Thursday, December 11, 2025

বড়সড় পরীক্ষার সামনে নির্বাচন কমিশন, কলকাতায় নো-ম্যাপিং বেড়ে সর্বোচ্চ 

Date:

Share post:

রাজ্যে বিশেষ নিবিড় সংশোধনী (এসআইআর) পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে উদ্বেগজনক তথ্য—২০০২ সালের ভোটার তালিকার সঙ্গে বর্তমান তথ্যের মিল না-থাকা বা ‘নো-ম্যাপিং’ ভোটারের সংখ্যায় কলকাতা রয়েছে শীর্ষে। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন বিধানসভা কেন্দ্রে নো-ম্যাপিংয়ের হার শহরের অন্য যেকোনও অংশের তুলনায় অনেক বেশি।

রাসবিহারীতে নো-ম্যাপিংয়ের হার ১৩ শতাংশ, যা কলকাতায় সর্বোচ্চ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্র ভবানীপুরে এই হার ১২ শতাংশ। কলকাতা বন্দর ও বালিগঞ্জে যথাক্রমে ১১ ও ১০ শতাংশের কাছাকাছি। অন্যদিকে জোড়াসাঁকোয় ৭৩ হাজারেরও বেশি ভোটারের নাম ‘নিখোঁজ’, ‘স্থানান্তরিত’ ও ‘মৃত’ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে—যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।

জেলা স্তরে উত্তর ২৪ পরগনায় নো-ম্যাপিংয়ের হার ৮.৫ শতাংশ, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তা নেমে এসেছে ৩.২ শতাংশে। কমিশনের মতে, এত উচ্চ হারে নো-ম্যাপিং পুরনো ভোটার তালিকার ত্রুটির প্রতিফলন হলেও এর মাধ্যমে সংশোধন প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলছে। এই ভোটারদের উৎস খুঁজে বের করতে এনুমারেশন ফর্ম, ২০০২ সালের ভোটার তালিকা, আধার, জন্ম-মৃত্যু রেজিস্টার সহ একাধিক সরকারি তথ্যভান্ডারের সহায়তা নিতে হবে।

ইতিমধ্যেই সব জেলা নির্বাচন আধিকারিক (ডিইও) ও ইআরওদের বিশেষ নজরদারির নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। লক্ষ্য—কোনও যোগ্য ভোটার যাতে তালিকা থেকে বাদ না পড়েন এবং কোনও অযোগ্য ভোটার যাতে তালিকায় ঢুকে না পড়েন।

২০০২ সালের তালিকার সঙ্গে মিল না-থাকা ভোটারদের পাশাপাশি, যেসব ভোটারদের বাবা–মায়ের বয়সের পার্থক্য ১৫ বছরের বেশি—তাঁদেরও শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে এসআইআরের দ্বিতীয় পর্ব। প্রথম পর্বে সংগৃহীত অসংগতি ও অভিযোগের ভিত্তিতেই ব্যক্তিগত শুনানির তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

কমিশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে এখন পর্যন্ত ৫৭ লক্ষ ৫২ হাজার ২০৭টি এনুমারেশন ফর্ম ‘আনকালেক্টেবল’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে মৃত ২৪ লক্ষেরও বেশি ভোটার, নিখোঁজ ১১ লক্ষ ৫৭ হাজারের অধিক, আর অন্যত্র স্থানান্তরিত প্রায় ১৯ লক্ষ ৯০ হাজার। ডুপ্লিকেট ভোটারও ধরা পড়েছেন ১৩ লক্ষের বেশি। ১৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া শুনানি হবে কড়া নজরদারিতে—শুধুমাত্র জেলা শাসকের দফতরেই হিয়ারিং করা যাবে, অন্য কোনও সরকারি ভবনে নয়। পুরো প্রক্রিয়া ওয়েব কাস্টিংয়ের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার এবং ভিডিও সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

প্রশাসনিক মহলের মতে, এই শুনানি পর্বের ওপরই নির্ভর করবে খসড়া তালিকা সংশোধনের চূড়ান্ত রূপরেখা। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরিতেই এই ধাপ রাজ্যের কাছে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

আরও পড়ুন – ব্রিগেডে চিকেন প্যাটিস বিক্রির জন্য মারধর! প্রতিবাদ পরমব্রতর

_

 

_

 

_

spot_img

Related articles

পরিস্থিতির দোহাই: তাজপুর বন্দর থেকে সরে যাওয়া নিয়ে সৌগতকে বার্তা আদানির

শর্ত পূরণ না করায় রাজ্য সরকার তাজপুর গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরির প্রকল্প থেকে বাদ দিয়েছিল আদানি গোষ্ঠীকে। কিন্তু...

চিংড়িঘাটায় মেট্রো সম্প্রসারণে জট! সব পক্ষকে ফের বৈঠকে বসার নির্দেশ হাই কোর্টের

চিংড়িঘাটায় মেট্রো সম্প্রসারণের দীর্ঘস্থায়ী জট কাটাতে ফের বৈঠকে বসতে হবে রাজ্য, মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট সব দফতরকে—এমনই নির্দেশ...

এক চোখে দুর্যোধন, অন্য চোখে দুঃশাসন! কৃষ্ণনগরের সভা থেকে শাহকে তীব্র আক্রমণ মুখ্যমন্ত্রীর

নদিয়ার কৃষ্ণনগরে জনসভা থেকে ফের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে তীব্র আক্রমণ শানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, বিজেপি...

১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে নির্বাচন: আওয়ামি লীগকে ছাড়াই পড়শি দেশে ভোট!

নির্বাচন ঘোষণা করে দিল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। চলতি ডিসেম্বরেই দামামা বেজে গেল সেই নির্বাচনের। ২০২২ সালে এরকমই একটি...