শহিদ ক্ষুদিরামের ফাঁসির রায়ের ঐতিহাসিক নথি হাতে পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। খতিয়ে দেখার পরেই তীব্র নিন্দা করেছেন বাংলার প্রশাসনিক প্রধান। যেভাবে বিজেপি ক্ষুদিরাম বসুকে সিং করেছে তার প্রতিবাদে মমতা চাইছেন বাংলা থেকে ঝড় উঠুক। কেন এই অপমান? বাঙালি কিশোর ফাঁসির মঞ্চে যিনি জীবন দিয়েছেন অবাঙালিরা হিন্দিতে সিনেমা বানিয়ে ক্ষুদিরাম বসুকে ক্ষুদিরাম সিং লিখবে! এমনকী তাঁকে পাঞ্জাবের ছেলে হিসেবেও দেখানো হয়েছে। এরই প্রতিবাদ করুক বঙ্গবাসী- চাইছেন মমতা।

সামনে এসেছে সেই ঐতিহাসিক নথি। এই সেই সরকারি নথি যেখানে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের শহিদ বাংলার বীর বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর (Khudiram Basu) ফাঁসির রায় ঘোষণা করেছিল হাইকোর্ট। কী আছে আদালতের এই সরকারি নথিতে? ফোর্ট উইলিয়ামে বেঙ্গল হাইকোর্ট-এর রায়ের কপিতে বলা হয়েছে, ত্রৈলোক্যনাথ বসুর পুত্র ক্ষুদিরামকে তার অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় প্রাণদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। এবিষয়ে সেশন কোর্ট যে ট্রায়াল করেছিল এবং যে রায় দিয়েছিল তা বহাল রেখে আসামি পক্ষের আবেদন খারিজ করা হচ্ছে। ব্রিটিশ শাসকের পক্ষে হাইকোর্টের দুই বিচারপতি ১৯০৮ সালের ১৩ জুলাইয়ের রায়ে ক্ষুদিরামের আপীল খারিজ করে ফাঁসির সাজাই বহাল রাখেন।

পরাধীন অবিভক্ত ভারতের মুজাফফরপুরে ব্রিটিশ বিচারপতি কিংসফোর্ডকে হত্যার জন্য বোমা ছোঁড়েন অনুশীলন সমিতির কিশোর বিপ্লবী ক্ষুদিরাম। সঙ্গে ছিলেন আরেক বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকী। কিন্তু বিচারপতির বদলে মৃত্যু হয় দুই ব্রিটিশ মহিলার। এরপর ধরা পড়ার মুখে নিজের রিভালবারের গুলিতে আত্মঘাতী হন প্রফুল্ল। কিশোর ক্ষুদিরামকে গ্রেফতার করা হয় ৩০ এপ্রিল। বিচারের পর ১৯০৮ সালের ১১ অগাস্ট ক্ষুদিরাম বসুকে ফাঁসি দেয় ব্রিটিশ শাসক।

বাঙালি দেখলে অপমান, অত্যাচার, হেনস্থা। কেন? স্বাধীনতার জন্য যাঁরা জীবন দিয়েছেন তাঁদের অপমান কেন? এটাই যেন বিজেপির প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষুদিরাম বসুর ১১৮তম আত্মবলিদান দিবসে তাঁকে স্মরণ করে ভাষা-সন্ত্রাসীদের তুলোধনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee)। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি জানিয়েছিলেন, “সম্প্রতি একটি হিন্দি ছবিতে বিপ্লবী ক্ষুদিরামকে ‘সিং’ বলা হয়েছে। স্বাধীনতার জন্য যাঁরা জীবন দিয়েছেন তাঁদের অপমান করা হচ্ছে কেন? পথিকৃৎ অমর বিপ্লবী ক্ষুদিরামকে ধরেও টানাটানি করবে ভাষা-সন্ত্রাসীরা?
আমাদের মেদিনীপুরের অদম্য কিশোরকে দেখানো হয়েছে পাঞ্জাবের ছেলে হিসেবে। অসহ্য!
আমরা কিন্তু সবসময় দেশপ্রেম ও সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের প্রতীক এই মানুষটিকে শ্রদ্ধা জানিয়েছি। ক্ষুদিরাম বসুর জন্মস্মৃতি বিজড়িত মহাবনী ও সংলগ্ন অঞ্চলের আরো বেশি উন্নয়নের জন্য মহাবনী ডেভেলপমেন্ট অথরিটি করেছি।

এছাড়া মহাবনীতে শহিদ ক্ষুদিরামের মূর্তি স্থাপন থেকে শুরু করে পাঠাগার সংস্কার, নতুন একটি সুবিশাল অডিটোরিয়াম, কনফারেন্স রুম – সবই করা হয়েছে। একটি মুক্তমঞ্চও করা হয়েছে। পাশাপাশি দর্শনার্থীদের জন্য নির্মিত হয়েছে আধুনিক কটেজ, ঐতিহ্যবাহী ক্ষুদিরাম পার্কের পুনরুজ্জীবন করা হয়েছে। পুরো এলাকাটাকে আলো দিয়ে সাজানোও হয়েছে।

শুধু তাঁর জন্মস্থান মেদিনীপুরেই নয়, এই মহান বিপ্লবীকে শ্রদ্ধা জানাতে কলকাতায় একটি মেট্রো স্টেশনের নামও আমরা ওনার নামে রেখেছি। আমরা গর্বিত।

–

–

–

–