সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে রাজ্যের দেওয়া বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদন করতে পারবেন ২০১৬ এর OBC এ ক্যাটাগরিভুক্ত চাকরিপ্রার্থীরা। তবে কোন বিশেষ ক্যাটাগরি হিসেবে আবেদন করতে পারবেন না তাঁরা। ৩০ মে-এর বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী যদি তাঁরা আবেদনের যোগ্য হন তবেই আবেদন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে বিশেষ কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। বৃহস্পতিবার, এই নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta High Court) একক বেঞ্চ। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে যেহেতু OBC সংক্রান্ত রাজ্যের তরফে দায়ের করা দুটি স্পেশাল লিভ পিটিশনের মামলা সুপ্রিম কোর্টের পেন্ডিং রয়েছে তাই এখনই এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। তাই, এসএসসির নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আবেদন করতে পারছেন না ওবিসি এ তালিকাভুক্তরা। ৩০ মে রাজ্যের দেওয়া বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদন করতে হবে তাঁদের। ওবিসি ক্যাটাগরি হিসেবে কোনও ছাড় পাওয়া যাবে না এবং আবেদনের সময়সীমাও বাড়ানো যাবে না বলে নির্দেশ হাই কোর্টের বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের।

এককথায়, ওবিসি ক্যাটাগরি সংক্রান্ত মামলায় শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন অনিশ্চয়তা। স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ সংক্রান্ত নির্দেশিকা ও সুপ্রিম কোর্টের একাধিক নির্দেশের জটিলতায় আটকে গিয়েছে আবেদনকারীদের ভবিষ্যৎ। বৃহস্পতিবার আবেদনকারীদের আইনজীবী এম আর শামশাদ, সিঙ্গেল বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বহু আবেদনকারী ওবিসি হিসেবে বিবেচিত হলেও বর্তমানে কমিশনের তরফে তাদের জেনারেল ক্যাটাগরিতে আবেদন করতে বলা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের ৩ এপ্রিল এবং ১৭ এপ্রিল দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী, যোগ্য প্রার্থীরা তাদের নিজ নিজ ক্যাটাগরিতে আবেদন করতে পারবেন এবং পূর্ববর্তী পরীক্ষায় বসা থাকলে বয়সের ছাড় পাবেন। ১৭ এপ্রিলের নির্দেশে বলা হয়েছিল, রাজ্য সরকার ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করবে এবং তার আগে পর্যন্ত যোগ্য প্রার্থীরা শিক্ষকতা চালিয়ে যেতে পারবেন।

এদিকে, ৩০ মে রাজ্যের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তিতে কোনও নির্দিষ্ট ক্যাটাগরি ছাড়া আবেদন করতে বলা হয় চাকরিহারাদের। এর ফলেই সমস্যা তৈরি হয়েছে। কারণ, ওবিসি (এ)ক্যাটাগরির ২০১৬ সালের প্যানেলের প্রার্থীদের নম্বর ৫০ শতাংশের নিচে। যেখানে নতুন বিজ্ঞপ্তিতে ন্যূনতম যোগ্যতার মান ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। আগে, ৪৫ শতাংশ নম্বর থাকলেই আবেদন করা যেত। তাই ওবিসি (এ) ক্যাটেগরির চাকরিপ্রার্থীরা আবেদন করতে পারছেন না রাজ্যের দেওয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে।

এই মামলায় বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের পর্যবেক্ষণ, ২০১০ সালের ওবিসি তালিকা অনুযায়ী ৬৬টি শ্রেণিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ অনুযায়ী, বর্তমান নিয়োগে এই তালিকার বাইরে থাকা কাউকে ওবিসি হিসেবে গণ্য করা যাবে না। ফলে, যেসব আবেদনকারী পরবর্তীতে ওবিসি ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, তাদের এখন জেনারেল ক্যাটাগরিতেই আবেদন করতে বলা হচ্ছে। একইসঙ্গে পরে ওবিসি ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা সংক্রান্ত দুটি মামলা সুপ্রিম কোর্টে পেন্ডিং রয়েছে। তাই আদালত ওই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারছে না। সেক্ষেত্রে যদি প্রার্থীরা চান, তাহলে তাঁরা সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাতে পারেন।

এদিন স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ওবিসি সংক্রান্ত দুটি নির্দেশের বিরুদ্ধেই সুপ্রিম কোর্টে স্পেশাল লিভ পিটিশন (SLP) দায়ের হয়েছে এবং ওই মামলার শুনানি মঙ্গলবার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ১৭ জুনের উচ্চ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে বলা হয়েছে, ২০১০ সালের পূর্ববর্তী ওবিসি তালিকা অনুযায়ী আবেদনকারীদের আবেদন গ্রহণ করা যাবে না। তাই, যেহেতু বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন এবং কোনও স্থগিতাদেশ (stay order) নেই, তাই তারা পুরনো নীতি মেনে চলতে বাধ্য স্কুল সার্ভিস কমিশন।

দুপক্ষের বক্তব্য শোনার পর, কলকাতা হাইকোর্টের একক বেঞ্চের নির্দেশ, আবেদনকারীরা ৩০ মে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে আবেদন করতে পারবেন, তবে ওবিসি ক্যাটাগরিতে নয়। যেহেতু ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে, তাই সময়সীমা বাড়ানো সম্ভব নয়। আবেদনকারীরা যদি চান, তাহলে নির্ধারিত তিন সপ্তাহের মধ্যে এই রিট পিটিশনের বিরুদ্ধে এফিডেফিট ফাইল করতে পারেন। সময়সীমা বাড়ানোর আর্জির জন্য আবেদনকারীদের “অ্যাপ্রোপ্রিয়েট বেঞ্চ”-এর দ্বারস্থ হতে হবে।

–

–

–

–

–
–
–
–