ওই দুই সাংসদের কেন সাজা হবে না ?

কণাদ দাশগুপ্ত

জম্মু ও কাশ্মীরের অন্যতম রাজনৈতিক8 দল PDP-র দুই সাংসদ মীর মহম্মদ ফৈয়াজ এবং নাজির আহমেদ। এই দলের সুপ্রিমো ওই রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। এই দু’জন ভারতের আপার হাউস বা রাজ্যসভার সদস্য। দেশের সংবিধান মেনে চলার শপথ নিয়েই এই দু’জন সাংসদ হয়েছেন।

আর এই দুই সাংসদ সোমবার সংসদে পরিকল্পিতভাবে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করেছে ভারতবর্ষের সংবিধানকে। সংবিধানকে এভাবে সরাসরি অপমান করার স্পর্ধা কোথা থেকে পেলেন এই দুই সাংসদ? এরা আদৌ ভারতীয়? PDP এখনও দলগতভাবে এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করার রাস্তায় হাঁটেনি। বরং এই কাজকে বাহবা দিচ্ছে প্রকাশ্যেই।
রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নাইডু মার্শাল ডেকে এই দুই সাংসদকে সংসদ থেকে বহিষ্কার করেছেন। সঠিক কাজ করেছেন চেয়ারম্যান। কিন্তু অপরাধের গুরুত্ব যতখানি, তাতে শুধুমাত্র সংসদ থেকে সাময়িক বহিষ্কারই কি যথেষ্ট ? দেশের আইনে এ ধরনের অপরাধে যে ধরনের শাস্তির উল্লেখ আছে, সেই আইন প্রয়োগ করে এই মুহূর্তেই ওই দুই সাংসদকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কেন দেওয়া হবে না ? কেন দেশের সংবিধানের প্রধান প্রধান রক্ষাকর্তারা বা কাস্টোডিয়ানরা এখনও চুপ করে আছেন ? কেন তাঁরা নিজেদের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নের সামনে দাঁড় করাচ্ছেন ?

The Prevention of Insults to National Honour Act, 1971 স্পষ্টভাবেই বলছে, “Whoever in any public place or in any other place within public view burns, mutilates, defaces, difiles, disfigures, destroys, tramples upon or otherwise shows disrespect to or brings into contempt (whether by words, either spoken or written or by acts) the Indian National Flag or the Constitution of India or any part thereof, shall be punished with imprisonment for a term which may extend to three years, or with fine, or with both.
এই বিধি সর্বস্তরে প্রযোজ্য। এই বিধি লঙ্ঘন করলে আমার এবং দেশের রাষ্ট্রপতির কপালে একই শাস্তির খাঁড়া ঝুলবে। কিন্তু তেমন হচ্ছে কোথায় ?

