Monday, December 29, 2025

ভূগর্ভস্থ জল নিয়ে উদ্বেগ! সমীক্ষা শুরু ঝাড়গ্রামে 

Date:

Share post:

কেন্দ্রের রিপোর্টে পশ্চিমবঙ্গের ১০টি ব্লককে ভূগর্ভস্থ জলস্তরের দিক থেকে সংকটজনক হিসেবে চিহ্নিত করার পরই নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য সরকার। জল সংরক্ষণ ও ব্যবহারের একটি সুসংহত পরকল্পনা তৈরির লক্ষ্যে জেলায় জেলায় ভূগর্ভস্থ জলের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তারই প্রথম ধাপে সংকটজনক জেলাগুলির অন্যতম ঝাড়গ্রামে ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহারের উপর বিস্তারিত সমীক্ষা চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলনের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও কড়া নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ চালু করাই এই সমীক্ষার মূল উদ্দেশ্য। ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের সারফেস ওয়াটার ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন একটি বিশেষজ্ঞ সংস্থাকে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে, যারা ঝাড়গ্রাম জেলায় ভূগর্ভস্থ জল সংক্রান্ত সমীক্ষা ও তদন্তের কাজ করবে।

এই সমীক্ষার আওতায় সেচ, শিল্প, বাণিজ্যিক ব্যবহার, গৃহস্থালি, পরিকাঠামো নির্মাণ এবং খননের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঠিক কতটা ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন করা হচ্ছে, তার বিস্তারিত হিসাব নেওয়া হবে। পাশাপাশি জেলার নির্দিষ্ট এলাকাগুলিতে নিয়মিত ভূগর্ভস্থ জলের স্তর পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং জলের নমুনা সংগ্রহ করে গুণগত পরীক্ষাও চালানো হবে। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী দিনে কলকাতা সহ রাজ্যের অন্যান্য জেলাতেও একই ধরনের সমীক্ষা করা হবে।

প্রশাসনের দাবি, এই সমীক্ষার ভিত্তিতেই জেলা স্তরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে—কোন এলাকায় জল উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া যাবে এবং কোথায় তা সীমিত বা সংশোধন করা প্রয়োজন। ফলে একক কোনও রাজ্যব্যাপী নিষেধাজ্ঞার বদলে, স্থানীয় বাস্তবতার উপর নির্ভর করেই ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া সম্ভব হবে।

ঝাড়গ্রাম জেলা মূলত কৃষিনির্ভর হওয়ায় শুকনো মরসুমে সেচের জন্য ভূগর্ভস্থ জলের উপর নির্ভরতা বাড়ে। পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান পরিকাঠামোগত চাহিদাও জলের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। প্রশাসনিক কর্তাদের মতে, ভবিষ্যতের জল সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আপডেট ও জেলা-নির্দিষ্ট তথ্য অত্যন্ত জরুরি।

এই উদ্যোগের গুরুত্ব আরও বেড়েছে চলতি বছরে সংসদে পেশ হওয়া কেন্দ্রের তথ্যের পর। জলশক্তি মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গ বর্তমানে বছরে প্রাপ্য ভূগর্ভস্থ জলের প্রায় ৪৫.৬ শতাংশ ব্যবহার করছে। যদিও রাজ্যের ১০টি ব্লককে ‘ক্রিটিক্যাল’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, এখনও কোনও ব্লককে ‘ওভার-এক্সপ্লয়টেড’ ঘোষণা করা হয়নি। তবে পরিস্থিতি যাতে আরও খারাপ না হয়, সে জন্য নিয়মিত নজরদারি, নিয়ন্ত্রণ এবং রিচার্জ ব্যবস্থার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রের মতে, ভূগর্ভস্থ জল ব্যবস্থাপনা রাজ্য সরকারের দায়িত্ব হলেও প্রযুক্তিগত সহায়তা ও আর্থিক বরাদ্দের মাধ্যমে তারা পাশে রয়েছে। গত চার বছরে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ২ লক্ষ ৩৩ হাজার জল সংরক্ষণ ও কৃত্রিম রিচার্জ প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি সেন্ট্রাল গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ড রাজ্যজুড়ে প্রায় ৪২ হাজার বৃষ্টির জল সংরক্ষণ ও কৃত্রিম রিচার্জ কাঠামো তৈরির সুপারিশ করেছে। রাজ্য প্রশাসনের মতে, ঝাড়গ্রামে শুরু হতে চলা এই সমীক্ষা ভূগর্ভস্থ জলের উপর নির্ভরশীল এলাকাগুলিতে দীর্ঘমেয়াদি জল ব্যবস্থাপনার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিশা দেখাতে পারে।

আরও পড়ুন – ডিমের দাম ঊর্ধ্বমুখী! মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম দিতে উদ্যোগী হরিণঘাটা 

_

 

_

 

_

spot_img

Related articles

দলনেত্রীর নির্দেশে ২৯৪ কেন্দ্রের কো-অর্ডিনেটরের নাম ঘোষণা তৃণমূলের

২৬ ডিসেম্বরের ভার্চুয়াল বৈঠকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন রাজ্যের সবক’টি বিধানসভা কেন্দ্রের কো-অর্ডিনেটরের নাম জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই মতোই...

সংস্কার, গতিশীলতা ও সিদ্ধান্ত: ২০২৫-এ যে পথে ভারতের অর্থনীতি

গত পাঁচ বছরে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন প্রতিকূল ঘটনাবলী ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। ২০২৫-এ...

মঙ্গলে বাঁকুড়ায় মমতা, SIR আবহে নির্দেশের অপেক্ষায় নেতা-কর্মীরা

বছর ঘুরলেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে রাজ্য জুড়ে যখন এসআইআর ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ, ঠিক সেই আবহেই মঙ্গলবার...

বিশেষ সংশোধনীতে প্রবীণ ভোটারদের স্বস্তি! শুনানিতে হাজিরার বাধ্যবাধকতা নয় 

রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনী প্রক্রিয়া চলাকালীন প্রবীণ, গুরুতর অসুস্থ ও প্রতিবন্ধী ভোটারদের শুনানিতে হাজির হতে বাধ্য...