বাংলার বুকে বাবরি মসজিদের নামে ধর্মীয় সুড়সুড়ানি কেন? মন্দির-মসজিদ বা যেকোনও ধর্মস্থান হতেই পারে, তা বলে বিতর্কিত বাবরি মসজিদ গড়া নিয়ে যে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষবাষ্প ছড়ানো হচ্ছে, তার বিরোধিতা করে তৃণমূল কংগ্রেস কঠোর সিদ্ধান্ত নিল। সম্প্রতি ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর(Humayun Kabir) মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় বাবরি মসজিদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তা বাংলার ঐক্যে আঘাত বলে চিহ্নিত করে হুমায়ুন কবীরকে(Humayun Kabir) দল থেকে সাসপেন্ড করল তৃণমূল।
বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে ফিরহাদ হাকিম জানান, তৃণমূল কংগ্রেস সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেয় না। বিজেপির উস্কানিতে ভরতপুরের বিধায়ক বাংলায় ধর্মীয় বিভাজনের চেষ্টা করছেন। তাই তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমতিক্রমে শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি হুমায়ুন কবীরকে দল থেকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নিল।

ফিরহাদ বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী। আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে থাকব, সমস্ত উৎসব এক হয়ে পালন করব, এটাই বাংলার সংস্কৃতি। এটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-নজরুল ইসলামের বাংলা, স্বামী বিবেকানন্দ-ঠাকুর রামকৃষ্ণের বাংলা। এখানে সাম্প্রদায়িকতার কোনও জায়গা নেই। যারা এখানে সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় বিভাজনের বিষবাষ্প ছড়ানোর চেষ্টা করবে, তার কঠোর প্রতিরোধ করবে তৃণমূল। এই ধর্মনিরপেক্ষতার বাংলায় অদ্ভুতভাবে দেখা গেল আমাদেরই একজন সঙ্গী, যিনি মুর্শিদাবাদের রেজিনগরে থাকেন, ভরতপুরের বিধায়ক, তিনি হঠাৎ করে বাবরি মসজিদ তৈরি করবেন! বাবরি মসজিদ কেন? বাবরি মসজিদ তো মোঘল সাম্রাজ্যের বাবর তৈরি করেছিলেন, যা বিতর্কিত। নিজের টাকায় মন্দির-মসজিদ তৈরি করুন তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু বাবরি মসজিদ কেন? এভাবে বাবরি মসজিদ, রাম মন্দির করে ধর্মান্ধতার দিকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে সমাজকে। সেই কাজটা তৃণমূল কংগ্রেস বিশ্বাস করে না। আমরা চাইনা ১৯৯২ সালের সেই কালো দিন আবার ফিরে আসুক। তিনি মসজিদ করছেন করুন, অন্য কারও নামে করতে পারতেন। বাবা-মা বা শহিদদের নামে করতে পারতেন। স্কুল-কলেজ করতে পারতেন। তা করলেন না। এভাবে বাংলা কি পিছিয়ে যাবে? আসলে এটা বিজেপির অভিসন্ধি।

সমাজকে ভাগ করা, বাংলাকে ভাগ করার চেষ্টা। যখন দেখছে, এসআইআর করে কিছু করা গেল না, তখন ডিভিশনাল পলিটিক্স খেলার চেষ্টা করছে বিজেপি। প্রত্যেকবার তৃণমূল কংগ্রেস থেকে একজনকে নিয়ে গিয়ে এই কার্ডটা খেলে। এবার ওরা হুমায়ুনকে ধরেছেন। ফিরহাদের প্রশ্ন, আপনি রেজিনগরে থাকেন, কেন বেলডাঙায় বাবরি মসজিদ? কারণ সেখানে করলে দাঙ্গা লাগাতে সুবিধা হবে। সেখানে কিছুদিন আগেই উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। নির্বাচনে বিজেপিকে সহায়তা করার জন্য তারা এই কাজটা করার চেষ্টা করছে। আমরা কঠোরভাবে এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

এরপরই শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে হুমায়ুন কবিরকে সাসপেন্ড করার কথা জানানো হয়। ফিরহাদ বলেন, আমরা তিনবার সতর্ক করেছি। তা সত্ত্বেও তিনি বিজেপির বিভাজনের রাজনীতির সঙ্গী হয়েছেন। সেই কারণেই তাঁকে সাসপেন্ডের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যাঁরা এমন সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করেন, তাঁদের সঙ্গে দল কোনও সম্পর্ক রাখবে না। ওই ব্যক্তি আগেও বিজেপিতে ছিলেন। এখন ফের বিজেপির হাত শক্ত করতে মাঠে নেমেছেন।

এদিন বিধায়ক আখরুজ্জামান ও নিয়ামত শেখ সাংবাদিক বৈঠক থেকে হুমায়ুন কবীরকে একহাত নেন। তাঁর জনপ্রিয়তা নিয়ে কটাক্ষ করেন। এর আগে একাধিকবার দলত্যাগ করে তিনি যে বিধানসভা বা লোকসভায় জিততে পারেন নি সে কথাও তুলে ধরেন। এমনকী পঞ্চায়েত ও জেলা পরিষদেও দিতে পারেননি হুমায়ুন। মাঝে শুধু কংগ্রেসের বিধায়ক ছিলেন দেড় বছর। তাঁরা স্মরণ করিয়ে দেন, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতীক এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া আমাদের কারও কোনও অস্তিত্ব নেই। আগামী দিনগুলোতে হুমায়ুন বুঝতে পারবেন, কত ধানে কত চাল।

–

–

–