ওই দুই সাংসদ সরাসরি ঠাণ্ডামাথায় সংসদের মধ্যে ছিঁড়ে টুকরো করেছে ভারতীয় সংবিধানের স্বীকৃত প্রতিলিপিকে। সেই সময় সংসদে হাজির ছিলেন প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা, দেশের স্বীকৃত প্রায় সব ক’টি রাজনৈতিক দলের সদস্যরা। সবার উপস্থিতিতেই সংবিধানকে এভাবে অপমান করার পরেও ওই দুই সাংসদের শাস্তির দাবি কেউ করছেন না কেন, তা বিস্ময়ের। দেশের শাসক বা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির কাছে সংকীর্ণ দলীয় রাজনীতি আজ এতটাই গূরুত্বপূর্ণ যে, সংবিধানকে যারা অপমান করেছে তাদের শাস্তির দাবি করা বা উদ্যোগ নেওয়াও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেন দলমত নির্বিশেষে সব দল এক হয়ে বলছে না যে নির্দিষ্ট আইনে এখনই কেন গ্রেফতার করা হোক ওই দুই সাংসদকে ? কেন দেশের তথাকথিত সিভিল সোসাইটি বলছে না, সংসদে দাঁড়িয়ে যে সাংসদরা দেশের সংবিধান ছিঁড়েছে, অপমান করেছে সংবিধানকে , এই মুহূর্তেই তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোরতম শাস্তি দিতে হবে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সোমবার রাজ্যসভায় 370 ধারা বিলোপের বিল পেশ করতেই ক্ষেপে যান দুই PDP সাংসদ মীর মহম্মদ ফৈয়াজ এবং নাজির আহমেদ। সংবিধানের প্রতিলিপি ছিঁড়ে ফেলেন তাঁরা। এরপরেই সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। রাগে নিজের কুর্তা ছিঁড়ে ফেলেন মীর মহম্মদ ফৈয়াজ।
শুরুতেই উল্লেখ করা The Prevention of Insults to National Honour Act, 1971
বলছে, কোন প্রকাশ্য স্থানে জাতীয় পতাকা বা সংবিধানকে জ্বালিয়ে দেওয়া, ছিঁড়ে ফেলা অথবা কোনরকম ভাবে অপমান করা গুরুতর এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই অপরাধে যুক্ত থাকা ব্যক্তির 3 বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। ভারতীয় সংবিধানের 51(A) ধারাতেও একথাই বলা আছে। কোনও ভারতবাসীই
রাষ্ট্রীয় প্রতীক, জাতীয় পতাকা বা ভারতের সংবিধানকে অসন্মান করতে পারেন না। মূল কথা, কোনও কিছুর বিরোধিতা করার জন্য দেশের সংবিধান বা রাষ্ট্রীয় পতাকা ইত্যাদির অপমান করা যায়না। Citizenship Act, 1955-এর Termination of citizenship-এ বলা আছে, যদি কোনও ভারতীয় নাগরিক ভারতীয় সংবিধানকে অবজ্ঞা, অপমান করেন অথবা তাঁর চালচলনে স্পষ্ট হয় যে, দেশের সংবিধানকে সম্মান জানাতে তিনি ইচ্ছুক নন, তাহলে তাঁর নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হতে পারে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের 370 ধারা বিলোপ তথা জম্মু- কাশ্মীরকে দু’ভাগে বিভক্ত করার বিলে এই দুই PDP সাংসদের আপত্তি থাকতেই পারে। এমন কোনও বাধ্যকতা নেই যে সংসদে যে যা বলবে সাংসদরা তা মানতে বাধ্য। প্রতিবাদযোগ্য হলে সাংসদরা তার প্রতিবাদ অবশ্যই করতে পারবেন। সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধিতা করারও সুযোগ আছে। কিন্তু তার অর্থ এমন হতে পারেনা সরকারের পেশ করা বিল পছন্দ হয়নি বলে PDP-সাংসদরা দেশের সংবিধানের প্রতিলিপিই ছিঁড়ে ফেলবেন। এটা হতেই পারেনা। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যতই উত্তপ্ত হোক, দেশের সংবিধানকে যারা অপমান করেছেন, যারা সংসদে দাঁড়িয়ে সংবিধান ছিঁড়েছেন, তিনি যেই হোন, তিনি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। দেশের সংবিধানের মর্যাদা রক্ষা করার দায়িত্ব নিয়ে যারা সাংবিধানিক পদে আসীন, এই পরিস্থিতিতে তাঁদের নীরব থাকা দুর্ভাগ্যজনক। একবার ভেবে দেখুন, প্রকাশ্যস্থানে সংবিধান-রক্ষাকর্তাদের চোখের সামনে কোনও কিছুর প্রতিবাদে ঠিক একইভাবে আমি বা আপনি দেশের সংবিধান বা জাতীয় পতাকা জ্বালিয়ে দিলাম বা ছিঁড়ে ফেললাম, রাষ্ট্র আমাকে বা আপনাকে কি এভাবেই ক্ষমার নজরে দেখবে ? হতেই পারে না।
“দেশদ্রোহী” তকমা লাগিয়ে দেওয়া হবে তৎক্ষনাৎ। ঠাঁই হবে হাজতে। আর দেশের সাংসদ সেই কাজ করলে শুধুই মার্শাল ডেকে সভা থেকে বহিষ্কার করাই যথেষ্ট বলে যারা মনে করছেন, প্রশ্ন উঠতেই পারে দেশের সংবিধান সম্পর্কে তাঁদের ধারনা নিয়ে।

এই মুহূর্তেই ওই মীর মহম্মদ ফৈয়াজ এবং নাজির আহমেদের নাগরিকত্ব কেড়ে সাংবিধানিক এবং দণ্ডবিধির নির্দিষ্ট ধারায় বিচার প্রক্রিয়া শুরু না হলে, তা হবে নিতান্তই দ্বিচারিতা এবং ভণ্ডামি।

Previous articleদিল্লির উড়ান নেমে পড়লো অমৃতসরে, রুদ্ধশ্বাস কারন জানালেন যাত্রী কুণাল ঘোষ
Next article‘দুশ্চিন্তা’সেলেবদের!বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন দিলে 50 লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা