ডবল ইঞ্জিন বিজেপির ত্রিপুরায় তৃণমূল প্রতিনিধিদলের জেদের মুখে পিছু হঠতে বাধ্য হল ত্রিপুরা পুলিশ। একদিকে তৃণমূলের তরফ থেকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে, কীভাবে পুলিশের সামনে ভাঙচুর চালানো হয় তৃণমূল সদর দফতরে (TMC party office)। অন্যদিকে সেই ভাঙচুর হওয়া দফতরে তৃণমূল প্রতিনিধিদল যাওয়ার আগে সামান্য গাড়ি পাওয়া নিয়ে চরম বাধার মুখে বাংলার শাসকদল। তবে বিমান বন্দর থেকে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছানোর তৃণমূল প্রতিনিধিদলের অদম্য জেদের কাছে হার মেনে শেষ পর্যন্ত পুলিশই তাঁদের গাড়ির ব্যবস্থা করে পৌঁছে দেয় বনমালীপুরের সদর দফতরে। সেখান থেকে ত্রিপুরা পুলিশের ডিজি ও ত্রিপুরার রাজ্যপালের দ্বারস্থ হয়ে ভাঙচুর নিয়ে অভিযোগ জানাবে প্রতিনিধিদল।

ত্রিপুরা পুলিশের চরম ব্যর্থতা প্রমাণিত হয়েছে মঙ্গলবার যখন বাংলার শাসকদলের ত্রিপুরার সদর দফতরকে কোনও প্রতিরক্ষা দিতে পারেনি। একই ধারা অব্য়াহত বুধবারও, যখন আইন শৃঙ্খলার অবনতি অজুহাত দিয়ে তৃণমূলের মাত্র ছয় জন প্রতিনিধিকে আগরতলা শহরে ঢুকতে দিতে ব্যর্থ হয়। পুলিশের উপস্থিতি সত্ত্বেও গাড়ি করে শহরে ঢুকতে প্রায় দুঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় তৃণমূল প্রতিনিধিদলকে। পুলিশের সেই ব্যর্থতা তুলে ধরে তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেব দাবি করেন, সবাই দেখেছেন কীভাবে শাসকদলের একজন বর্তমান বিধায়ক পুলিশের উপস্থিতিতে একটি দলের দলীয় কার্যালয়ে প্রকাশ্যে পুলিশের সামনে ভাঙচুর চালিয়েছে। আগরতলায় পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল তার সামনে ভাঙচুর হয়েছে। যে প্রতিনিধিরা এসেছেন তাঁরা কর্মীদের সঙ্গে দেখা করবেন। পুলিশের ডিজির সঙ্গে দেখা করবে। রাজ্যপালের সঙ্গেও দেখা করবে।

যেভাবে মঙ্গলবার তৃণমূল কার্যালয়ে সন্ত্রাস চালানো হয়েছে, সেই দফতরেই দাঁড়িয়ে সেই হামলা নিয়ে তৃণমূল রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ দাবি করেন, দক্ষিণী সিনেমায় হয় এরকম সন্ত্রাস। ত্রিপুরা থেকে বাংলায় গিয়ে বিজেপির নেতারা গিয়ে অবাধে ঘুরে বেড়ান। কিন্তু ত্রিপুরায় বিজেপির সময়ে আসতে গেলে সন্ত্রাস চালানো হয়। সেই সঙ্গে বিমান বন্দর থেকে বেরোনো নিয়ে যেভাবে হেনস্থা হতে হয়, সে সম্পর্কে কুণালের দাবি, গাড়ির চালককে হুমকি দিয়ে বের করে দিয়েছে। এত বড় বিমানবন্দরে প্রিপেড ট্যাক্সি নিতে দিচ্ছে না। নিজেদের শহরটাকে কোথায় নামাচ্ছেন। হেঁটে আসার চেষ্টা করি, পুলিশ আটকায়।

তবে যে অজুহাত দেখিয়ে ত্রিপুরায় তৃণমূল সদর দফতরে হামলা চালায় বিজেপির নেতারা, তার ব্যাখ্য়াও ত্রিপুরাতে সেই ভাঙা দলীয় কার্যালয়ে বসেই দেন কুণাল ঘোষ। তিনি স্পষ্ট করে দেন, যে ঘটনার কথা বিজেপি বলছে, নাগরাকাটায় বিজেপির সাংসদ, বিধায়ক বাজে ঘটনার মুখে পড়েছিলেন। খগেন মুর্মু, শঙ্কর ঘোষের উপর যা হয়েছে মুখ্য়মন্ত্রী তার নিন্দা করেছেন। দেখতে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি বিজেপিকে ভাবতে হবে, মানুষের ক্ষোভ হচ্ছে কেন? গরিব মানুষের ক্ষোভ কোথায়? এই বিজেপির নেতারা বলে বেড়িয়েছেন একশো দিনের টাকা, আবাসের টাকা আটকে দেব, দিতে দেব না। গ্রামবাংলার মানুষের টাকা আটকে দিয়েছেন, গর্ব করে সেটা বলেছেন। মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। তারপরে সেখানে গিয়েছেন, একটা ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে যাননি। ফটোশুট করতে গিয়েছেন।

আদতে যে বিজেপি বাংলার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে কোনও গুরুত্বই দিতে নারাজ, তারাই বিধায়কের উপস্থিতিতে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানোয় কটাক্ষ করতে ছাড়েননি সাংসদ সায়নী ঘোষ। সাংসদের প্রশ্ন, এটা নতুন কিছু না যে ত্রিপুরায় পা রাখলেই নতুন কিছু হবে। রাজনীতি হবে। যদি আমাদের থাকা না থাকায় বিজেপির কোনও সমস্যাই না থাকে, কোনও গুরুত্বই না থাকে, তবে মাত্র ছয় জনের প্রতিনিধিদলকে বিমান বন্দর চত্বরের বাইরে পা রাখতে দেওয়া হচ্ছে না।

আরও পড়ুন: বাধা পেরিয়ে ভাঙচুর হওয়া দফতরে তৃণমূল প্রতিনিধিদল: সাক্ষাৎ ডিজিপির সঙ্গে

বুধবার বনমালীপুরের দলীয় কার্যালয়ের বাইরে বিজেপির দুষ্কৃতীদের ফেলে দেওয়া দলীয় পতাকা হাতে করে তুলে রাখেন সাংসদ সুস্মিতা দেব, সায়নী ঘোষ, মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা, প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ ও যুব নেতা সুদীপ রাহা। দলীয় কার্যালয় থেকে ত্রিপুরার ডিজিপি অনুরাগ ধনকড়ের সঙ্গে দেখা করেন তৃণমূল প্রতিনিধিরা।

–

–

–