
হেমিংওয়ে শটগানের গুলিতে মারা গেছেন । তাঁর স্ত্রী বলেছেন অস্ত্র পরিষ্কার করার সময় মারা গেছেন । আর্নেস্ট হেমিংওয়েকে আজ তাঁর বাসভবনে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে । তাঁর মাথায় শটগানের গুলির ক্ষত ছিল । তাঁর স্ত্রী মেরী বলেন , অস্ত্র পরিষ্কার করার সময় লেখক দুর্ঘটনাক্রমে আত্মহত্যা করেছেন ।

দুর্ঘটনাক্রমে আত্মহত্যা ?
জেনেবুঝে আত্মহনন নয় তাহলে ?
সেই হেমিংওয়ে , লেখার জন্য যিনি নোবেল পুরস্কার পান এবং লেখার জন্য যিনি পুলিৎজার পুরস্কার পান , ২১ জুলাই যাঁর বয়স ৬২ বছর হতো ।
ব্লেইন কাউন্টি শেরিফ ফ্র্যাঙ্ক হিউইট প্রাথমিক তদন্তের পর বলেছেন , এই মৃত্যুটি একটি দুর্ঘটনা বলে মনে হচ্ছে । কোনও ভুলের প্রমাণ নেই ।

দাড়িওয়ালা , পিপা-বুকওয়ালা লেখকের মৃতদেহ একেবারে সাধারণ পোশাকে তাঁর স্ত্রী তাঁদের আধুনিক কংক্রিটের বাড়ির প্রবেশপথে দেখতে পান । পায়জামা পরা অবস্থায় নিথর হয়ে পড়ে থাকা লেখকের দেহের পাশেই দ্বি-ব্যারেল , ১২- গেজ একটা শটগান পড়েছিল , যার একটি চেম্বার খোলা ছিল । লেখকের চতুর্থ স্ত্রী মিসেস হেমিংওয়ে , যাঁকে তিনি ১৯৪৬ সালে বিয়ে করেন , তিনি একটি বিবৃতি দিয়েছেন , সেটি হলো : আজ সকালে ( ৭ টা ৩০ মিঃ ) বন্দুক পরিষ্কার করার সময় মিস্টার হেমিংওয়ে দুর্ঘটনাক্রমে আত্মহত্যা করেছেন । তাঁর শেষকৃত্যের জন্য কোনও সময় নির্ধারণ করা হয় নি , যা ব্যক্তিগত স্তরে আলোচিত হবে ।

লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে তাঁর শরীরের ২০০ পাউন্ড ওজন নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত ছিলেন । তাঁর দৈহিক উচ্চতা ছিল ছয় ফুট । কেচাম মোটেলের মালিক চাক অ্যাটকিনসন , যিনি কুড়ি বছর ধরে লেখকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু , গতকাল তাঁর সঙ্গে ছিলেন । তিনি বলেন , লেখকের মেজাজ বেশ ভালোই ছিল । আমরা বিশেষ কিছু নিয়ে কথা বলি নি ।

লেখকের আরেক বন্ধু এবং ঘটনাস্থলে পৌঁছোনো প্রথম আইনি কর্মকর্তা মার্শাল লেস জ্যাঙ্কো বলেছেন যে , লেখককে বিষন্ন , এমনকি রোগগ্রস্ত দেখাচ্ছিল । গুলি চলার সময় বাড়ির একমাত্র ব্যক্তি মিসেস হেমিংওয়ে উপরের তলার একটি ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন । তিনি ঘুমের ওষুধ খেতেন । গুলির শব্দে তিনি জেগে ওঠেন এবং নেমে এসে দেখেন তাঁর স্বামীর নিথর দেহ ।

লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ের বাবা ডঃ ক্ল্যারেন্স-ই হেমিংওয়ে শিকার করতে ভীষণ ভালোবাসতেন ।
১৯২৮ সালে ৫৭ বছর বয়সে ডায়াবেটিসের কারণে হতাশ হয়ে তাঁর ইলিনয়ের ওক পার্কের বাড়িতে তিনি আত্মহত্যা করেন । লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে অতিরিক্ত মদ্যপান করতেন এবং তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন , এমন কথাও তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল থেকে উঠে আসে । ১৯৬১ সালের ২-রা জুলাই , হেমিংওয়ে তাঁর আইডাহোর কেচামের বাড়িতে মারা যান । তাঁর মৃত্যুর পরের দশকগুলোতে তাঁদের পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মের বেশ কয়েকজন আত্মহত্যা করেন ।
তিনি নাকি ভাবতে শুরু করেছিলেন যে , লেখক হিসেবে তাঁর সোনার সময় গত হয়েছে । তাঁর প্রতিভা নির্বাপিত হতে শুরু করেছে , তাঁর সৃজনশীলতা ফুরিয়ে আসছে । তাঁর আর নতুন কিছু দেওয়ার নেই । তাঁর গতিবিধির ওপর এফ বি আই-এর লাগাতার নজরদারি ও তাঁর স্বাধীন জীবনের ওপর অলিখিত নিষেধাজ্ঞা কি তাঁকে চরম হতাশার অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছিল ? আর্থিক অনটন ? দাম্পত্য কলহ ? তাঁর শরীরে কি ক্যান্সার বাসা বেঁধেছিল ? এমন বিপুল যাঁর প্রাণশক্তি , যিনি স্পেনের ফ্যাসিস্ট ফ্রাঙ্কোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য হাতে অস্ত্র তুলে নিতে দ্বিধা করেন নি , তাঁর অন্তর্গত রক্তের ভিতরে কোন বিপন্ন বিস্ময় তাঁকে ক্লান্ত , আরও ক্লান্ত করেছিল ? কেন তিনি হঠাৎ করেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন ? তাঁর মৃত্যু কি সত্যিই একটা দুর্ঘটনা ? এসব প্রশ্নের জবাব আজও পাওয়া যায় নি । কোনোদিনই কি পাওয়া যাবে ?

আরও পড়ুন- গরুমারা ও চাপরামারিতে পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ মনিটরিং কমিটি গঠন রাজ্যের

_

_

_
_