ফুলচাষে বিশ্বমানের পরিকাঠামো গড়ে তুলতে উদ্যোগী হচ্ছে রাজ্য সরকার। উদ্যানপালন দফতর নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে দার্জিলিং ও নদীয়ায় ফুল চাষের দুটি উৎকর্ষ কেন্দ্র বা সেন্টার অফ এক্সেলেন্স স্থাপন করতে চলেছে । উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়ার জন্য দার্জিলিং জেলার মংপু এবং নদীয়ার আয়েশপুরে প্রায় ২০ একর করে জমি চিহ্নিত করা হয়েছে । প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ইতিমধ্যেই নেদারল্যান্ডস সরকারের সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে। বিষয়টি চূড়ান্ত হলে রাজ্যের ফুলচাষিদের আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর চাষপদ্ধতি, ফুল প্রক্রিয়াকরণ ও বিপণনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে । ফুল উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও রফতানির ক্ষেত্রে এই দুই কেন্দ্র ভবিষ্যতে রাজ্যের ফুলচাষকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

রাজ্যের উদ্যানপালন দফতরের এক কর্তা বলেন, “বাংলায় গাঁদা, গোলাপ, রজনীগন্ধা, অর্কিডের মতো ফুলের উৎপাদন অনেক হলেও তা এখনও মূলত অভিজ্ঞতানির্ভর। বৈজ্ঞানিক চাষপদ্ধতির অভাবে উৎপাদনশীলতা ও গুণমান দুই-ই প্রভাবিত হয়। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানির সুযোগও সীমিত থাকে।”

রাজ্য সরকারের মতে, এই কেন্দ্রগুলিতে কেবল ফুল উৎপাদন নয়, ফুল থেকে সুগন্ধি, তেল ও অন্যান্য মূল্যসংযোজিত পণ্য তৈরিরও পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। এর ফলে রাজ্যের ক্ষুদ্র শিল্প ও গৃহভিত্তিক উদ্যোক্তারা নতুন ব্যবসার সুযোগ পাবেন।

জানা গিয়েছে, চলতি মাসেই নেদারল্যান্ডস থেকে দু’টি বিশেষজ্ঞ দল আসবেন দার্জিলিং ও নদীয়ায়। তাঁরা স্থানীয় মাটি, জলবায়ু ও পরিবেশগত উপাদান বিশ্লেষণ করবেন এবং কোন ফুলের জাত ও প্রযুক্তি সবচেয়ে উপযুক্ত হবে, তা নিয়ে রাজ্য দফতরের সঙ্গে যৌথ পরিকল্পনা করবেন।

প্রশাসনের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, “এই প্রকল্প সফল হলে পশ্চিমবঙ্গ ফুলচাষের মানচিত্রে একটি বড় অবস্থান দখল করবে। শুধু উৎপাদন নয়, গুণমান, বিপণন ও রফতানির ক্ষেত্রেও এটি এক মাইলফলক হবে।”

তবে কেন হাওড়া বা মেদিনীপুরের মতো ফুলচাষ সমৃদ্ধ জেলাগুলিতে কেন্দ্র করা হচ্ছে না, সে বিষয়ে দফতরের দাবি—দার্জিলিং ও নদীয়ায় সরকারি জমি সহজলভ্য হওয়ায় সেখানে প্রকল্প বাস্তবায়ন তুলনামূলকভাবে দ্রুত সম্ভব হবে। রাজ্যের যেকোনও জেলার ফুলচাষিরা পরবর্তী সময়ে এই কেন্দ্রগুলিতে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন।

এই ইন্দো-ডাচ উদ্যোগ সফল হলে রাজ্যের ফুলচাষের পরিধি যেমন বাড়বে, তেমনই আন্তর্জাতিক বাজারেও ‘বেঙ্গল ফ্লাওয়ার্স’ নামটি স্থায়ী ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে পারে—এমনই আশাবাদ কৃষি ও উদ্যানপালন মহলে।

আরও পড়ুন – ‘স্মার্ট সিটি’র পথে সেক্টর ফাইভ, চালু হচ্ছে স্বয়ংক্রিয় নজরদারি ব্যবস্থা

_

_
_


