বয়স মাত্র ৩৭, কিন্তু কণ্ঠে বজ্রনিনাদ। গায়ে কমলা রঙের সেনা পোশাক, মাথায় লাল বুয়ের টুপি, হাতে শক্ত মুষ্টি — ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম ত্রাওরে (Ibrahim Traore)। তিনি এখন শুধু বুরকিনা ফাসোর (Burkina Faso) অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টই নন, বরং আফ্রিকার (Africa) বহু যুবকের কাছে এক ‘প্রতিবাদের পোস্টার বয়। কেউ তাকে ডাকছে ‘আফ্রিকার চে গেভারা’, কেউ বলছে ‘ফরাসি সাম্রাজ্যবাদের শেষ পেরেক’।

দক্ষিণ আফ্রিকার ছোট্ট দেশ বুরকিনা ফাসো, ১৯৬০ সালে ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হলেও প্রকৃত স্বাধীনতা পাননি সেদেশের বাসিন্দারা। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পল-হেনরি সান্দাওগো দামিবা ছিলেন ফরাসীদের হাতের পুতুল। দেশের অর্থ ও সম্পদ পাচার,ইউরেনিয়াম এবং সোনার খনিগুলির দখল বিদেশি সংস্থাগুলিকে হস্তান্তরণ করা, পরিকাঠামো থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকার থেকেও বুরকিনা ফাসোকে বঞ্চিত করছিলেন পল-হেনরি। আরও পড়ুন: ট্রাম্পের ‘ভুল’ শিক্ষানীতি: আমেরিকা ছাড়ছেন অভিজিৎ-ডাফলো

শান্ত দেশটিতে ধীরে ধীরে বিদ্রোহের সঞ্চার ঘটে, ২০১৫ সাল নাগাদ বহু ছোট সংঘর্ষে প্রাণ হারায় বহু মানুষ। ২০২২ সালে সেনা অভ্যুথানের পরে সেই বছরেই ক্ষমতায় আসেন সেনাকর্তা ইব্রাহিম ত্রাওরে। তিনি ঘোষণা করেন, দেশকে সাম্রাজ্যবাদী শাসন-শোষণ ও নির্যাতন থেকে মুক্ত করা, সামাজ্যবাদের শিকড় উপড়ে ফেলা, হতদরিদ্র মানুষদের খাবারের জোগান দেওয়া, নারীর ক্ষমতায়ন, বেকারদের চাকরি-সহ আরও বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি। বর্তমানে বুরকিনা ফাসোর অন্তর্বর্তিকালীন প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন ইব্রাহিম। ৩৭ বছর বয়সি ইব্রাহিম বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ রাষ্ট্রপ্রধান।

বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২ থেকে ২০২৫-এর মধ্যে বুরকিনা ফাসোর দারিদ্র্য কিছুটা হলেও কমেছে। বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশটিতে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও ২০২৩-এর তুলনায় ২০২৪ সালে চরম দারিদ্র্য ২ শতাংশ কমেছে। শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, রাজস্ব আয়ও বেড়েছে। ইব্রাহিম ত্রাওরে দারিদ্র্য দূর করে স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলতে বামপন্থী অর্থনীতি অনুসরণ করছেন। ২০২৩ সালে রাশিয়া-আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলনে আফ্রিকার নেতাদের ‘সাম্রাজ্যবাদীদের কথায় নাচা পুতুলের মতো আচরণ বন্ধ করার’ বার্তা দিয়েছিলেন ইব্রাহিম। রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম ইব্রাহিমের সেই ভাষণ ব্যাপক ভাবে প্রচার করেছিল। এর পরেই হইচই পড়ে যায়। ইব্রাহিমের বার্তা দেশ ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে এখন।

–

–

–

–

–

–


