কী হবে বাংলাদেশের (Bangladesh) ভবিষ্যৎ? খালেদা-পুত্র তারেক রহমানই (Tarek Rahman) কি আগামী প্রধানমন্ত্রী? এখন এই জল্পনাই এশিয়ার রাজনৈতিক মহলে। বড়দিনেই বড় আশা জাগিয়ে বাংলাদেশে পা রেখেছেন জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক। হাসিনা জামানায় এক প্রকার নির্বাসনেই ছিলেন তিনি। দীর্ঘ ১৭ বছর বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেননি। এমনকী মাসখানেক আগে তাঁর মায়ের শারীরিক পরিস্থিতি অত্যন্ত সঙ্কটজনক হওয়ার পরেও দেশে ফিরতে পারবেন কি না সে বিষয় নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি তারেক রহমান। তাহলে হঠাৎ কী হল যে বড়দিনে দেশের মাটিতে পা রাখলেন খালেদা-পুত্র?

এই বিষয়টি খুঁজতে হলে কিছুটা পিছিয়ে যেতে হবে। খালেদা জিয়ার (Khaleda Zia) আমলে বনানী অফিস হাওয়া ভবন থেকে তারেক দলের কাজ পরিচালনা করতেন। অভিযোগ, সেই হাওয়া ভবন থেকেই বিভিন্ন ব্যবসায়ী, ব্যক্তির থেকে টাকা তুলে বিদেশে পাচার করতেন তারেক। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। দুর্নীতির অভিযোগে সেই সময়েই গ্রেফতার হন তারেক। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় শেখ হাসিনার আওয়ামি লীগ। সেই সময় তারেকের বিরুদ্ধে আরও মামলা হয়। এমনকী ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট ঢাকায় আওয়ামি লীগের সভায় যে গ্রেনেড হামলা হয়, তার দায়ও বর্তায় তারেকের উপর। ১৮ মাস জেলে থেকে ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মুক্তি পান তিনি। সেই বছরই ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ছেড়ে লন্ডনে পাড়ি দেন জিয়া-পুত্র। অনেকের মতে, একপ্রকার মুচলেখা দিয়েই দেশ ছেড়েছিলেন তারেক। কথা দিয়েছিলেন, আপাতত রাজনীতির সঙ্গে কোনও যোগাযোগ রাখবেন না। যদিও খালেদা জিয়া জানিয়েছিলেন, লেখাপড়া ও চিকিৎসার জন্যেই লন্ডনে পাড়ি দিয়েছেন তারেক।

দীর্ঘ ১৭ বছর বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেননি জিয়া-পুত্র। ব্রিটেনেই এত দিন স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে স্বেচ্ছানির্বাসনে ছিলেন। ২০২৪ সালের অগাস্টে হাসিনা সরকারের পতনের পরে তদারকি ইউনুস সরকার তারেককে সব মামলা থেকে মুক্তি দেয়। ফলে তাঁর দেশে ফেরার রাস্তা খুলে যায়।
বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ হয়ে ঢাকার হাসপাতালে সঙ্কটজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন BNP নেত্রী খালেদা জিয়া। এই পরিস্থিতিতে তারেকের দিকে তাকিয়ে ছিলেন বিএনপির নেতা-কর্মীরাও। কিন্তু তা সত্বেও গত নভেম্বরে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে তারেক লেখেন, “এখনই দেশে ফেরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ তাঁর জন্য অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।” হঠাৎই ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস উপলক্ষে ব্রিটেনে বিএনপির এক আলোচনাসভায় তারেক (Tarek Rahman) জানান, ২৫ ডিসেম্বর তিনি বাংলাদেশে ফিরছেন। সেইমতো বুধবার সন্ধেয় লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিমান ধরে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৩৯ মিনিটে ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছন।

প্রশ্ন হচ্ছে কীভাবে দেশে ফেরার পথ করলেন তারেক? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সঙ্গেই কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এক্ষেত্রে এদেশেরও কিছু লোকের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রাখতে পারেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সবার থেকে অনুমোদন পাওয়ার পরেই দেশে আসার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে বাংলাদেশের স্থিতিশীল এবং গণতান্ত্রিক সরকার ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইউনূসের আমলে যেভাবে সে দেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়েছে তা ভারতের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠছে ক্রমশ। আইএসআইএসের পতাকাও দেখা গিয়েছে বাংলাদেশের ভবনের মাথায়। এই পরিস্থিতিতে তারেক এসে এক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের বার্তা দিচ্ছেন। জানাচ্ছেন I have a plan। ভারতের কূটনৈতিক মহলের একাংশও মনে করছে, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী কট্টরপন্থী দল ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ অর্থাৎ ‘জামাত’-কে রুখতে আপাতত তারেকের উপর ভরসা করা ছাড়া গতি নেই। এখন সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬-এর ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন। তারেক সেখানে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে। কিন্তু সত্যিই তিনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চান কি না সেটা বোঝা যাবে ক্ষমতা পেয়ে তিনি যদি আওয়ামি লীগের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। না হলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বুলি ফাঁকা আওয়াজ রয়ে যাবে।

–

–

–

–
–


