দুর্নীতি দমনে মোদির মিথ্যাচার বারবার ফাঁস করেছে তৃণমূলই। অথচ বারবার বিজেপির ওয়াশিং মেশিনে গিয়ে অন্য দলের নেতারা যেভাবে নিজেদের দুর্নীতি (corruption) ধুয়ে সাফ করেছেন, তাতেই স্পষ্ট নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) দুর্নীতি দমনের আসল রূপ। বাংলার শুভেন্দু অধিকারী থেকে অসম, মহারাষ্ট্রে সেই উদাহরণ স্পষ্ট। এর পরেও দুর্নীতি দমনে আইন আনার দাবি করে বাংলার মানুষকে বিভ্রান্ত করার মোদির চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিল বাংলার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস।

শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikary), হিমন্ত বিশ্বশর্মা (Himanta Biswa Sarma), অজিত পাওয়ারের (Ajit Pawar) মতো দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের দলে নিয়েছেন। সেই নরেন্দ্র মোদি দুর্নীতি নিয়ে বড় বড় কথা বলে গেলেন। একবার তো ভাবুন, মঞ্চে আপনার পাশে কে বসে আছে? মোদির মুখে দুর্নীতি রুখতে বিলের কথা শুনে সাংবাদিক বৈঠকে গর্জে উঠেছেন মন্ত্রী শশী পাঁজা ও তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। ছবি দেখিয়ে কুণাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী কাঁচের ঘরে বসে ঢিল করে দিয়েছেন। জেজি অভিযোগগুলো বিজেপি এবং মোদি সরকারের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে উঠছে, যেগুলোর তিনি কোন উত্তর দিতে পারেন না, সেইগুলো তিনি বলছেন অন্যের দিকে আঙুল তুলে। হিমন্ত বিশ্বশর্মা থেকে শুরু করে মহারাষ্ট্রে অজিত পাওয়ার বাংলার তথাকথিত বিরোধী দলনেতা, যাদের বিরুদ্ধে বিজেপি অভিযোগ করেছিল, তারা তদন্ত এড়াতে বিজেপিতে গিয়েছেন। এখন তাদের পাশে বসিয়ে নরেন্দ্র মোদি দুর্নীতি বিরুদ্ধে কথা বলছেন। এ কেমন নৈতিকতা। শুনে রাখুন মোদিজি, বাংলায় আপনি যতবার আসবেন, সেই অনুপাতে বাংলায় তৃণমূলের আসন সংখ্যা বাড়বে। আমরা ২০১৬ সালে দেখেছি, ২০২১ সালে দেখেছি, আবকি বার ২০০ পার স্লোগান। ২০২৪ সালেও তৃণমূল বেড়ে গিয়েছে বিজেপি কমে গিয়েছে। ২০২৬-এও চতুর্থবার বিপুল আসনে জিতে ক্ষমতায় আসবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লিখে রাখুন।

বাংলা এসে দুর্নীতিগ্রস্তকে পাশে বসিয়ে দুর্নীতি দমনের কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলার এই তথাকথিত বিরোধী নেতার বিরুদ্ধে নারদকাণ্ডে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সারদা মামলাতেও তিনি অভিযুক্ত। খোদ সুদীপ্ত সেন তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক তছরূপের অভিযোগ করেছেন। তারপর তিনি বিজেপির ওয়াশিং মেশিনে ঢুকে সাধু হয়েছেন। তেমনি মহারাষ্ট্রের অজিত পাওয়ার (Ajit Pawar)। তাঁর বিরুদ্ধেও কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ। অভিযোগ তুলেছিলেন আপনারাই। এখন তাঁকেও আপনি সঙ্গী করেছেন। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা (Himanta Biswa Sarma)। তাঁর বিরুদ্ধেও সারদা-কাণ্ডে ভুরি ভুরি দুর্নীতির অভিযোগ। তাঁকেও বরণ করে নিয়েছেন দলে। আর এদিন মঞ্চে যাঁকে আপনি পাশে বসিয়েছিলেন, সেই রবনিত সিং বিট্টু (Ravneet Singh Bittu) নারী নির্যাতনে অভিযুক্ত। আবার ব্রিজভূষণ, যাঁকে আপনি দেশের প্রতিনিধি করে অপারেশন সিঁদুরের প্রচারে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধেও মহিলা খেলোয়াড়দের অভিযোগ রয়েছে। তাই আপনার মুখে দুর্নীতি বা নারী সম্মান রক্ষার কথা মানায় না।

তারপর আপনি আবার, অনুপ্রবেশ নিয়ে কথা বললেন। অথচ সীমান্ত পাহারা দেয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিএসএফ। এ তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের (Amit Shah) বিরুদ্ধে চূড়ান্ত অনাস্থার বহিঃপ্রকাশ। প্রধানমন্ত্রী, আপনি যে ক’টা অভিযোগ তুলেছেন বাংলা এসে, প্রত্যেকটা অভিযোগে বিজেপি নিজে অভিযুক্ত।

এখন আপনি দুর্নীতি দমনে বিল আনার কথা বলছেন, আপনার নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি অভিযোগ। ৯৪ জন সাংসদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ, যার মধ্যে ৬৩ জনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী, আপনার দল দুর্নীতির তদন্তে থাকা ২৫ জন বিরোধী নেতাকে দলে ভিড়িয়েছে, যার মধ্যে ২৩ জনকে ক্লিনচিট দেওয়া হয়েছে।

আপনার মন্ত্রিসভায় ২৮ জন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে একাধিক অপরাধের মামলা রয়েছে, যার মধ্যে ১৯ জনের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা, অপহরণ ও নারী নির্যাতনের মতো অভিযোগ রয়েছে। আপনার খাঁচাবন্দি তোতাপাখি ইডি গত এক দশকে ৫,৮৯২টি মামলার মধ্যে মাত্র ৮টিতে দোষী সাব্যস্ত করতে পেরেছে। বিজেপি আসলে ই-টু নীতি চালায়। প্রথম ‘ই’ হল নির্বাচন কমিশনকে অপব্যবহার করে ভোটারদের অধিকার হরণ করা। যদি প্রথম ‘ই’ ব্যর্থ হয়, তখন দ্বিতীয় ‘ই’ অর্থাৎ ইডি-কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা। ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল দুর্নীতি দূর করার জন্য নয়, আসলে এটি বিরোধীদের নির্মূল করার একটি প্রচেষ্টা।

আরও পড়ুন: কালা আইনের জন্য JPC একটা নাটক: তৃণমূলের কেউ থাকবে না কমিটিতে

আর বিজেপির সেই ক্লান্তিকর এবং চেনা সূত্র। এক, ইডি ও সিবিআই একজন বিরোধী নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের করবে। দুই, সেই নেতা তারপর বিজেপিতে যোগদান করবে। তিন, বিজেপিতে যোগদানের পর তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ প্রত্যাহার করা হবে।ওয়াশিং মেশিনে সব দুর্নীতি ধুয়ে সাফ হয়ে যাবে।

–

–
