে সেই মানসিক চাপ নিতে পারেন নি ওই দম্পতি। সুইসাইড নোটে এই লোন এজেন্টের নামও দেওয়ালে লিখে গিয়েছেন মৃত সোমনাথ।

প্রসঙ্গত, সপ্তাহখানেক আগে হালতুর পূর্ব পল্লির একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় সোমনাথ রায় (৪০), সুমিত্রা রায় (৩৫) ও তাদের নাবালক ছেলের দেহ। সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরে গলায় দড়ির ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন সোমনাথ। তার পাশেই দড়িতে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিল তার স্ত্রীর দেহ। সোমনাথ পেশায় ছিলেন অটোচালক। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, বিপুল দেনায় ডুবেছিলেন তিনি। আসলে সোমনাথের ছেলে জন্ম থেকে জটিল রোগে আক্রান্ত। ছেলের চিকিৎসা করতে গিয়ে বিপুল টাকার প্রয়োজন ছিল। আর সেই টাকা জোগাড় করতেই একটি অটো বিক্রি করে দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা থেকে বিপুল টাকা লোন নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই টাকা শোধ করতে পারছিলেন না।অথচ এই দুই এজেন্টই টাকা শোধ দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন।প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছিল।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমনাথ একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়েছিলেন ৫ লক্ষ টাকা। লোন প্রদানকারী একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে ১.৬২ লক্ষ, একটি অ্যাপ থেকে ২ লক্ষ এবং অন্য একটি সংস্থা থেকে ২ লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলেন। টাকা ধার পেতে তাকে সাহায্য করেছিলেন এই সোমশুভ্রই।এর জন্য মোটা টাকা কমিশনও নিয়েছিলেন সোমশুভ্র। হালতুর ঘটনায় ইতিমধ্যেই সোমনাথের মামা এবং মামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার ৪ জন। পুলিশ জানিয়েছে, আরও এক লোন রিকভারি এজেন্টের খোঁজ চলছে।

আসলে সোমনাথ সপরিবারে তার মামাবাড়িতে থাকতেন। ওই বাড়ি নিয়েও মামা-মামির সঙ্গে তার অশান্তি হচ্ছিল বলে প্রতিবেশীদের দাবি। সোমনাথ, তার স্ত্রী এবং তার সন্তানের মৃত্যুর পর সুমিত্রার বাবা বিশ্বনাথ ভৌমিক এবং সুমিত্রার দিদি সুপর্ণা ভৌমিক কসবা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। সেই অভিযোগের উপর ভিত্তি করেই শুরু হয়েছে তদন্ত।
–

–

–

–

–

–

–

–
–