সুশান্ত ঘোষ, তন্ময় ভট্টাচার্য, বংশগোপাল চৌধুরীর পরে ফের নারীঘটিত কেলেঙ্কারি সিপিএমে (CPIM)। এবার নাম জোড়ালো এক তরুণতুর্কির। মুখ বাঁচাতে শুক্রবার সিপিআইএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকের শেষ দিনে অভিযুক্ত সদস্য ইন্দ্রজিৎ ঘোষকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম (Md Salim)।
সিপিএম পরিবারেরই বেলঘরিয়ার এক তরুণী অভিযোগ করেন, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর সঙ্গে সহবাস করেছেন ইন্দ্রজিৎ ঘোষ (Indrajit Ghosh)। শুধুই তরুণীই নন, তাঁর মা-বাবাও সিপিএমের সদস্য। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে ওই যুবনেতার বিরুদ্ধে একাধিক নারীঘটিত অভিযোগ মেলে। রাজ্য কমিটির ওই সদস্যের বিরুদ্ধে একাধিক তরুণী সাক্ষ্য দিয়েছেন বলে সিপিএম সূত্রে খবর।

আদতে ভাঙড়ের বাসিন্দা হলেও ইন্দ্রজিতের কর্মকাণ্ড ছিল কলকাতাতেই (Kolkata)। SFI, DYFI-র পরে তিনি CITU-র নেতা হন তিনি। চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনে সিপিএমের ‘মুখ’ ছিলেন রাজ্য কমিটির এই সদস্য। অভিযোগ, সেই চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গেও বিভিন্ন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি।

গত এপ্রিলে তামিলনাড়ুর মাদুরাই-এ সিপিএমের পার্টি কংগ্রেস চলাকালীনও এক তরুণী ইন্দ্রজিতের বিরুদ্ধে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ তোলেন। প্রকাশ্যে আনেন সোশ্যাল মিডিয়া চ্যাটের স্ক্রিনশট। তবে মূলত বেলঘরিয়ার তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতেই এই নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।

সূত্রের খবর, এদিন সাজা ঘোষণার সময়ে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইন্দ্রজিৎও। বিশদ ব্যাখ্যায় না গিয়ে সেলিম (Md Salim) শুধু ঘোষণা করেন, দলের অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটিতে (ICC) যে অভিযোগ জমা পড়েছিল, তার ভিত্তিতেই বহিষ্কারের (rustication) সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেহেতু ইন্দ্রজিৎ রাজ্য কমিটির সদস্য ছিলেন, তাই তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ দিল্লিতে সিপিএমের আইসিসির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল। তারাও বহিষ্কারের সিদ্ধান্তেই সিলমোহর দিয়েছে।

বহিষ্কারের পরে ইন্দ্রজিৎ বিশেষ কোনও কথা বলেননি বলি আলিমুদ্দিন সূত্রে খবর। শুধু কিছুটা অনুযোগের সুরে বলেন, তাঁর কথা সে ভাবে শোনা হয়নি। একবার মাত্র তাঁকে ডেকে কথা বলে আইসিসি। কিন্তু রাজ্য কমিটিতে তাঁর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিতেরাও ইন্দ্রজিতের পক্ষ নিয়ে সরব হননি।

আরও পড়ুন : বাংলাকে নিয়ে বিজেপির কুৎসা, খতিয়ান তুলে পর্দাফাঁস তৃণমূলের

ভোট বাক্স শূন্য। সামনে বিধানসভা নির্বাচন (Assembly Election)। ত্রিপুরার আগে একসময়ে ক্ষমতায় থাকা বামফ্রন্টের বড় শরিক সিপিএমকে নিয়ে কারও তেমন মাথাব্যথা নেই। কিন্তু একের পর এক মহিলাঘটিত কেলেঙ্কারিতে খবরের উঠে আসছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নাম। গত দেড় বছরে চার জন বড় নেতার বিরুদ্ধে নারীঘটিত অভিযোগে সাজা দিয়ে মুখ বাঁচানোর চেষ্টা করে সিপিএম। অন্তরঙ্গ ভিডিও ফাঁস হওয়ায় প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষকে প্রথমে জেলা সম্পাদক পদ থেকে সরানো হয়। পরে রাজ্য কমিটি থেকে সরায় আলিমুদ্দিন। উত্তর দমদমের প্রাক্তন বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্যকে ৬ মাস সাসপেন্ড করে দল। প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরীকেও মহিলাঘটিত কেলেঙ্কারির অভিযোগে বহিষ্কারের পথে হাঁটে সিপিএম। সেই তালিকায় যুক্ত হল ইন্দ্রজিতের নাম। একে জনসমর্থন তলানিতে। তার উপর মুখ বাঁচাতে একের পর এক নেতাকে ছেঁটে ফেলতে হলে শেষ পর্যন্ত কার্যালয় বাতি জ্বালানোর লোক থাকবে না- মত রাজনৈতিক মহলের।

–

–


