উত্তরাখণ্ডের অঙ্কিতা ভান্ডারি হত্যা মামলা ফের নতুন করে বিতর্কের কেন্দ্রে। ২০২২ সালে ঋষিকেশের কাছে একটি খাল থেকে উদ্ধার হওয়া উনিশ বছরের তরুণীর মৃত্যুর ঘটনায় ইতিমধ্যেই তিন অভিযুক্তের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। কিন্তু মামলায় ‘ভিভিআইপি’ যোগের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই রহস্যে ঢাকা ছিল। সেই রহস্য ঘিরেই সম্প্রতি নতুন করে রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক সুরেশ রাঠোরের স্ত্রী উর্মিলা সানাওয়ারের একটি লাইভ ভিডিও এবং প্রকাশিত অডিও ক্লিপকে কেন্দ্র করে এই বিতর্ক। উর্মিলার দাবি, অঙ্কিতা ভান্ডারি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ভিভিআইপি একজন প্রভাবশালী বিজেপি নেতা, যাঁকে অডিওতে ‘গাট্টু’ নামে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, ওই ব্যক্তি হলেন বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক ও রাজ্যসভার সাংসদ দুষ্মন্ত গৌতম। অডিও ক্লিপে সুরেশ রাঠোরকে সেই নাম উচ্চারণ করতে শোনা যায় বলেও দাবি করা হয়েছে।
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই উত্তরাখণ্ডের রাজপথ থেকে সোশ্যাল মিডিয়া— সর্বত্র প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। বিরোধী দল কংগ্রেস সিবিআই তদন্তের দাবিতে সরব হয়েছে। কংগ্রেস নেতা গণেশ গোদিয়াল বলেন, “বিজেপি সরকার প্রথম থেকেই প্রভাবশালী নেতাদের আড়াল করার চেষ্টা করছে। বুলডোজার চালানো ছিল সুশাসনের বিজ্ঞাপন নয়, বরং প্রমাণ নষ্টের কৌশল।” প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াতও এই অভিযোগকে গুরুতর বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, দোষী যেই হোক না কেন, তাকে রেহাই দেওয়া উচিত নয়।
এই অভিযোগ সামনে আসতেই রাজ্যজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। বিজেপির তরফে দুষ্মন্ত গৌতম সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। একই সঙ্গে বলেন, যদি অভিযোগের প্রতিটি কথার প্রমাণ মেলে, তবে তিনি সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবন থেকে সরে যাবেন। অন্য দিকে, সুরেশ রাঠোর দাবি করেছেন যে ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি এবং তাঁর স্ত্রী দলকে বদনাম করার চেষ্টা করছেন।
রাজ্য বিজেপির অন্দরেও এই ইস্যুতে ভিন্ন সুর শোনা যাচ্ছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও সাংসদ ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত বলেছেন, অভিযোগ সত্য হলে দোষী যত প্রভাবশালীই হোন না কেন, তাঁকে রেয়াত করা উচিত নয়। অন্য দিকে, রাজ্য বিজেপি সভাপতি মহেন্দ্র ভট্ট কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, মৃত তরুণীর নাম ব্যবহার করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করা হচ্ছে। কংগ্রেস এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে বিজেপি সরকারের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছে। কংগ্রেস নেতৃত্বের অভিযোগ, প্রথম থেকেই প্রভাবশালীদের আড়াল করতে প্রমাণ নষ্ট করা হয়েছে। বিশেষ করে ঘটনার পর দ্রুত রিসর্ট ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রিসর্ট কর্মী অঙ্কিতা ভান্ডারি নিখোঁজ হন। পরে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। অভিযোগ ছিল, ‘বিশেষ পরিষেবা’ দিতে অস্বীকার করায় তাঁকে হত্যা করা হয়। ওই মামলায় রিসর্ট ম্যানেজার পুলকিত আর্য-সহ তিন জন দোষী সাব্যস্ত হন। কিন্তু ভিভিআইপি যোগের প্রশ্নটি আদালতের রায়ের পরেও অমীমাংসিত রয়ে যায়। নতুন এই অভিযোগের জেরে ফের রাজ্যের রাজপথে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। অঙ্কিতা ভান্ডারির পরিবারের তরফেও উচ্চস্তরের নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি ফের একবার সামনে এসেছে। রাজ্য রাজনীতিতে এই বিতর্ক কোন দিকে গড়ায়, সে দিকেই এখন নজর উত্তরাখণ্ডের।
আরও পড়ুন- বড়জোড়ার সভা থেকে বাঁকুড়ার শিল্প-সংস্কৃতি-ঐতিহ্যকে বিনম্র শ্রদ্ধা মুখ্যমন্ত্রীর
_
_

_

_


