ভারতের প্রথম ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি হল বেঙ্গল কেমিক্যালস (Bengal Chemicals) অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। এর প্রতিষ্ঠাতা আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়। এটি ১৯০১ সালে “বেঙ্গল কেমিক্যাল ওয়ার্কস” নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। লক্ষ্য ছিল দেশীয় প্রযুক্তিতে ওষুধ, রাসায়নিক এবং গৃহস্থালী পণ্য তৈরি করে স্বনির্ভরতা তৈরি করা। ন্যাপথলিন বল, ফিনাইল এবং অন্যান্য রাসায়নিক পণ্য এর মধ্যে অন্যতম।

১৮৯২ সালে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় কলকাতার ৯১ আপার সার্কুলার রোডে বাড়ি ভাড়া করে ৭০০ টাকা নিয়ে বেঙ্গল কেমিক্যাল ওয়ার্ক স্থাপন করেন। তিনি বাঙালি তরুণদের মধ্যে উদ্যোগী মনোভাব তৈরি করার উদ্দেশ্যে এবং ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকারের চাকরির বিকল্প হিসেবে এটি করেন। ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কংগ্রেসের ভেষজ পণ্য উৎপাদনে এই সংস্থা দায়িত্ব নেয়।

শুরুতে ১৯০৫ সালে কলকাতার মানিকতলায় একটিমাত্র কারখানা নিয়ে বেঙ্গল কেমিক্যালসের (Bengal Chemicals) পথচলা শুরু হলেও পরবর্তীতে আরও তিনটি কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯২০ সালে পানিহাটিতে, ১৯৪৯ সালে মুম্বইতে এবং ১৯৪৯ সালে কানপুরে কারখানা তিনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বেঙ্গল কেমিক্যালসের মূল দফতর ছিল কলকাতার গণেশ চন্দ্র অ্যাভিনিউতে।

আরও পড়ুন-৯৬ বছরের ‘বোরোলিন’কে থামাতে পারেনি কেউ! বিদেশেও চাহিদা মাত্রাছাড়া

১৯৪৪ সালে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্রের মৃত্যুর পর এবং ১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে বেঙ্গল কেমিক্যালস ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ১৯৭৭ সালে ১৫ ডিসেম্বর এই সংস্থাটির পরিচালনার দায়িত্ব ভারত সরকার গ্রহণ করে এবং ১৯৮০ সালে ১৫ ডিসেম্বর সংস্থাটির জাতীয়করণ করা হয়। ১৯৮১ সালে ২ মার্চ থেকে নতুন পাবলিক সেক্টর পরিচালিত সংস্থা চালু হয় এবং নামকরণ করা হয় বেঙ্গল কেমিক্যালস অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড (বিসিপিএল)। জাতীয়করণের পরেও সংস্থাটির বার্ষিক ক্ষতি অব্যাহত থাকায় ১৯৯২ সালে বিসিপিএলকে শিল্প ও আর্থিক পুনর্গঠন কমিটির তত্ত্বাবধানে রাখা হয়।

বেঙ্গল কেমিক্যালসের একটি জনপ্রিয় পণ্য হল ক্যানথারিডিন নামক একটি চুলের তেল। এছাড়াও ফুইনাইল, লাইসলের মতো জীবানুনাশক, ন্যাপথলিন বল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি মলম, অ্যান্টি-স্নেক ভেনম সিরাম ইত্যাদি হল বেঙ্গল কেমিক্যালসের কয়েকটি বহু ব্যবহৃত ও বিক্রিত পণ্য। শেষোক্ত দ্রব্যটি অর্থাৎ অ্যান্টি-স্নেক ভেনম সিরামটি হাইপার-ইমিউনাইজিং ঘোড়াদের থেকে প্রাপ্ত প্লাজমা দিয়ে তৈরি হয়। কারখানাটির একটি নিজস্ব আস্তাবল পর্যন্ত রয়েছে। কোম্পানিটি অবশ্য ধীরে ধীরে তাদের পণ্যেও বৈচিত্র এনেছে। একসময় প্রসাধনী সামগ্রী, সুগন্ধি, হাসপাতাল এবং অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ইত্যাদিও তৈরি করতে শুরু করেছিল।

বহুবছর লোকসান সহ্য করবার পরে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কোম্পানিটি লাভের মুখ দেখতে পেয়েছিল। ২০১৭ অর্থবর্ষে এই কোম্পানি প্রায় ১১১ কোটি টাকা লাভ করেছিল। ২০১৯ অর্থবর্ষে বেঙ্গল কেমিক্যালস আয় করেছিল ১১৯.৭ কোটি টাকা। অতএব বুঝতে পারা যাচ্ছে কীভাবে প্রায় ধুঁকতে থাকা একটি কোম্পানি উত্তরোত্তর তাদের লাভের অঙ্ক বাড়িয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।

_

_

_