রাজ্যে এসে ভোটপাখি নরেন্দ্র মোদি বাংলার কুৎসা করেন। তার কিছুক্ষণ পরে সাংবাদিক বৈঠক করে জবাব দেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। শুক্রবার, স্যোশাল মিডিয়ার রাজ্যের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে মোদিকে মোক্ষম জবাব দিলেন মমতা। তথ্য তুলে মোদির মিথ্যার পর্দাফাঁস করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

নিজের স্যোশাল মিডিয়া পেজে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন,
“গতকাল উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ারে (Alipurduar) সংকীর্ণ ক্ষমতা লাভের জন্য স্বার্থপর এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার চালানো হয়েছিল। আলিপুরদুয়ার জেলার জনগণের জন্য আমাদের সরকারের উল্লেখযোগ্য উন্নয়নমূলক কাজগুলিকে ছোটো করে দেখানো এবং মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উচ্চমহল থেকে স্পষ্ট মিথ্যা প্রচার চালানো হয়। তাই, আমি আলিপুরদুয়ারের জনগণের জন্য আমাদের প্রকৃত কার্যকরী উদ্যোগ সম্পর্কিত কিছু তথ্য এবং তথ্য শেয়ার করতে চাই।“

মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, “প্রশাসনের কাজ সহজে পৌঁছে দিতে আমরা ২০১৪ সালের জুন মাসে আলিপুরদুয়ারকে বাংলার ২০তম জেলা হিসেবে ঘোষণা করেছি। জেলা গঠনের পর থেকে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নয়নমূলক অগ্রগতি হয়েছে। প্রতিটি বাসিন্দা কমপক্ষে একটি রাজ্য সরকারের প্রকল্প থেকে উপকৃত হয়েছেন।“

এর পরেই এক এক করে উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। তিনি লেখেন,
“• পরিকাঠামো উন্নয়ন: আমরা পরিকাঠামোগত ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি, যার শুরু মডেল সমন্বিত প্রশাসনিক ভবন, ‘ডুয়ার্স কন্যা’ (Dooars Kanya) দিয়ে।
* স্বাস্থ্যসেবা: আমরা ফালাকাটায় একটি মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, একটি আয়ুষ হাসপাতাল, একটি নার্সিং স্কুল, ২টি SNCU, ৭টি SNSU, ৩টি ব্লাড ব্যাংক এবং ২০৭টি ওয়েলনেস সেন্টার স্থাপন করেছি।
* শিক্ষা: আমরা আলিপুরদুয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, একটি সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ৭টি নতুন সরকারি কলেজ, ১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫২টি উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১৫টি হস্টেল তৈরি করেছি।

* জনগণের সুবিধার্থে: ৬টি কিষাণমন্দির, ৩টি সুফল বাংলা স্টল, ৮টি কর্মতীর্থ, ৫৬০টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, ৪টি বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন, একটি নতুন ফালাকাটা সুপার মার্কেট, একটি নতুন স্টেডিয়াম, একটি মহিলা পুলিশ স্টেশন এবং ৬০টি কার্যকর বাংলা সহায়তা কেন্দ্র তৈরি করেছি।“

এর পরে পয়েন্ট করে সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পগুলির তালিকা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি লেখেন,
“আমরা সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পের ক্ষেত্রে এগিয়ে আছি। আলিপুরদুয়ারের মানুষ ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছেন। বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ১২০০ কোটি টাকারও বেশি বিতরণ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
* লক্ষ্মীর ভাণ্ডার: ৩.৫৭ লক্ষ উপভোক্তা
* কন্যাশ্রী: ৫.৭২ লক্ষ উপভোক্তা
* খাদ্যাসাথী: ১২.৯১ লক্ষ উপভোক্তা
সবুজ সাথী: ২.৫৪ লাখ উউপভোক্তা
* রূপশ্রী: ৪৬০০০ সুবিধাভোগী
*স্বাস্থ্য সাথী: ৪ লক্ষেরও বেশি সুবিধাভোগী
* শিক্ষাশ্রী: ৩.১০ লক্ষ উপভোক্তা
* আকাশশ্রী: ২.০৫ লক্ষ উপভোক্তা
* তরুণের স্বপ্নের অধীনে ট্যাব: ৬৩ হাজার উপভোক্তা
* জয় জোহর পেনশন: ১৫৩৯৬ জন উপভোক্তা
* তপশীলী বন্ধু পেনশন: ২৯৪৮৬ জন উপভোক্তা
কৃষকবন্ধু (নতুন): ৯৫০০০ সুবিধাভোগী
* বাংলা শস্য বীমা: ১.১৮ লাখ উপভোক্তা
* বিনামূলে সামাজিক সুরক্ষা যোজনা: ২.২৭ লক্ষ উপভোক্তা“

সারারাজ্যে বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে চা-শ্রমিক (tea labours) ও আদিবাসীদের জমির পাট্টা দিয়েছেন রাজ্য সরকার। সেই হিসেবেও দিয়েছেন মমতা।
“পাট্টা বিতরণ:
আমরা ৩৭,০০০-এরও বেশি পাট্টা বিতরণ করেছি, যার মধ্যে ১৭,০৭২টি জমির পাট্টা, ১২,৬১৪টি শরণার্থী পাট্টা, ৬,৩৯৭টি বনের পাট্টা এবং ১,১২৭টি চা সুন্দরী পাট্টা রয়েছে।

