Friday, December 19, 2025

বাংলাকে নিয়ে বিজেপির কুৎসা, খতিয়ান তুলে পর্দাফাঁস তৃণমূলের

Date:

Share post:

যে প্রবল বাংলাবিরোধী এবং বাংলার কুৎসাকারী, তা পদে পদে প্রমাণিত। বিজেপির দাবি আর বাস্তবচিত্রে বিস্তর ফারাক। তথ্য ও পরিসংখ্যান তুলে ধরে বিজেপির সেই মিথ্যা ‘শিল্পের শ্মশানভূমি’ গল্পের পর্দাফাঁস করল তৃণমূল কংগ্রেস। ফাঁস করে দিল বিজেপির মিথ্যাচার। মুখোশ খসে পড়ল বাংলা-বিদ্বেষী বিজেপির।

সম্প্রতি বিজেপি দাবি করে, ২০১১-১২ অর্থবর্ষে রাজ্যের মোট ঋণ ছিল ২.০৭ লক্ষ কোটি টাকা, আর আজ তা বেড়ে ৭.৭১ লক্ষ কোটি টাকা হয়েছে, অর্থাৎ বিগত ১৪ বছরে ৩০৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে ঋণ। কিন্তু বাস্তবচিত্র বলছে, মোদিজির শাসনকালে, দুই বছরে একজন ঋণগ্রহীতার গড় ঋণ ২৩ শতাংশ বেড়েছে। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে যেখানে গড় ঋণ ছিল ৩.৯ লক্ষ টাকা, সেখানে ২০২৫ সালের মার্চ মাসে তা বেড়ে হয়েছে ৪.৮ লক্ষ টাকা। নিরন্তর বৈষম্য ও তহবিল আটকে রাখা সত্ত্বেও, ২০১১ সাল থেকে বাংলা মূলধন ও সুদ মিলিয়ে ৬.৬৮ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ঋণ পরিশোধ করেছে।

এখানেই শেষ নয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে তৃণমূল জানায়, ২০২৪ সালে সর্বাধিক ঋণগ্রস্ত শীর্ষ তিনটি রাজ্য হল তামিলনাডু ৮,৩৪,৫৪৩.৫ কোটি টাকা, উত্তরপ্রদেশ ৭,৬৯,২৪৫.৩ কোটি টাকা, মহারাষ্ট্র ৭,২২,৮৮৭.৩ কোটি টাকা। এই তিনটির মধ্যে দু’টি রাজ্য, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র হল বিজেপিশাসিত। তাহলে কী প্রমাণিত হল, ঋণ বাংলার সমস্যা নয়। এটি আসলে ডবল ইঞ্জিন শাসনেরই সমস্যা।

বিজেপি দু’নম্বর দাবি করেছিল, মাথাপিছু ঋণ ২২ হাজার ৫৭০ টাকা থেকে বেড়ে ৭৬ হাজার ৭৬৬ টাকা হয়েছে, যা গড়ে প্রতি পরিবারে ৩.০৮ লক্ষ টাকার বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। (পরিবারের গড় সদস্য সংখ্যা ৪)। এক্ষেত্রে বাস্তবচিত্র বলছে, বাংলায় মাথাপিছু আয় প্রায় তিনগুণ বেড়ে, ২০১১-১২ সালে ৫১,৫৪৩ টাকা থেকে ২০২৪-২৫ সালে ১,৬৩,৪৬৭ টাকায় পৌঁছেছে।

এছাড়া ২০১৩ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ১.৭২ কোটি মানুষ দারিদ্র্য সীমার বাইরে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের অর্থনৈতিক অবরোধ সত্ত্বেও বাংলার প্রতিটি পরিবারের সমৃদ্ধি রক্ষা করা হচ্ছে। উল্টোদিকে বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলি ক্রমশ আরও গভীর বৈষম্যে তলিয়ে যাচ্ছে।

