যুদ্ধ নয়, লক্ষ্য স্থির করে জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার তথ্য পেশ দুই মহিলা সেনাকর্তার

Date:

Share post:

কেন পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা তা নিয়ে কোনও ব্যাখ্যারই প্রয়োজন নেই। কিন্তু যারা প্রশ্ন তুলছেন হামলার ধরণ নিয়ে তাদের স্পষ্ট জবাব দেশের বিদেশ মন্ত্রক ও হামলার নেতৃত্বে থাকা দুই সেনা আধিকারিকের। যে নয় জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তার অতীত বর্তমান তুলে ধরে সেগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়া কতখানি প্রয়োজনীয় ছিল তুলে ধরেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশী এবং উইন কমান্ডার ভোমিকা সিং।

মঙ্গলবার মধ্যরাতে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের নয়টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে ভারতীয় সেনা। তুলে ধরা হয় কীভাবে সীমান্ত পেরিয়ে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের হামলায় ৩৫০ সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ৮০০-র বেশি সাধারণ মানুষ আহত হয়েছেন। ভারতীয় সেনার ৬০০ জওয়ান জঙ্গিদের হাতে শহিদ হয়েছে। ১৪০০ জওয়ান আহত হয়েছে। ভারতের উপর হামলা চালানো জঙ্গিরা পাকিস্তানের কোথায় প্রশিক্ষণ নিয়ে ভারতে বিভিন্ন জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে, তার বিস্তারিত পেশ করেন দুই মহিলা সেনাকর্তা। জানান মঙ্গলবার রাত ১.০৫ থেকে ১.৩০-এর মধ্যে জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজ চালানো হয়।

নয় জঙ্গি ঘাঁটি নিয়ে সেনার তরফে জানানো হয়:
মুজফফরাবাদের (পিওকে) সোয়াই নালা ক্যাম্প – এটাই লস্করের ডেরা। ২০২৪ সালে সেপ্টেম্বরে সোনমার্গে হামলা, অক্টোবরে গুলমার্গে হামলা এবং ২০২৫-এর পহেলগাম হামলার জঙ্গিরা এই ঘাঁটিতেই প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। সীমান্ত থেকে ৩০ কিমি দূরে।
মুজফফরাবাদের (পিওকে) সৈদনা বেলাল ক্যাম্প – জৈশ-ই-মহম্মদের জঙ্গলে প্রশিক্ষণ হত এখানে। অস্ত্র ও বিস্ফোরক রাখা হত।
কোটলির গুলপুর ক্যাম্প – সীমান্ত থেকে ৩০ কিমি দূরে। ২০২৩ সালের ২০শে এপ্রিল পুঞ্চে এবং ২০২৪ সালের জুনে একটি বাসে তীর্থযাত্রীদের উপর হামলার পরিকল্পনা করা হয় এখান থেকেই।
কোটলির আব্বাস ক্যাম্প – সীমান্ত থেকে ১৩ কিমি দূরে। লস্করের আত্মঘাতী বোমাড়ুদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত এখানে। একসঙ্গে ৫০ জঙ্গিকে রাখার ব্যবস্থা আছে। লস্করের ফিদায়েন জঙ্গীরা এই ঘাঁটিতেই থাকত।

ভিমবারের বার্নালা ক্যাম্প – সীমান্ত থেকে ৮ কিমি দূরে এই ক্যাম্প। এই ক্যাম্পে অস্ত্র ও বিস্ফোরকের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত এখানে। জঙ্গলে টিকে থাকার প্রশিক্ষণও এখানে দেওয়া হত।
শিয়ালকোটের সর্জাল ক্যাম্প – ২০২৫ সালের মার্চে জম্মু ও কাশ্মীরে চার পুলিশ কর্মীর উপর হামলায় যুক্ত এই ক্যাম্পের সদস্যরা। এখানেই তাদের প্রশিক্ষণ হয়। সীমান্ত থেকে মাত্র ৬ কিমি দূরে এই ক্যাম্প।
শিয়ালকোটের মেহমুনা জোয়া ক্যাম্প – হিজবুল মুজাহিদিনের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। জম্মুর কাঠুয়া এলাকায় সন্ত্রাসবাদী কাজ এখান থেকে চালানো হত। ২০১৬ পাঠানকোট সেনা বিমান ঘাঁটি হামলা এখান থেকেই চালানো হয়েছিল।

মুরিদকের মার্কাজ জোয়া ক্যাম্প – সীমান্ত থেকে ২৫ কিমি দূরে এই ক্য়াম্পই লস্কর-ই-তৈবার হেডকোয়ার্টার। আজমল কাসভ থেকে ডেভিড হেডলি এখানেই প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। বলাই বাহুল্য এই ক্যাম্প থেকে ২০০৮ মুম্বই হামলা পরিচালিত হয়েছিল।
ভাওয়ালপুরের মার্কাজ সুভান ক্য়াম্প – সীমান্ত থেকে ১০০ কিমি দূরে এই ক্যাম্পই জইশ-ই-মহম্মদের হেডকোয়ার্টার। নিয়োগ, প্রশিক্ষণ থেকে অন্যান্য ক্যাম্প চালানো হত এখান থেকেই। মাসুদ আজাহার এই ক্যাম্পে যাতায়াত করতেন।

এয়ার স্ট্রাইকের পরই বিশ্বের পাঁচ বড় দেশকে গোটা অপারেশন নিয়ে তথ্য পেশ করে। তথ্য দেওয়া হয় আমেরিকা, ইংল্যান্ড, সৌদি আরব, ইউএই ও রাশিয়াকে। সম্প্রতি পাক অধিকৃত কাশ্মীরে প্রায় ১ হাজার মাদ্রাসা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল পাকিস্তান। এরপরই পিওকে-তে জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস হওয়ায় স্পষ্ট হল মাদ্রাসাগুলিকেও কীভাবে জঙ্গি প্রশিক্ষণের কাজ করত পাকিস্তান।

spot_img

Related articles

বিতর্কের আবহেই মেগা ফাইনাল, জানুন ভারতের সম্ভাব্য প্রথম একাদশ

বিতর্কের আবহেই রবিবার এশিয়া কাপ (Asia Cup) ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে ভারত-পাকিস্তান (IND vs PAK)। এই নিয়ে চলতি টুর্নামেন্টে...

আমেরিকায় ফের বন্দুকবাজের হামলা, ঘটনায় নিহত ৩

মার্কিন মুলুকে (USA) ফের বন্দুকবাজের হামলা । ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তিন জন।  ভয়াবহ এই  ঘটনাটি ঘটেছে নর্থ ক্যারোলিনায়...

মহম্মদ আলি পার্কের মণ্ডপ দর্শন বন্ধ! উদ্যোক্তাদের অভিযোগের জবাব কলকাতা পুলিশের

পঞ্চমীর রাতে হঠাৎ দর্শনার্থীদের জন্য কলকাতার বিখ্যাত পুজো মহম্মদ আলি পার্কের মণ্ডপ ও দুর্গাদর্শন বন্ধ করে দেন উদ্যোক্তারা।...

”মায়ের স্নেহভরা মুখের উন্মোচনে আলোকিত হয় জগৎ”, মহাষষ্ঠীর শুভেচ্ছা অভিষেকের

রবিবার বোধনের মধ্য দিয়ে বাঙালির প্রাণের উৎসবের সূচনা হল।  এই দিনটার অপেক্ষায় বছরভর দিন গুণতে থাকে  দিন গোনার...