মূল উন্নয়ন প্রকল্প:
জলস্বপ্ন প্রকল্পের অধীনে, ৩.৬৫ লক্ষ পরিবারের মধ্যে ২.১১ লক্ষ পরিবারের পানীয় জলের সংযোগ রয়েছে। বাংলার বাড়ি প্রকল্প ৪৫,৫১১ পরিবারকে আবাসনের জন্য ৫৪৬.১৩ কোটি টাকা প্রদান করেছে। কর্মশ্রী প্রকল্প ২.৮৪ লক্ষ মানুষের জন্য ১.২৮ কোটি কর্মদিবস তৈরি করেছে, যার ব্যয় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।
যোগাযোগ উন্নয়ন:
* পথশ্রী প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ রাস্তা সহ ৪,২৬৬ কিলোমিটারেরও বেশি রাস্তা প্রায় ৪,০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে।
* ১৫০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে ৪৫টি নতুন সেতু নির্মিত হয়েছে। বালা, বসরা, ডিমা, বুড়িতোর্শা, কুমাই এবং আরও অনেক নদীর উপর সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
* আলিপুরদুয়ারে ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি নতুন বাস স্ট্যান্ড নির্মাণ করা হয়েছে।“

চা বাগান এবং শ্রমিক উন্নয়ন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন:
“* আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) ৬১টি চা বাগানের জন্য, রাজ্য সরকার সফলভাবে ৮টি বন্ধ বাগান পুনরায় চালু করেছে, শ্রমিকদের মজুরি ২৫০টা (ভারতে সর্বোচ্চ) বৃদ্ধি করেছে, বন্ধ বাগানের শ্রমিকদের মাসিক আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয় এবং আমরা বিনামূল্যে রেশন, পানীয় জল, বিদ্যুৎ এবং চিকিৎসা সুবিধা প্রদান করি। মহিলা কর্মীদের সুবিধার্থে ক্রেশও তৈরি করা হচ্ছে।
* চা সুন্দরী প্রকল্প ২,৯৬৯টি পরিবারের জন্য ঘর তৈরি করেছে, যার মধ্যে আরও ১৪,০০০ পরিবার বাড়ি নির্মাণের জন্য আর্থিক সহায়তা থেকে উপকৃত হচ্ছে।“

শিল্প ক্ষেত্রে উন্নয়ন:
“দুটি শিল্প পার্কের উন্নয়ন চলছে এবং ১৪,১০৫টি এমএসএমই ইউনিট ৩৮,০০০ এরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।“

উত্তরবঙ্গে পর্যটনের বিপুল উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,
“চা পর্যটন প্রকল্প এবং দুটি ধর্মীয় পর্যটন সার্কিটের মাধ্যমে পর্যটনকে উৎসাহিত করা হচ্ছে, স্থানীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য হোমস্টে করা হচ্ছে।“
আদিবাসীদের উন্নয়েনর খতিয়ান দেন মুখ্যমন্ত্রী।
• “আমরা বাংলার রাজবংশী ও কামতাপুরীকে (বাংলা ও ইংরেজি ছাড়া) সরকারি ভাষার মর্যাদা দিয়েছি। তাই এখন আমাদের কাছে ১৩টি সরকারি ভাষা রয়েছে যার মধ্যে রয়েছে সাঁওতালি, কুরুখ, কুর্মালি, রাজবংশী, কামতাপুরি, পাঞ্জাবি, নেপালি, উর্দু, হিন্দি, ওড়িয়া, তেলেগু।
• তাদের সংস্কৃতি প্রচারের জন্য উন্নয়ন বোর্ড এবং একাডেমি গঠন করা হয়েছে।
• ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার জন্মদিন সরকারি ছুটির দিন, এবং তার সংস্কার করা বাড়িটি এখন একটি জাদুঘর।
• প্রায় ২০০ রাজবংশী স্কুলকে সরকারি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
• ১০০টি সাদ্রি ভাষা স্কুল খোলার প্রস্তাব করা হয়েছে। সিলেবাস তৈরির প্রক্রিয়া চলছে।
• রাজ্য পুলিশে নারায়ণী ব্যাটালিয়ন (সদর দপ্তর – মেখলিগঞ্জ) গঠন করা হয়েছে।
বাবুরহাটে মহাবীর চিলা রায়ের ১৫ ফুট উঁচু ব্রোঞ্জের মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে।“
উপজাতি উন্নয়নেরও খতিয়ান দেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। লেখেন
“* সারনা ও সারি ধর্মের স্বীকৃতির জন্য একটি বিল পাশ করা হয়েছে।
* অ-উপজাতিদের কাছে উপজাতিদের জমি হস্তান্তর নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
* বন পাট্টা বিতরণ করা হচ্ছে।
* বিরসা মুন্ডা এবং পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর জন্মদিন এবং হুল দিবসে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে এবং করম পুজোর দিন ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
* ৩ লক্ষেরও বেশি উপজাতি মানুষ ‘জয় জোহর’ বার্ধক্য ভাতা পান
* সাঁওতালি মাধ্যম স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কলেজগুলিতে সাঁওতালি ভাষায় ডিগ্রি কোর্স চালু করা হয়েছে।
* জাহের থান এবং মাঝি থানগুলির উন্নয়ন করা হয়েছে।
* উপজাতি শিল্পীদের ধামসা মাদল বিতরণ করা হচ্ছে।“
সব শেষে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, “আলিপুরদুয়ারের সামগ্রিক উন্নয়নের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার তুলে ধরা অনেক উদ্যোগের মধ্যে এগুলি কয়েকটি। আমরা সর্বদা বাংলার মানুষের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করি, তাই তারা আমাদের সাথে আছে। আমরা ধর্ম, জাতি, বর্ণ ভিত্তিতে মানুষকে বিভেদ করি না। আমরা নিরন্তর মানুষের জন্য কাজ করি, সর্বদা তাদের পাশে থাকি“।
Yesterday a vicious and false campaign was there at Alipurduar in North Bengal from a self-serving and politically motivated point of view for narrow power gains. This was a campaign that attempted to downplay and erase out the significant development works of our government…
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) May 30, 2025