বিজেপির তৃতীয় দাবি, রাজ্য সরকার ১০০ টাকা আয় করলে, তার মধ্যে ৩৮ টাকা চলে যাচ্ছে শুধু ঋণ শোধ করতেই। যা এফআরবিএম আইনে সুপারিশ করা ২০-২৫ শতাংশ সীমার প্রায় দ্বিগুণ। কিন্তু বাস্তব ভিন্ন কথা বলছে। আইএমএফ-এর তথ্য অনুযায়ী, ভারতের সাধারণ ডেট-টু-জিডিপি অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৮১.২৯ শতাংশে। এমনকী ভারত সরকার নিজেই স্বীকার করেছে যে তাদের ডেট-টু-জিডিপি অনুপাত ৫৬ শতাংশ, যা নির্ধারিত সীমার তুলনায় অনেক বেশি। আরও পড়ুনঃ বহরমপুরে টানা তিনদিন আটকে রেখে গণধর্ষণ, পুলিশের তৎপরতায় দ্রুত গ্রেফতার ২

আর চতুর্থ দাবি, বাংলায় কোনও শিশু জন্ম নিলে, জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই সে ৭৬ হাজার ৭৬৬ টাকার ঋণের বোঝা কাঁধে নিয়ে জন্মাচ্ছে। এই দাবি খারিজ করে বাস্তবচিত্র তুলে ধরে তৃণমূল জানিয়েছে, আজ ভারতে যে কোনও নবজাতক শিশুর কাঁধে চাপে ১.৩২ লক্ষ টাকার ঋণের বোঝা, যা আসলে মোদি সরকারের বেপরোয়া ঋণগ্রহণের সরাসরি ফল। সেই ঋণ স্বাস্থ্য, শিক্ষা বা পরিবারের নিরাপত্তার জন্য খরচ হচ্ছে না; তা ব্যবহার করা হচ্ছে ধনকুবেরদের বাঁচাতে, ঘনিষ্ঠ পুঁজিপতিদের ঋণ মকুব করতে এবং কর্পোরেট তোষণকে অর্থ জোগাতে।

তৃণমূল কংগ্রেসের সাফ কথা, বাংলায় যাবতীয় বিনিয়োগ মানুষের স্বার্থে হয়। বিজেপি তার ঘনিষ্ঠ পুঁজিপতিদের স্বার্থে ভারতের ভবিষ্যৎ বন্ধক রাখছে। এখন বুঝুন কারা জনবিরোধী আর কারা জনহিতকারী।

spot_img

Related articles

স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্পে রাজ্যে আরও ২৩০ কোটি টাকা খরচ, বেশ কিছু অর্থ দেবে রাজ্য

স্বচ্ছ ভারত মিশন (Swachh Bharat Mission) প্রকল্পে রাজ্যে (State) আরও ২৩০ কোটি টাকা খরচ হতে চলেছে। পঞ্চায়েত দফতর...

ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা, কমিশনকে নিশানা ব্রাত্যর

শিক্ষকদের বিএলওর কাজে যুক্ত করে পঠন-পাঠনে এমনিই ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে নির্বাচন কমিশন। এদিকে, সামনেই মাধ্যমিক পরীক্ষা। তাই ওই...

দু-মলাটে প্রকাশ হল তৃণমূল সরকারের দেড় দশকের রিপোর্ট কার্ড ‘উন্নয়নের পাঁচালি’

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) উদ্বোধন করেছিলেন আগেই। শুক্রবার বই আকারে প্রকাশিত হল তৃণমূল সরকারের (TMC Government) দেড়...

৬০ কোটির কেলেঙ্কারির ঝামেলায় আবারও নাম জুড়লো শিল্পা শেট্টির

শিল্পা শেট্টির বাড়িতে তল্লাশি! ৬০ কোটির কেলেঙ্কারির অভিযোগে ক্ষুব্ধ অভিনেত্রী বললেন, “আমি নির্দোষ”। ৬০ কোটি টাকার আর্থিক কেলেঙ্কারির...